বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪

শিরোনাম

রোহিঙ্গা সংকট/অপরাধীদের জবাবদিহির আওতায় আনতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ যুক্তরাষ্ট্র

শনিবার, আগস্ট ২৬, ২০২৩

প্রিন্ট করুন

ঢাকা: বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের বর্তমান পরিস্থিতিতে মায়ানমারে ফিরে যাওয়া নিরাপদ নয় বলে মনে করছে যুক্তরাষ্ট্র। মায়ানমারে পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে তারা। শুক্রবার (২৫ আগস্ট) ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের বিবৃতিতে এসব কথা বলা হয়েছে। ২০১৭ সালে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর মায়ানমার সেনাবাহিনীর সহিংসতা, ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের ছয় বছর পূর্তি উপলক্ষে দূতাবাস এই বিবৃতি দেয়।

এতে বাংলাদেশের প্রশংসা করে যুক্তরাষ্ট্র দাবি করেছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরে যাওয়া অনিরাপদ। তাই, আমরা আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপায়ে পুনর্বাসনের মাধ্যমে দায়িত্ব ভাগ করে নিয়ে রোহিঙ্গাদের দুর্দশার সর্বাঙ্গীন সমাধানে অবদান রাখছি। আন্তর্জাতিক পুনর্বাসনপ্রক্রিয়ায় অবদান রাখা অন্য দেশগুলোর উদারতাকে আমরা সাধুবাদ জানাই। আশা করি, পুনর্বাসন দেয়া দেশগুলোর বাইরেও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই গুরুত্বপূর্ণ প্রচেষ্টায় যোগ দেবে। ২০০৯ সাল থেকে বাংলাদেশসহ এই অঞ্চল থেকে প্রায় ১৩ হাজার রোহিঙ্গাকে স্বাগত জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, ‘বিশ্বজুড়ে অন্যান্য সংকট সীমিত সম্পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। এ কারণে রোহিঙ্গারা তাদের আশ্রয়দানকারী জনগোষ্ঠী ও নিজ পরিবারে কীভাবে অর্থনৈতিক অবদান রাখতে পারে, তা চিহ্নিত করার গুরুত্ব বাড়ছে। এর মাঝে রয়েছে আয়-উৎপাদনমূলক কর্মকাণ্ড এবং আনুষ্ঠানিক শিক্ষা অর্জনের সুযোগ, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং তাদের নিজেদের ভবিষ্যতে আরো বড় অবদান রাখার লক্ষ্যে রোহিঙ্গা সামাজিক সংস্থাগুলোতে তাদের অন্তর্ভুক্তির ব্যবস্থা করা। আমরা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য টেকসই সমাধান নিশ্চিত করতে সর্বোত্তম চর্চা, ধ্যান-ধারণা ও সংস্থান বিনিময়ে উন্মুখ।’

যেহেতু এই সংকট সপ্তম বছরে পদার্পণ করছে, পুরো অঞ্চলে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দুর্ভোগ কমাতে বা শেষ করতে সম্ভাব্য সব বিকল্প খুঁজতে আমাদের অবিচল থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করে যুক্তরাষ্ট্র।

রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যার জেরে সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা নিজ দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছিল উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘তাদের প্রতি সহানুভূতি ও মানবতার হাত বাড়িয়েছিল বাংলাদেশের মানুষ। বাংলাদেশ প্রায় দশ লাখ রোহিঙ্গার প্রতি আতিথেয়তা অব্যাহত রেখেছে। আমরা এই উদারতার প্রশংসা করি। ২০১৭ সাল থেকে এই অঞ্চলজুড়ে উদ্ভূত মানবিক সংকটের প্রতিক্রিয়ায় দুই দশমিক এক বিলিয়ন ডলারের বেশি অবদান রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র। এর ভেতর রোহিঙ্গা শরণার্থী ও তাদের আশ্রয়দাতা স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জন্য এক দশমিক সাত বিলিয়ন ডলারের বেশি সহায়তা পেয়েছে বাংলাদেশ। আমাদের এই সমর্থন অবিচল রয়েছে।’

বাংলাদেশ ও এই অঞ্চলের অন্যান্য দেশে আশ্রয় খুঁজে ফেরা রোহিঙ্গারা দীর্ঘ কাল ধরে ভুগছে উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘মর্যাদার সঙ্গে নিরাপদে বাড়ি ফিরে যাওয়া, সপরিবার শান্তিতে বসবাস করা এবং অর্থ ও উদ্দেশ্যপূর্ণ জীবনযাপনের সুযোগ পাওয়া তাদের অধিকার। সে লক্ষ্যে নিষেধাজ্ঞা জারি, আন্তর্জাতিক চাপ প্রয়োগ এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক আদালতের মাধ্যমে এ সংকটের সমাধান বের করতে, ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের ন্যায়বিচারের ব্যবস্থা করতে ও নৃশংসতার সঙ্গে জড়িত অপরাধীদের জবাবদিহির আওতায় আনতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ যুক্তরাষ্ট্র।’

মায়ানমারের অবস্থার উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বিশ্বের অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ ও প্রান্তিক এই জনগোষ্ঠীর প্রতি মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানাই। আমাদের অবশ্যই বাংলাদেশ সরকার ও রোহিঙ্গাদের আশ্রয়দানকারী বাংলাদেশি জনগোষ্ঠীর প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখতে হবে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।