ডেস্ক প্রতিবেদন: রমজান সংযমের মাস, বরকতের মাস। এ মাসে রোজা রাখা আবশ্যক করেছেন আল্লাহ। তবে, সবার জন্য রমজানের রোজা রাখা ফরজ নয়। বরং, যাদের মধ্যে পাঁচটি শর্ত পাওয়া যাবে, কেবল তাদেরই রমজানের রোজা রাখতে হবে। শর্তগুলোর কথা এখানে তুলে ধরা হল-
ইসলামে বিশ্বাসী: ইসলাম ধর্মের অনুসারীদের জন্যই রমজানের রোজা ফরজ করেছে ইসলাম। সুতরাং, অমুসলিমদের জন্য রমজানের রোজা রাখা জরুরি নয়। অমুসলিম ব্যক্তি রমজানের রোজা রাখলে তা ধর্তব্য হবে না। তবে কোন অমুসলিম রমজানে ইসলাম গ্রহণ করলে এরপর থেকে তিনি রোজা রাখবেন। রমজানের বিগত দিনগুলোর জন্য তাকে কাজা করতে হবে না। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আপনি কাফেরদের বলে দিন, তারা যদি (কুফর থেকে) বিরত হয়ে যায়, তবে আগে যা কিছু ঘটে গেছে ক্ষমা করে দেয়া হবে।’ (সুরা আনফাল: ৩৮) অসংখ্য হাদিস থেকেও প্রমাণিত হয় যে, কেউ ইসলাম গ্রহণ করলে মহানবী (সা.) তাকে আগের ছুটে যাওয়া আবশ্যকীয় আমলগুলো কাজা করতে বলতেন না।
সাবালক ও মানসিকভাবে সুস্থ: ইসলামের দৃষ্টিতে সাবালক (প্রাপ্তবয়স্ক) ব্যক্তির জন্যই রোজা রাখা ফরজ। একইভাবে মানসিকভাবে সুস্থ ব্যক্তির জন্যই রোজা রাখা আবশ্যক। সুতরাং, নাবালক ও মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তির জন্য রোজা রাখা জরুরি নয়। এ দুই শ্রেণির মানুষের জন্য অন্য কোন ফরজ ইবাদত পালন করাও আবশ্যক নয়। হজরত আলি (রা.) সূত্রে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, ‘তিন ধরনের লোকের ওপর থেকে কলম (বিধানের আবশ্যকতা) উঠিয়ে নেয়া হয়েছে। ঘুমন্ত ব্যক্তি-যতক্ষণ না জাগ্রত হয়; নাবালক, যতক্ষণ না সে সাবালক হয় এবং পাগল, যতক্ষণ না সে জ্ঞানসম্পন্ন হয়।’ (আবু দাউদ: ৪৪০৩; তিরমিজি: ১৪২৩)
রোজা পালনে সক্ষম: শারীরিকভাবে রোজা পালনে সক্ষম ব্যক্তির জন্যই রোজা রাখা আবশ্যক। অসুস্থতা, বার্ধক্য বা অন্য কোন কারণে যে ব্যক্তি রোজা রাখার সক্ষমতা রাখে না, তার জন্য রোজা রাখা জরুরি নয়। কোরআনে আল্লাহ বলেছেন, ‘আর যে ব্যক্তি অসুস্থ অথবা যে ব্যক্তি সফরে আছে, তারা সেই সংখ্যা অন্য দিনগুলোতে পূরণ করবে।’ (সুরা বাকারা: ১৮৫)। রোজা রাখতে অক্ষম হওয়া দুই ধরনের হতে পারে: সাময়িক ও স্থায়ী। সাময়িক অর্থ- যে রোগ থেকে আরোগ্য লাভের আশা আছে ও পরে রোজা কাজা আদায় করে দিতে পারবে। এমন হলে পরে কাজা আদায় করে দিতে হবে। আর স্থায়ী অক্ষমতা হল- এমন রোগী বা বৃদ্ধ ব্যক্তি, যার সুস্থতা বা রোজা রাখার সক্ষমতা ফিরে পাওয়ার কোন আশা নেই। তার জন্য রোজার কাজাও আদায় করতে হবে না। বরং, প্রতিটি রোজার বিনিময়ে ফিদিয়া দেবে। আল্লাহ বলেন, ‘আর যারা রোজা পালনে অক্ষম, তারা একজন অসহায়কে ফিদিয়া (এক দিনের খাবার) দেবে।’ (সুরা বাকারা: ১৮৪)। নিজ ঘরে বা শহরে অবস্থানকারী: নিজের শহর বা ঘরে অবস্থানকারী ব্যক্তির জন্যই রোজা রাখা জরুরি। মুসাফির হয়ে দূরের কোন শহর বা দেশে গেলে তার জন্য রোজা না রাখার অনুমতি আছে। আল্লাহ বলেন, ‘…যে ব্যক্তি সফরে আছে, তারা সেই সংখ্যা অন্য দিনগুলোতে পূরণ করবে।’ (সুরা বাকারা: ১৮৫)। তবে, এ কথায় সব আলিম একমত যে, মুসাফিরের জন্য রোজা না রাখা জায়েজ। তবে উত্তম হল, তার জন্য যেটি বেশি সহজ সেটি করা। তবে, যদি রোজা পালন করলে তার স্বাস্থ্যের ক্ষতি হওয়ার প্রবল আশঙ্কা হয়, তবে তার জন্য রোজা পালন করা হারাম। আল্লাহ বলেছেন, ‘তোমরা আত্মহত্যা কর না। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের প্রতি অতি দয়াময়।’ (সুরা নিসা: ২৯)।
ঋতুস্রাব ও প্রসবকালীন স্রাব থেকে মুক্ত নারী: ঋতুস্রাব ও প্রসবকালীন স্রাব নামাজ-রোজার প্রতিবন্ধক। তাই, এ দুই সময়ে নামাজ-রোজা আদায় করা যাবে না। আদায় করলেও তা আদায় হবে না। পরে রোজা কাজা করে দিতে হবে, তবে নামাজ কাজা করতে হবে না। (আশ-শারহুল মুমতি: ৬ / ৩৩০)। মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘একজন নারীর ঋতুস্রাব হলে সে কি নামাজ ও রোজা ত্যাগ করে না?’ (বুখারি: ২৯৮)।