ওয়াশিংটন, যুক্তরাষ্ট্র: যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আর মাত্র কয়েক সপ্তাহ বাকি। এরই মধ্যে কৃষ্ণাঙ্গ ও লাতিন বংশোদ্ভূত ভোট পেতে আরো তৎপর হয়েছেন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিস। পিছিয়ে নেই রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পও। এ দিকে, দিন যতই যাচ্ছে, ততই মনে হচ্ছে এবারের ভোটের ‘এক্স ফ্যাক্টর’ হতে পারে মিশিগান ও পেনসিলভানিয়ার মুসলিম ও ইহুদি ভোট। এ নিয়ে উভয় সংকটে রয়েছেন কমলা। ইসরায়েলের পক্ষে কথা বললে আরব-মুসলিমরা নাখোশ হচ্ছেন। অন্য দিকে, ইসরায়েলের সমালোচনা ও ফিলিস্তিনের পক্ষে কথা বলতে গেলে ইহুদি ভোটাররা অসন্তুষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
আগামী ৫ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটিক দলের প্রার্থী কমলা হ্যারিস। তার সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। দুই প্রার্থীর মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চলছে। এমন পরিস্থিতিতে দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যগুলোর ভোট দুই প্রার্থীর ভাগ্য নির্ধারণে বড় ভূমিকা পালন করবে।
‘এক্স ফ্যাক্টর’ মুসলিম ও ইহুদি ভোট : যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে, প্রতিদ্বন্দ্বি দুই শিবিরে সম্ভাব্য প্রতিটি ভোট দখলের তীব্র লড়াই শুরু হয়ে গেছে। সব মাথাব্যথা সাত ‘ব্যাটলগ্রাউন্ড’ অঙ্গরাজ্য নিয়ে। এসব অঙ্গরাজ্যের ভোটারদের অধিকাংশই তাদের মন ঠিক করে ফেলেছেন, কাকে ভোট দেবেন। যারা এখনো মন ঠিক করে ওঠেননি, এমন ভোটারের সংখ্যা খুব বেশি নয়, মধ্য-অক্টোবরের হিসাব অনুসারে তা তিন থেকে সাড়ে তিন শতাংশের বেশি নয়। যত মনোযোগ এ হাতে গোনা কয়েক হাজার ভোট নিয়ে।
ভোট নিয়ে এ তীব্র লড়াই অবশ্য নতুন নয়। ২০১৬ ও ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ইলেকটোরাল কলেজ ভোটের ফলাফল নির্ধারিত হয়েছিল যথাক্রমে ৭৭ হাজার ও ৪৬ হাজার ভোটের ব্যবধানে। কোন কোন ব্যাটলগ্রাউন্ড অঙ্গরাজ্যে মাত্র কয়েক হাজার ভোট চূড়ান্ত ফলাফল নির্ধারণ করেছিল। যেমন ২০২০ সালে জো বাইডেন উইসকনসিনে মাত্র ২০ হাজার ৬৮২ ভোটে সে অঙ্গরাজ্যের দশটি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট পেয়েছিলেন। জর্জিয়ায় তার জয়ের মার্জিন বা পার্থক্য ছিল আরো কম, মাত্র ১১ হাজার ৭৭৯ ভোটে জিতেছিলেন।
উভয় সংকটে কমলা: এবারের ভোটের ‘এক্স ফ্যাক্টর’ হতে পারে মিশিগান ও পেনসিলভানিয়ার মুসলিম ও ইহুদি ভোট। এবারের দুই প্রতিদ্বন্দ্বি কমলা হ্যারিস ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্য ২৭০টি ইলেকটোরাল ভোট পাওয়ার একটি সম্ভাব্য পথ হচ্ছে এ দুই অঙ্গরাজ্য ও উইসকনসিনে কমবেশি যেমন ভোটেই হোক জয় ছিনিয়ে নেয়া।
জনমত জরিপের ওপর নির্ভর করে উইসকনসিনে কমলা খানিকটা হলেও স্বস্তিতে রয়েছেন। ফলে, এ মুহূর্তে তার সব নজর মিশিগান ও পেনসিলভানিয়ায়। ট্রাম্প ও কমলা উভয়েই এ দুই অঙ্গরাজ্যে অতিরিক্ত নজর দিচ্ছেন তাদের দুই বড় ভোটিং ব্লক মুসলিম ও ইহুদি ভোটারদের ওপর। মিশিগানে প্রায় দুই লাখ আরব ও মুসলিম ভোটার, গাজায় অব্যাহত ইসরায়েলের হামলায় বাইডেন প্রশাসনের সমর্থনে ক্ষিপ্ত হয়ে তাদের অনেকেই কমলার পক্ষে ভোট দেবেন না বলে মনে করা হচ্ছে।
মুসলিমদের কথা আলোচিত হলেও ইহুদি ভোটের কথা নিয়ে তেমন আলোচনা হয়নি। মিশিগানে প্রায় এক লাখ ২০ হাজার ইহুদি ভোটার রয়েছেন। তাদের অধিকাংশই ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সমর্থক হিসেবে তালিকাভুক্ত। গেল তিনটি নির্বাচনে পুরো দেশে ইহুদিদের প্রায় ৭০ শতাংশ ডেমোক্র্যাটদের পক্ষে ভোট দিয়েছেন।
বাইডেন ইসরায়েলের পক্ষে অবস্থান নিলেও আরব ও মুসলিম ভোটারদের সন্তুষ্ট করতে কমলা গাজায় ইসরায়েলের হামলার নিন্দা করেছেন, ফিলিস্তিনের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার সমর্থন করেছেন। বহু ইহুদি-আমেরিকানের চোখে ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের সন্ত্রাসী হামলার পর ফিলিস্তিনের পক্ষে একটি কথা বলা বিশ্বাসঘাতকতার নামান্তর। সে জন্য ইহুদিদের বিষয়ে ডেমোক্র্যাটদের এ দ্বিধা। তা সত্ত্বেও ইহুদি-আমেরিকানদের মতামতের নতুন জরিপে দেখা যায়, ৭১ শতাংশ ভোটার কমলা ও ডেমোক্র্যাটদের পক্ষে সমর্থন জানিয়েছেন। মাত্র ২৬ শতাংশ ইহুদি বলেছেন, ‘তারা ট্রাম্পকে ভোট দেবেন।’ জুইশ ডেমোক্র্যাটিক কমিটি অব আমেরিকার গৃহীত এ জরিপে প্রধানত ব্যাটলগ্রাউন্ড অঙ্গরাজ্যগুলোর ইহুদিদের মতামত নেয়া হয়েছে।
ইহুদিদের বিষয়ে অবশ্য কমলার প্রচার শিবির বহু বেশি আত্মবিশ্বাসী। কমলার স্বামী ডাগ এমহফ একজন ইহুদি, যুক্তরাষ্ট্রে ইহুদি-বিদ্বেষ ঠেকাতে তিনি একটি জনপ্রিয় রণকৌশল প্রণয়ন করেছেন। নিজের স্বামীকে ইহুদি ভোট শিকারে কমলা কাজে লাগাচ্ছেন। ব্যাটলগ্রাউন্ড অঙ্গরাজগুলোয় এমহফ প্রায় প্রতিদিন কোথাও না কোথাও বিভিন্ন ইহুদি গ্রুপের সাথে মিলিত হয়ে কমলার পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন। এতে যে কাজ হচ্ছে, সর্বশেষ জনমত জরিপ থেকেই তা অনুমান করা যায়।
কৃষ্ণাঙ্গ ও লাতিন ভোট টানতে দৌড়ঝাঁপ: সাম্প্রতিক জরিপে দেখা যায়, কমলার প্রতিদ্বন্দ্বি ট্রাম্প কৃষ্ণাঙ্গ ও লাতিন ভোটারদের সমর্থন আদায়ে ভাল করেছেন। ২০১৬ ও ২০২০ সালের নির্বাচনের ধারাবাহিকতায় এবারো এ ভোটারদের মধ্যে নিজের অবস্থান ধরে রাখতে যাচ্ছেন তিনি।
কৃষ্ণাঙ্গ ও লাতিন ভোটারদের মধ্যে বড় ব্যবধানে এগিয়ে আছেন কমলা। কিন্তু, ট্রাম্প এ ভোটারদের মধ্যেও সুবিধানজনক অবস্থান তৈরি করছেন- এমন চিত্র উঠে এসেছে জরিপে। এরপর ডেমোক্র্যাটরা সতর্ক করে বলেছেন, নভেম্বরে কৃষ্ণাঙ্গ ও লাতিন ভোটারদের কেন্দ্রে টানতে কমলাকে আরো বেশি তৎপর হতে হবে।
নিউইয়র্ক টাইমস ও সিয়েনার জরিপে দেখা যায়, কৃষ্ণাঙ্গ ও লাতিন ভোটারদের মধ্যে কমলার প্রতি ৭৮ শতাংশ সমর্থন রয়েছে। কিন্তু, সাম্প্রতিক নির্বাচনগুলোয় ডেমোক্র্যাটদের প্রতি এ সমর্থন ছিল ৯০ শতাংশ।
জর্জিয়ায় আগাম ভোট গ্রহণ শুরু: যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যে ভোটারের সংখ্যা বেড়ে রেকর্ড ছুঁয়েছে। দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্য হিসেবে বিবেচিত জর্জিয়ায় গেল মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) আগাম ভোটগ্রহণ শুরু হয়। ভোটগ্রহণের প্রথম দিনেই ২০২০ সালের নির্বাচনের তুলনায় দ্বিগুণ ভোটারের ব্যালট জমা নেয়া হয়েছে। অঙ্গরাজের কর্মকর্তারা এমনটা জানিয়েছেন।
নির্বাচন ল্যাবের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছর যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে এরই মধ্যে ৫৫ লাখ ভোটার ভোট দিয়েছেন। ২০২০ সালের এ সময় ভোট দিয়েছিলেন দুই কোটি ৭০ লাখ ভোটার। মূলত করোনা ভাইরাস মহামারির কারণে নির্বাচন কেন্দ্রগুলোয় ভিড় এড়াতেই সে বছর আগাম ভোটের সংখ্যা এত বেশি ছিল।