/ 
প্রিন্ট করুন
নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র: পররাষ্ট্র মন্ত্রী একে. আব্দুল মোমেন বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক অত্যন্ত মধুর। কিন্তু, কিছু গোষ্ঠী তিক্ততা সৃষ্টির চেষ্টা করছে ও বাংলাদেশ নিয়ে মিথ্যাচার করছে।’
সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসে বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন, যুক্তরাষ্ট্র শাখা আয়োজিত মত বিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রী আরো বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সাথে আমাদের অত্যন্ত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। আমরা যে নীতি ও মূল্যবোধে বিশ্বাস করি, যুক্তরাষ্ট্র সেই নীতি ও মূল্যবোধে বিশ্বাস করে। বাংলাদেশ হচ্ছে সেই দেশ, যেখানে গণতন্ত্রের জন্য আমরা লড়াই সংগ্রাম করেছি। আমরা জনগণের ভোটে জয় লাভ করলেও ১৯৭০ সালে আমাদের সরকার গঠন করতে দেয়া হয়নি। বরং, আমাদের উপর গণহত্যা চালানো হয়েছিল আর তখন বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা দেন।’
তিনি বলেন, ‘আমরা স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলাম গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য। এ জন্য স্বাধীনতা যুদ্ধে আমাদের ৩০ লাখ মানুষের প্রাণ দিতে হয়েছে। পৃথিবীর কোথাও গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের জন্য এত অল্প সময়ে এত মানুষ আত্মত্যাগ করেনি। আমরা পৃথিবীর মধ্যে একমাত্র জাতি, যারা গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের জন্য এত বড় ত্যাগ স্বীকার করেছি।’
মোমেন বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্রে ও মানবাধিকারে বিশ্বাস করে। তাই, যুক্তরাষ্ট্রের সাথে আমাদের মতের, চিন্তার মিল আছে। নীতিগতভাবে আমাদের দুই দেশের মধ্যে মিল রয়েছে। তবে, তাদের কোন কোন ব্যক্তি বিশেষ হয়তো আমাদের উন্নয়ন পছন্দ করছেন না।’
তাদের ব্যাপারে সজাগ থাকতে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রতি আহবান জানান তিনি। কেউ বাংলাদেশ নিয়ে মিথ্যাচার করলে তাদের মিথ্যাচারকে চ্যালেঞ্জ করতে দলমত নির্বিশেষে প্রবাসী বাংলাদেশিদের রুখে দাঁড়ানোর আহবান জানান মন্ত্রী।
ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট সংশোধনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র বন্ধু রাষ্ট্র হিসেবে যেসব ভাল পরামর্শ দেয়, আমরা সেটা গ্রহণ করি। যুক্তরাষ্ট্র অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন প্রত্যাশা করে আর আমরাও অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কিন্তু, আমাদের দেশের কিছু লোক আছে, যারা নির্বাচন বয়কট করতে চায়, নির্বাচন ভয় পায়।’
নির্বাচন বানচাল করতে তারা সব রকমের চেষ্টা করে থাকেন বলে জানান পররাষ্ট্র মন্ত্রী।
মোমেন বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৩৫তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকলে কয়েক বছরের মধ্যে আমরা ২৬তম বড় অর্থনীতিতে পরিণত হব। আমাদের রয়েছে ১৭ কোটি মানুষ, তাই আমাদের নিজস্ব বাজারও অনেক বড়। সে জন্য আমাদের দেশের প্রতি অনেকেরই আগ্রহ বেড়েছে। কারণ, আমাদের মাথাপিছু আয় পাঁচ গুণ বেড়েছে। দারিদ্রের হার অর্ধেকের বেশি কমেছে। এসবই শেখ হাসিনার সরকারের লক্ষ্যভিত্তিক পদক্ষেপ বাস্তবায়নের কারণে সম্ভব হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা বিজয়ীর জাতি। আমাদের জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের একটি সুন্দর পররাষ্ট্র নীতি দিয়ে গেছেন। আর এই নীতি হচ্ছে ‘সবার সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথে বৈরিতা নয়।’ আমরা এই নীতিতে বিশ্বাস করি। আমরা একটা ভারসাম্যপূর্ণ পররাষ্ট্র নীতি অনুসরণ করি।’
বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন যুক্তরাষ্ট্র শাখার সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদের মিয়ার সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের নির্বাহী সভাপতি মসিউর মালেক। অন্যদের মধ্যে কবি ও সাহিত্যিক ফকির ইলিয়াস, বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের সহসভাপতি আব্দুল খালেক মিয়া, দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনের নিউইয়র্ক প্রতিনিধি লাভলু আনসার, বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন যুক্তরাষ্ট্র শাখার নেতৃবৃন্দ ও নিউইয়র্কে বাংলাদেশ কমিউনিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
