সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪

শিরোনাম

রোহিঙ্গা পুনর্বাসন কর্মসূচি ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রের

বৃহস্পতিবার, ডিসেম্বর ১৫, ২০২২

প্রিন্ট করুন

ঢাকা: যুক্তরাষ্ট্র আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেছে যে, তারা বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের জন্য তৃতীয় দেশের পুনর্বাসন উদ্যোগ নিয়েছে ও গত সপ্তাহে ঢাকার অনুরোধের প্রতীকী সাড়া হিসেবে তাদের মধ্যে ২৪ জনকে নিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের কার্যালয়ের বরাত দিয়ে মার্কিন দূতাবাস থেকে বিতরণকৃত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ সরকার ও জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনারের (ইউএনএইচসিআর) সহযোগিতায় ঝুঁকিপূর্ণ রোহিঙ্গাদের জন্য একটি পুনর্বাসন কর্মসূচি গ্রহনের ঘোষণা দিতে পেরে যুক্তরাষ্ট্র আনন্দিত।’

মিডিয়া নোটে বলা হয়েছে, ‘যুক্তরাষ্ট্র ইউএনএইচসিআরের দেয়া পুনর্বাসন দিক নির্দেশনা বিবেচনা করবে।’ এতে বলা হয়, ‘এ উদ্যোগটি বৈশ্বিক মার্কিন শরণার্থী গ্রহণ কর্মসূচিরই অংশ হবে। এটি হবে রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকটের ব্যাপারে ব্যাপকভিত্তিক সাড়ার অন্যতম পদক্ষেপ, যার মূল লক্ষ্য হচ্ছে রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায়, নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ ও টেকসই প্রত্যাবাসনের জন্য প্রস্তুত করা।’ নোটে বলা হয়েছে, ‘আমরা শরণার্থীদের একটি উদার আশ্রয়দাতা দেশ হিসাবে এবং এ গুরুত্বপূর্ণ পুনর্বাসন উদ্যোগে সমর্থনের জন্য বাংলাদেশ সরকারকে ধন্যবাদ জানাই।’

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র বিভাগ বলেছে, ‘যুক্তরাষ্ট্র রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অপরাধীদের জবাবদিহির আওতায় আনার প্রচেষ্টাকে সমর্থন করছে এবং এ নৃশংসতার শিকার ব্যক্তিদের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতেও সমর্থন দিচ্ছে।’

নোটে আরো বলা হয়েছে, ‘মায়ানমারের সেনাবাহিনীর হাতে গণহত্যা ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের শিকার হওয়া বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের দীঘস্থায়ী সমর্থনের জন্য যুক্তরাষ্ট্র গর্বিত। আমরা বার্মা থেকে বাংলাদেশে এবং এ অঞ্চলে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থী, বার্মায় চলমান সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্ত ও শরণার্থীদের আশ্রয় দেয়ায় ক্ষতিগ্রস্থ সম্প্রদায়ের জন্য ১৯০ কোটি ডলারেরও বেশি মানবিক সহায়তা করেছি। তাৎক্ষণিক মৌলিক চাহিদাগুলোকে সমর্থন করার পাশাপাশি, নোটে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ইউআইএস মানবিক সহায়তা শিক্ষা ও জীবিকার সুযোগের উন্নতির মাধ্যমে রোহিঙ্গা ও ক্ষতিগ্রস্থ স্থানীয় সম্প্রদায়ের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা ও মর্যাদাকে শক্তিশালী করে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন এর আগে মার্কিন পুনর্বাসন প্রচেষ্টাকে ‘সমুদ্রে এক ফোটা’ হিসাবে তুলনা করেন। কারণ, যুক্তরাষ্ট্র ঢাকাকে জানিয়েছিল যে, এটি প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে কিছু রোহিঙ্গা নেবে ও তাদের মধ্যে মাত্র ৬২ জনকে প্রথম ব্যাচের জন্য বাছাই করবে। মোমেন তখন যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গার জন্য বাংলাদেশের বোঝা ভাগ করে নিতে ব্রিটেন ও জাপানকেও আহবান জানিয়েছিলেন।

পররাষ্ট্র মন্ত্রী সংবাদ কর্মীদের বলেছেন যে, তিনি পরামর্শ দিয়েছেন যে, এ দেশগুলোর প্রত্যেকটি ২০১৭ সালে সামরিক-সমর্থিত জাতিগত দমন-পীড়নের মধ্যে মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যে তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতদের মধ্যে থেকে অন্তত এক লাখকে নিতে পারে। বারবার পীড়াপীড়ি করা সত্বেও মায়ানমার এখন পর্যন্ত তাদের আশ্বাস অমান্য করে একজন রোহিঙ্গাকেও ফেরত নেয় নি।’

২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে বাংলাদেশ কক্সবাজার জেলায় ১২ লাখেরও বেশি জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে ও তাদের বেশিরভাগই মায়ানমারের সামরিক অভিযানের পরে সেখানে পৌঁছেছে, একে জাতিসংঘ ‘জাতিগত নির্মূলের জ্বলজ্যান্ত উদাহরণ’ বলে অভিহিত করেছে ও অন্যান্য মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো ‘গণহত্যা’ হিসাবে অবিহিত করেছে। যখন মায়ানমারে প্রত্যাবাসনের চেষ্টা বার বার ব্যর্থ হয়, তখন থেকে বাংলাদেশ সরকার উন্নত দেশগুলোর প্রতি আহবান জানিয়ে আসছে, তারা যেন বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের একটি অংশকে তৃতীয় দেশের পুনর্বাসন হিসেবে নেয়।