শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

শিরোনাম

রাজশাহীর তানোরে কৃষি প্রণোদনা বিতরণে নানা অনিয়ম

মঙ্গলবার, মার্চ ২৮, ২০২৩

প্রিন্ট করুন

আলিফ হোসেন, তানোর, রাজশাহী: রাজশাহী জেলার তানোর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল্লাহ আহম্মেদ ও উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা এমদাদুল হকের বিরুদ্ধে কৃষি প্রণোদনার সার-বীজ বিতরণে অনিয়মের বিস্তর অভিযোগ উঠেছে। সোমবার (২০ মার্চ) কৃষি প্রণোদনা বিতরণ অনুষ্ঠানে সাংসদ ওমর ফারুক চৌধুরীর কাছে তাদের বিরুদ্ধে কৃষকেরা মৌখিক অভিযোগ করেন। ভুয়া কৃষক ও কৃষকের সই জাল করে তারা প্রণোদনার সার-বীজ হাতিয়ে নিয়েছেন বলেও অভিযোগ করা হয়েছে।

জানা গেছে, চলতি ২০২২-২৩ অর্থ বছরে আউশ উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে (আউশ প্রণোদনা) বিনামূল্যে সার ও বীজ বিতরণ করা হয়েছে। সোমবার (২০ মার্চ) উপজেলার প্রায় চার হাজার ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষককে দশ কেজি ডিএপি, দশ কেজি পটাশ ও পাঁচ কেজি করে উচ্চ ফলনশীল ধানের বীজ দেয়া হয়েছে। কিন্তু তালিকা প্রণয়নে অনিয়মের কারণে অবস্থা সম্পন্ন ও (ভুয়া) কৃষক প্রণোদনা পেলেও প্রকৃত কৃষকেরা বঞ্চিত হয়েছে। ফের একই পরিবারের একাধিক সদস্য প্রণোদনার কৃষি উপকরণ পেয়েছে। কিছু কৃষি কর্মকর্তা আর্থিক সুবিধার বিনিময়ে প্রকৃত কৃষককে বঞ্চিত করে (ভুয়া) কৃষকের তালিকা করেছেন বলে আলোচনা রয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এ দিন অধিকাংশ (ভুয়া) কৃষক প্রণোদনার উপকরণ পেয়ে বাজারের সার ব্যবসায়ীর দোকানে বিক্রি করে দিয়েছেন। এতে সরকার এ উদ্যোগ অঙ্কুরেই বিনষ্ট হতে চলেছে।

কৃষকদের অভিযোগ কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল্লাহ আহম্মেদের দায়িত্ব অবহেলার কারণে সরকারের দেয়া সহায়তা থেকে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকেরা বঞ্চিত হচ্ছে। তিনি এখানে দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে নানা অনিয়ম-দুর্নীতি ডালপালা মেলেছে। এ দিকে, কৃষি কর্মকর্তার কাছে প্রণোদনার কৃষকের তালিকা চাইলে তিনি সাংবাদিকের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করে তালিকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন। তবে, এসব কৃষকের নামের তালিকা যাচাই-বাছাই করলেই তালিকা প্রণয়নে অনিয়মের সত্যতা পাওয়া যাবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মাঠপর্যায়ের এক কর্মকর্তা বলেন, এর আগে উপজেলায় গ্রীষ্মকালীন পেয়াঁজ চাষের জন্য ২০২১-২২ ও ২০২২-২৩ অর্থ বছরে দুই ধাপে মোট ১৫০ জন কৃষককে সাত লাখ ৮৭ হাজার ৩৫০ টাকা প্রণোদনা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে কষক প্রতি নগদ দুই হাজার ৮০০ টাকা করে চার লাখ ২০ হাজার টাকা এবং কৃষক প্রতি উপকরণ দুই হাজার ৪৪৯ টাকা করে মোট তিন লাখ ৬৭ হাজার ৩৫০ টাকা। কিন্তু সেখানেও কৃষি কর্মকর্তা নানা অনিয়ম করেছেন। এসব নিয়ে গণ মাধ্যমে একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে।

উপকারভোগী একাধিক কৃষকের অভিযোগ, প্রণোদনার তালিকায় কৃষক নয়- এমন ব্যক্তিসহ স্বজনপ্রীতি এবং অল্প কিছু কৃষককে নামে মাত্র প্রণোদনা দেয়া হয়েছিল।

তারা বলেন, ‘গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের প্রণোদনার প্রকল্পে যেখানে কৃষক প্রতি বরাদ্দ ছিল পাঁচ হাজার ২৪৯ টাকা। বরাদ্দের টাকা কৃষকদের বিকাশের মাধ্যমে পাঠানো হয়। কিন্তু প্রতিটি কৃষককে বিকাশে দুই হাজার ৮০০ টাকা করে পাঠানোর কথা থাকলেও তালিকার অনেক কৃষক সে টাকা পায়নি। আর তালিকায় নেই প্রকৃত কৃষক।’

কৃষকরা বলছেন, ‘বরাদ্দের বাকী দুই হাজার ৪৪৯ টাকার মধ্যে বালাইনাশক বাবদ দুই হাজার ১০০ টাকা, নায়লন সুতলি বাবদ ১৫০ টাকা, অন্যান্য খরচ বাবদ ১৪৪ টাকার ভাউচার দেয়া করা হয়। প্রকৃতপক্ষে কৃষককে দেয়া হয়, ৫০০ টাকার পলিথিন, ৮০ টাকার বালাইনাশক (৫০ গ্রাম অটোষ্টিন), ৪৫ টাকার সুতলি। প্রতিটি কৃষক পায় ৬২৫ টাকার মালামাল।’

বাকী টাকা আত্মসাৎ করেছেন সাইফুল্লাহ আহম্মেদ; যার পরিমাণ দুই লাখ ৭৩ হাজার ৫০০ টাকা। কৃষকেরা এমন মনে করছেন।

এ দিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কীটনাশকের এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘কৃষি প্রযুক্তি মেলা আয়োজনের জন্য সরকারিভাবে দুই লাখ টাকা বরাদ্দ ছিল। কিন্তু, তারপরেও কীটনাশক ব্যবসায়ীদের কাছে থেকে আনুঃপাতিক হারে চাঁদা আদায় করা হয়। অথচ তারা দায়সারা আয়োজন করে। অতিথিদের নাস্তাও ছিল নিম্ন মানের; যা অত্যন্ত দুঃখজনক। এমনকি উপজেলার দায়িত্বশীল রাজনৈতিক নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।’

এছাড়াও, অফিস সময় মেনে অফিস না করা ও বিভিন্ন ফসলের প্রদর্শনীতে নানা অনিয়ম নিয়মে পরিণত হয়েছে বলেও জনশ্রুতি রয়েছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা ভাইস-চেয়ারম্যান আবু বাক্কার সিদ্দিক বলেন, ‘আমি জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। অথচ কৃষি প্রযুক্তি মেলায়
আমাকে আমন্ত্রন জানানো হয়নি। এটা শুধু আমাকে নয়, যারা আমাকে ভোট দিয়েছেন তাদের সকলকে অবজ্ঞার সামিল।’

প্রশ্ন করা হলে সাইফুল্লাহ আহম্মেদ এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘চাহিদার তুলনায় বরাদ্দ কম। কেউ সুবিধা না পেলেই নানা অভিযোগ করেন।