রবিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

শিরোনাম

যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধ সত্ত্বেও গাজায় ইসরায়েলের বোমা বর্ষণ

বৃহস্পতিবার, ডিসেম্বর ১৪, ২০২৩

প্রিন্ট করুন

গাজা স্ট্রিপ, ফিলিস্তিনি অঞ্চল: হামলার বিষয়ে সংযম প্রদর্শনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের আহবানে মিত্র দুই দেশের মধ্যে ক্রমবর্ধমান বিরোধ এবং হোয়াইট হাউসের উপদেষ্টার জেরুজালেম সফর কর্মসূচীর মধ্যে বৃহস্পতিবার (১৪ ডিসেম্বর) গাজায় বোমা হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। যুদ্ধ এখন তৃতীয় মাসে গড়িয়েছে। গেল ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলার পর প্রতিশোধ নিতে ইসরায়েল গাজায় বিমান ও স্থল হামলা শুরু করে।

ইসরায়েল অবরুদ্ধ গাজাকে ধ্বংসস্তুপে পরিণত করেছে। হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, ইসরায়েলের বাহিনী ১৮ হাজার ৬০০ জনেরও বেশি লোককে হত্যা করেছে। এদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। ধ্বংসাত্মক হামলায় বাড়িঘর, রাস্তা, স্কুল ও হাসপাতাল মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়েছে।

মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার (১৪ ডিসেম্বর) ভোরে ইসরায়েলের বিমান হামলায় গাজা উপত্যকায় অন্তত ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে।

ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গেল ৭ অক্টোবর থেকে পশ্চিম তীরে সহিংসতা বৃদ্ধি পেয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৪ ডিসেম্বর) জেনিন শহরে ইসরায়েলের হামলায় দুইজনের মৃত্যু নিহত হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যার সরকার ইসরায়েলকে বিলিয়ন ডলার সামরিক সহায়তা দিয়েছে। বুধবার (১৩ ডিসেম্বর) তিনি যুদ্ধের তীব্র তিরস্কার করে বলেছেন, ‘গাজায় ইসরায়েলের ‘নির্বিচারে বোমাবর্ষণ’ আন্তর্জাতিক সমর্থনকে দুর্বল করছে।’

কিন্তু, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু তার আক্রমণাত্মক আচরণকে দ্বিগুণ করে দিয়েছেন, ‘আমরা শেষ পর্যন্ত যাচ্ছি, বিজয় না হওয়া পর্যন্ত, এর চেয়ে কম কিছু নয়’।

ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রী এলি কোহেন বলেছেন, ‘হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ‘আন্তর্জাতিক সমর্থনসহ বা ছাড়াই’ চলবে।’

বৃহস্পতিবার (১৪ ডিসেম্বর) বাইডেনের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান নেতানিয়াহু ও তার যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার সাথে আলোচনার জন্য জেরুজালেমে পৌঁছানোর কথা ছিল। সুলিভান তার সফরের পূর্বে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের একটি ইভেন্টে বলেছিলেন যে, ‘তিনি যুদ্ধের অবসানের জন্য একটি সময়সূচী নিয়ে আলোচনা করবেন ও ইসরায়েলের নেতাদের ‘আজ আমরা যে ধরনের উচ্চ-তীব্রতার অভিযান দেখছি, তার থেকে ভিন্ন পর্যায়ে যাওয়ার জন্য’ আহ্বান জানাবেন।’

নেতানিয়াহু বলেছেন, ‘সংঘাত-পরবর্তী গাজাকে কীভাবে শাসিত করা হবে, তা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ‘মতবিরোধ’ রয়েছে।’

হামাসের প্রধান ইসমাইল হানিয়াহ বুধবার (১৩ ডিসেম্বর) বলেছেন, ‘গাজা বা ফিলিস্তিনি ইস্যুতে হামাস বা প্রতিরোধী দলগুলো ছাড়া যে কোন ব্যবস্থা একটি প্রলাপ।’

তিনি বলেন, ‘হামাস এমন আলোচনার জন্য প্রস্তুত যা ‘রাজনৈতিক পথের দিকে নিয়ে যেতে পারে; যা জেরুজালেমকে রাজধানী করে তাদের স্বাধীন রাষ্ট্রে ফিলিস্তিনি জনগণের অধিকার নিশ্চিত করে।’

বেসামরিক নাগরিকদের আরো ভালভাবে সুরক্ষা দিতে ইসরায়েলের উপর কূটনৈতিক চাপ বাড়ছে। এই সপ্তাহে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ যুদ্ধবিরতির জন্য একটি অ-বাধ্যতামূলক প্রস্তাবকে ব্যাপকভাবে সমর্থন করেছে।

যুক্তরাষ্ট্র বিপক্ষে ভোট দেয়ার সময় প্রস্তাবটি মিত্র অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও নিউজিল্যান্ড দ্বারা সমর্থিত ছিল। যারা একটি বিরল যৌথ বিবৃতিতে বলেছিল যে, ‘তারা ‘গাজায় বেসামরিক নাগরিকদের জন্য নিরাপদ স্থান হ্রাসে উদ্বিগ্ন।’

বুধবার (১৩ ডিসেম্বর) যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দাদের বরাত দিয়ে সিএনএন জানিয়েছে, গেল ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েল কর্তৃক ব্যবহৃত প্রায় অর্ধেক এয়ার-টু-গ্রাউন্ড গোলাবারুদ অনির্দেশিত। যা বেসামরিক নাগরিকদের জন্য আরো বড় হুমকি হতে পারে।

ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য জাতিসংঘের সংস্থার প্রধান ফিলিপ লাজারিনি বুধবার (১৩ ডিসেম্বর) বলেছেন, ‘গাজাবাসীরা ‘তাদের ইতিহাসের অন্ধকার অধ্যায়ের মুখোমুখি’।’

শীতকালীন বৃষ্টি এই অঞ্চলে আঘাত হানে, যেখানে জাতিসংঘের অনুমান গাজার ২৪ লাখ জনসংখ্যার মধ্যে ১৯ লাখ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। খাদ্য, পানীয় জল, ওষুধ ও জ্বালানীর সরবরাহ কম থাকায় অস্থায়ী তাঁবুতে বসবাস করছে।

আমীন এদওয়ান বলেছেন, ‘মধ্য গাজার আল-আকসা শহীদ হাসপাতালের মাঠে তার পরিবার হাজার হাজার লোকের সাথে ক্যাম্পে অবস্থান করেছিল।’

তিনি বলেন, ‘বৃষ্টির পানি ঢুকে গেছে। আমরা ঘুমাতে পারিনি। আমরা নাইলনের কভার খোঁজার চেষ্টা করেছি। কিন্তু, কোনটি খুঁজে পাইনি। তাই, পানি বন্ধ রাখতে আমরা পাথর ও বালির আশ্রয় নিয়েছি।’

মিশরীয় সীমান্তের কাছে রাফাহ শহরটি বাস্তুচ্যুতদের জন্য একটি বিশাল শিবিরে পরিণত হয়েছে। যেখানে কাঠ ও প্লাস্টিকের শীট ব্যবহার করে শত শত তাঁবু স্থাপন করা হয়েছে।

বিলাল আল-কাসাস নামে বাস্তুচ্যুত বাসিন্দা বলেন, ‘আমরা পাঁচ দিন বাইরে কাটিয়েছি ও এখন বৃষ্টি তাঁবুতে প্লাবিত হয়েছে।’

‘বাতাসের ঝাপটা ভঙ্গুর কাঠামোগুলোকে কাঁপিয়ে দিয়েছিল, যখন লোকেরা আরো প্লাস্টিকের চাদর দিয়ে তাদের শক্তিশালী করার চেষ্টা করেছিল।’

৪১ বছর বয়সী কাসাস বলেন, ‘আমরা কোথায় পাড়ি জমাব? আমাদের মান-মর্যাদা সবকিছুই চলে গেছে। নারীরা কোথায় স্বস্তি পাবেন? কোন বাথরুম নেই।’

মেনিনজাইটিস, জন্ডিস এবং আপার রেসপিরেটরি ট্র্যাক্ট ইনফেকশনসহ রোগের বিস্তারের ব্যাপারে জাতিসংঘ সতর্ক করেছে।

গাজার হাসপাতাল ব্যবস্থা ধ্বংসের মুখে পড়েছে। হামাস কর্তৃপক্ষ বলেছে, ‘শিশুদের জন্য টিকা ফুরিয়ে গেছে, ‘বিপর্যয়কর স্বাস্থ্য প্রতিক্রিয়া’র সতর্কতা ঘোষণা করেছে।’

হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলের বাহিনী উত্তর গাজার কামাল আদওয়ান হাসপাতালের ওয়ার্ডে গুলি চালিয়েছে।

ইসরায়েলে সেনাদের মৃত্যু সীমিত করতে ও জিম্মিদের মুক্তি নিশ্চিত করতে সেনাবাহিনী ক্রমবর্ধমান চাপের মধ্যে রয়েছে।

মঙ্গলবার (১২ ডিসেম্বর) দশ বেসামরিক নাগরিকসহ ১১৫ সেনাকে হারিয়েছে। গেল ২৭ অক্টোবর থেকে স্থল হামলা শুরু হওয়ার পর থেকে এটি সবচেয়ে মারাত্মক দিন।

গেল মাসে এক সপ্তাহব্যাপী যুদ্ধবিরতি চলাকালীন ইসরায়েলের হাতে আটক ফিলিস্তিনি বন্দীদের বিনিময়ে হামাস কয়েক ডজন জিম্মিকে মুক্তি দেয়, তবে অন্যদের মৃত পাওয়া গেছে।

সরকার জিম্মি আলোচনার দ্বিতীয় দফায় কাতারে কর্মকর্তাদের পাঠানোর প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে বলে স্থানীয় মিডিয়ায় রিপোর্ট প্রকাশের পর জিম্মিদের পরিবার বুধবার (১৩ ডিসেম্বর) বলেছে, তারা ‘প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভার সদস্যদের কাছ থেকে দ্রুত ব্যাখ্যা’ দাবি করেছে।