ঢাকা: রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম জাতীয় কমিটির চেয়ারম্যান মনোনীত হয়েছেন নির্বাচন কমিশনের সাবেক সচিব (ভারপ্রাপ্ত) ড. মোহাম্মদ জকরিয়া ও মহাসচিব মনোনীত হয়েছেন কক্সবাজার জেলার উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী। কার্যকরী সভাপতি পদে মুহাম্মদ আতা উল্লাহ খান, সহসভাপতি পদে সাবেক অতিরিক্ত সচিব নজির আহমেদ ও পুলিশের সাবেক ডিআইজি মো. আনোয়ার হোসেন, যুগ্ম-মহাসচিব পদে ব্যাংকার ছৈয়দ আলমকে মনোনীত করা হয়।
বৃহস্পতিবার (১ মে) বিকালে সংগঠনের পল্টনস্থ কার্যালয়ে সংগঠনের সভাপতি মুহাম্মদ আতা উল্লাহ খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
সভায় ভার্চুয়ালী অংশ নেন নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও রাষ্ট্রচিন্তক কর্ণেল (অব.) আশরাফ আল দীন, পরিবেশবিদ মোহাম্মদ ইউনুস সহাসান চৌধুরী, সাংবাদিক নূর মোহাম্মদ সিকদার, রফিকুল ইসলাম ও ফরিদুল আলম শাহীন, নারীনেত্রী রেহেনা সালাম, কবি নাসরিন ইসলাম।
সভায় মোহাম্মদ জকরিয়া বলেন, ‘১ লক্ষ ৮০ হাজার রোহিঙ্গার শিগগিরই প্রত্যাবাসন শুরু হবে বলে ঘোষণা দেওয়ার এক সপ্তাহ না পেরুতেই মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার নতুন রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকছে। ইউএনএইচসিআর গত সপ্তাহে শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) কার্যালয়কে চিঠি দিয়ে নতুন আসা রোহিঙ্গাদের জন্য আবাসনের ব্যবস্থা করতে অনুরোধ জানিয়েছে। জাতিসংঘের পক্ষ হতে অনুরোধ করা হয়েছে আরো লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশ আশ্রয় দেওয়ার জন্য। এটা খুব উদ্বেগজনক।’
তিনি আরো বলেন, ‘রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন একটা আন্তর্জাতিক বিষয়। সেই হিসেবে আমরা চাই দ্রুত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন হোক। রোহিঙ্গারা যাতে সেখানে গিয়ে তাদের পৈত্রিক ভিটা ও বসবাসের জায়গা ও অধিকার ফিরে পায়, কৃষি জমি যাতে ফিরে পায়, অবাদে যাতে তারা নাগরিক সুবিধা ফিরে পায়- সে ব্যবস্থা নিতে হবে। যেহেতু প্রধান উপদেষ্টা ও জাতিসংঘের মহাসচিব আমাদেরকে সুবার্তা দিয়েছেন, চীন সরকার ও জাতিসংঘের মাধ্যমে এইটা হওয়া ভালো। কিন্তু এটা কতটুকু হবে, আমাদের মধ্যে এখনো ধোঁয়াশা রয়ে গেছে।’
গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘সরকার যদি হঠাৎ করে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে, মানবিক করিডোর’ দেওয়ার, তবে এই সিদ্ধান্ত আত্মঘাতী হতে পারে। এটা দেশবাসী ও উখিয়া-টেকনাফের জনগন কখনো মেনে নিবে না। সরকার এত বড় আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে স্থানীয় প্রতিনিধি ও রাজনীতিবিদের সাথে পরামর্শ করতে হবে। আমরা এমনিতেই রোহিঙ্গাদের নিয়ে নান সমস্যায় জর্জরিত, নতুন করে কোনো সমস্যায় পড়তে চাই না। সীমান্তে মাদক চোরাচালান, গরু চালান, রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ- এসব বিষয়ে সরকারকে আরও কঠোর হতে হবে। বিজিবি যদি কঠোর হয়, তাহলে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ কখনো সম্ভব হবে না।’
মুহাম্মদ আতা উল্লাহ খান বলেন, ‘মিয়ানমার থেকে কক্সবাজারের বিভিন্ন ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মধ্যে বেড়ে ওঠা সন্ত্রাসী চক্রের তৎপরতা দিন দিন বেড়েই চলেছে। বাংলাদেশের ওপর পশ্চিমা বিশ্বের চাপানো বিষফোড়ার নাম ‘রোহিঙ্গা’। জাতিসংঘ ও বিশ্বমোড়লদের অনুরোধের ঢেঁকি গিলে ১৫ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিতে বাধ্য হয়েছিল বাংলাদেশ। গত সাত বছরে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া প্রতিবেশী দেশের এ ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর সদস্যরা আশ্রয়দাতাদের প্রতি শুধু কৃতঘ্নতার পরিচয় দিয়েই চলছে। তারা বাংলাদেশে মাদক আগ্রাসনের বাহকের ভূমিকা পালন করছে। কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সক্রিয় একাধিক সশস্ত্র গ্রুপ ভয়ংকর হয়ে উঠছে। তুচ্ছ ঘটনায় একপক্ষ অন্যপক্ষকে খুন করতে দ্বিধা করে না। ঠিক কবে রোহিঙ্গারা ফিরে যাবে বা আদৌ তারা ফিরতে পারবে কি না, তা নিয়ে শঙ্কা জোরদার হচ্ছে।’
সভায় জানানো হয়, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন আন্দোলন আরো গতিশীল করার লক্ষ্যে দেশ বরেণ্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে একটি শক্তিশালী উপদেষ্টা পরিষদ ও যোগ্য নেতৃত্বের সমন্বয়ে ৫১ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হবে। সেই সাথে কক্সবাজার জেলার উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলা, বান্দরবান ও চট্টগ্রাম মহানগর কমিটি পুনর্গঠন করা হবে। ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গা ঢলের ৮ বছর উপলক্ষে খ্যাতিমান গবেষক, রাষ্ট্র চিন্তক, নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও বিশিষ্টজনদের লেখা ও বাণী নিয়ে একটি স্মরণিকা প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।