সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪

শিরোনাম

যুদ্ধবিরতি বিলম্বের জন্য হামাসকে দোষারোপ বাইডেনের

শুক্রবার, জুন ১৪, ২০২৪

প্রিন্ট করুন
জো বাইডেন

গাজা উপত্যকা, ফিলিস্তিনি অঞ্চল: ইসরায়েলের হেলিকপ্টার বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) রাফাতে হামলা চালিয়েছে। বাসিন্দারা বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আরেকটি যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে হামাসকে ‘সবচেয়ে বড় বাধা’ উল্লেখ করার পরপরই হামাসের যোদ্ধারা দক্ষিণ গাজান শহরের রাস্তায় দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করছে।’ সংবাদ এএফপির।

ইসরায়েলের উত্তর সীমান্তেও উত্তেজনা বেড়েই চলেছে। হামাসের মিত্র হিজবুল্লাহর সামরিক অবস্থানগুলো লক্ষ্য করে আরো আক্রমণ ও লেবাননে ইসরায়েলের হামলায় একজন বেসামরিক নাগরিকের মৃত্যুর সংবাদ পাওয়া গেছে।

ফিলিস্তিনের বেসামরিক নাগরিকদের ভাগ্য নিয়ে ব্যাপক শঙ্কা ও মে মাসের শেষের দিকে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের রায় সত্ত্বেও ইসরায়েলের বাহিনী ওই মাসেই রাফাহতে স্থল অভিযান শুরু করে।

বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) রাফাহ শহরের পশ্চিমাঞ্চলে ব্যাপক আগুন লেগেছে বলে বাসিন্দারা জানিয়েছেন।

বাসিন্দাদের একজন বলেছেন, ‘ইসরায়েলের কামান ও যুদ্ধজাহাজ ছাড়াও যুদ্ধবিমান, অ্যাপাচি (হেলিকপ্টার) ও কোয়াডকপ্টার থেকে খুব তীব্র গোলাবর্ষণ হচ্ছিল। যার সবগুলোই রাফাহ শহরের পশ্চিমে আঘাত করছিল।’

হামাস বলেছে, ‘তাদের যোদ্ধারা মিশরের সঙ্গে অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার সীমান্তের কাছে শহরের রাস্তায় ইসরায়েলের সৈন্যদের সঙ্গে যুদ্ধ করছে।’

ইতালিতে জি-৭ শীর্ষ সম্মেলনে, বাইডেন গাজা যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তির ব্যাপারে চুক্তিতে হামাসকে ‘এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় বাধা’ বলে অভিহিত করেছেন।

সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আমি একটি পরিকল্পনা তৈরি করেছি, যা জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ, জি-৭ এবং ইসরায়েলিদের দ্বারা অনুমোদিত হয়েছে এবং এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় বাধা হল হামাস এতে সই করতে অস্বীকার করেছে; যদিও তারা অনুরূপ কিছু জমা দিয়েছে।’

তিনি বলেছিলেন, ‘এটি ফলপ্রসূ হয় কি-না তা দেখার ব্যাপার।’

হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, ইসরায়েলের প্রতিশোধমূলক সামরিক অভিযানে গাজায় কমপক্ষে ৩৭ হাজার ২৩২ জন বেসামরিক নাগরিকের প্রাণ গেছে। যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।

ইসরায়েল যখন রাফাতে স্থল অভিযান শুরু করে, তখন একটি যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছানোর প্রচেষ্টা স্থগিত হয়ে যায়। কিন্তু, মে মাসের শেষের দিকে বাইডেন একটি চুক্তি সুরক্ষিত করার জন্য একটি নয়া প্রচেষ্টা শুরু করেছিলেন।

সোমবার (১০ জুন) জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ এ পরিকল্পনাকে সমর্থন করে যুক্তরাষ্ট্রের একটি খসড়া প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে এবং বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শোলৎস বলেছেন, ‘জি-৭ নেতারা ‘প্রয়োজনীয় সম্মতি দেয়ার জন্য বিশেষ করে হামাসকে আহ্বান জানিয়েছেন।’

মঙ্গলবার (১১ জুন) গভীর রাতে মধ্যস্থতাকারী কাতার ও মিশরকে উত্তর দিয়েছে হামাস। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেছেন, ‘হামাসের প্রস্তাবিত কিছু সংশোধনী ‘কাজযোগ্য ও কিছু নয়’।

তিনি এ সপ্তাহে মধ্যপ্রাচ্য সফরে ছিলেন। হামাসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ওসামা হামদান বলেছেন, ‘হামাস ‘একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতি ও গাজা থেকে ইসরায়েলের সেনাদের সম্পূর্ণ প্রত্যাহার’ চেয়েছে। এ দাবিগুলো ইসরায়েল বার বার প্রত্যাখ্যান করেছে।’

যুদ্ধ গাজায় ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের সৃষ্টি করেছে, হাসপাতালগুলো পরিষেবার বাইরে ও জাতিসংঘের দুর্ভিক্ষের সতর্কতা জারি রয়েছে।

জাতিসংঘের একটি তদন্ত বুধবার (১২ জুন) উপসংহারে পৌঁছেছে যে, যুদ্ধের সময়ে ইসরায়েল মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ করেছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, গাজায় তীব্র অপুষ্টির জন্য পাঁচ বছরের কম বয়সী আট হাজার শিশুর চিকিৎসা করা হয়েছে।

যেহেতু বিশ্বব্যাপী মুসলমানরা রোববার (১৬ জুন) থেকে ঈদুল আযহা উদযাপনের প্রস্ততি নিচ্ছেন, বাস্তুচ্যুত গাজান উম্মে থায়ের নাসির বলেন, ‘এ অনুষ্ঠানের জন্য ‘আমাদের প্রস্ততির কিছু নেই।’

উত্তর গাজার বেইত লাহিয়াতে তিনি বলেন, ‘শিশুরা তাদের পিতাকে জামাকাপড় কিনতে বলে’ কিন্তু, মৌলিক পণ্য থেকে খেলনা পর্যন্ত যে কোন কিছুর মূল্য সাধ্যের বাইরে।’

উম্মে থায়ের নাসির বলেন, ‘তাদের বাবা এগুলো কোথা থেকে কিনবেন? তিনি আট মাস ধরে বেকার ও এক তাঁবু থেকে অন্য তাঁবুতে চলে যাচ্ছেন, তাদের খাবারের যোগানোই অসম্ভব হয়ে পড়েছে।’

অন্য এক বাস্তুচ্যুত গাজান ফাদি নাসির বলেছেন, ‘সাধারণ সময়ে’ বাড়ি ও রাস্তাগুলো উৎসবের জন্য সজ্জিত করা হয়। তবে ‘আজ আমাদের আর একটি বাড়িও নেই ও সাজানোর কিছু নেই।’

তিনি আরো বলেন, ‘ঈদের কোন অনুভূতি নেই।’

গাজা যুদ্ধের পতন নিয়মিতভাবে ইসরায়েল-লেবানন সীমান্তে অনুভূত হয়, যেখানে মারাত্মক আন্তঃসীমান্ত গোলা বিনিময় বৃদ্ধি পেয়েছে।

হিজবুল্লাহ বলেছে, ‘তারা ইসরায়েলের হামলায় একজন কমান্ডার নিহত হওয়ার প্রতিশোধ নিতে রকেট ও ড্রোন দিয়ে ইসরায়েলে সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে আক্রমণ করেছে।’

ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী বলেছে, ‘বেশিরভাগ উৎক্ষেপণ বাধা দেয়া হয়েছে ও অন্যরা আগুন জ্বালিয়েছে।’

পরে, লেবাননের ন্যাশনাল নিউজ এজেন্সি জানিয়েছে, ইসরায়েলের ‘যুদ্ধবিমানগুলো দেশটির দক্ষিণে একটি বাড়ি লক্ষ্য করে হামলা চালায়’, এতে একজন বেসামরিক নাগরিক নিহত ও সাতজন আহত হয়।

ইরাকের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফুয়াদ হুসেইন বলেছেন, ‘সম্ভাব্য ‘যুদ্ধের সম্প্রসারণ শুধুমাত্র লেবাননের জন্য নয়, পুরো অঞ্চলের জন্যই একটি বিপদ।’