সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪

শিরোনাম

লাইফস্টাইল/বাসায় রান্নার কাজে নিরাপদে গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহারের উপায়

মঙ্গলবার, এপ্রিল ১৬, ২০২৪

প্রিন্ট করুন

লাইফস্টাইল প্রতিবেদক: বিভিন্ন ধরনের দুর্ঘটনার পরেও লিকুইড পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) সিলিন্ডারগুলোই বর্তমানে গ্যাস যোগানের গুরুত্বপূর্ণ উৎস। সঠিক ব্যবহারের অভাবে জীবনের জন্য এ প্রয়োজনীয় বস্তুটিই ভয়াবহ মৃত্যুর কারণ হয়ে দাড়াচ্ছে। ফলে গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার মানেই যেন ঘরের ভেতর বিপজ্জনক বিস্ফোরক নিয়ে দিন যাপন। কিন্তু, কিছু নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নিলে এ বাধ্য-বাধকতার সাথে মানিয়ে নেয়া সম্ভব হতে পারে। চলুন, দুর্ঘটনা এড়িয়ে বাড়িতে এলপিজি সিলিন্ডার ব্যবহারের নিরাপত্তামূলক কিছু পদক্ষেপ জেনে নেয়া যাক।

ঘরে এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহারে দশটি প্রয়োজনীয় সতর্কতা

অনুমোদিত বিক্রেতা: এলপিজি সিলিন্ডারের সুষ্ঠ ব্যবহারের প্রথম শর্ত হচ্ছে সেটি কেনার জন্য সঠিক বিক্রেতাকে বাছাই করা। কেননা, শত যত্ন করলেও ত্রুটিপূর্ণ পণ্যে ভাল সেবা পাওয়া যায় না। সেই সাথে বহু হয়রানিরও শিকার হতে হয়, যা চূড়ান্ত অবস্থায় বিপদের কারণও হতে পারে। তাই, সর্ব প্রথম কাজ হচ্ছে জাতীয়ভাবে স্বীকৃত একটি প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান খুঁজে বের করা। তারপর তাদের সূত্র ধরে খুঁজে বের করতে হবে যে, নির্দিষ্ট এলাকায় তাদের অনুমোদিত বিক্রেতা আছে কি না। এ ক্ষেত্রে তাদের বিক্রি পরবর্তী সেবা ও গ্যাস রিফিল সেবা সম্পর্কে ভালভাবে যাচাই করতে হবে। একজন অনুমোদিত বিক্রেতা বিক্রির পাশাপাশি দক্ষ কর্মীর মাধ্যমে সিলিন্ডার স্থাপন ও রক্ষণাবেক্ষণের সেবা দিয়ে থাকে। নিরীক্ষণ সফলভাবে সম্পন্নের পর সিলিন্ডার কেনার মুহূর্তে প্রধান দুইটি ব্যাপার দেখে নিতে হবে। সিলিন্ডারে সেই প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের সিল রয়েছে কি না ও সিলিন্ডারটির সেফটি ক্যাপ সুরক্ষিতভাবে লাগানো রয়েছে কি না।

মেয়াদ থাকা গ্যাস সিলিন্ডার: একজন অনুমোদিত সিলিন্ডার সরবরাহকারী কখনোই মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য বিক্রি করবেন না। এরপরেও কেনার সময় ক্রেতাকে এ ব্যাপারটি খুব গুরুত্বসহকারে খতিয়ে দেখতে হবে। কেননা, এর উপর নির্ভর করছে এলপিজি সিলিন্ডার ব্যবহারকারির নিরাপত্তা। গ্যাস সিলিন্ডার সাধারণত ন্যূনতম প্রতি দশ বছরে প্রতিস্থাপন বা পুনরায় পরীক্ষা করা উচিৎ। অন্যান্য তথ্যের সাথে মেয়াদ শেষ হওয়ার তারিখটি সিলিন্ডারের বডিতেই লিপিবদ্ধ থাকে। প্রস্তুতের তারিখ থেকে দশ বছর অতিক্রান্ত হয়ে গেলে সিলিন্ডারের গুণগত মান হারাতে থাকে। ফলে, সেটি পুনরায় গ্যাস রিফিলের জন্য উপযুক্ত থাকে না।

সিলিন্ডারকে সর্বদা উপরের দিকে মুখ করে রাখা: স্পষ্ট করে ভিন্ন কোন নির্দেশনা না থাকলে এলপিজি সিলিন্ডার উপরের দিকে মুখ করে সোজা অবস্থায় রাখা উচিৎ। উল্টো করে কিংবা যে কো নো এক দিকে কাত করে রাখা যাবে না। মোট কথা এমনভাবে রাখতে হবে, যেন সেটি স্থিরভাবে এক জায়গায় থাকতে পারে। এ সময় আশেপাশের কোন কিছুর সাথে সিলিন্ডারের যেন কোন ধাক্কা না লাগে। খালি বা গ্যাস ভরা সিলিন্ডার, উভয় ক্ষেত্রেই এটি প্রযোজ্য। এ অবস্থায় রাখলে তরল পেট্রোলিয়াম গ্যাস লিক করে আগুন লাগার ঝুঁকি থাকে না।

সিলিন্ডার স্থাপনের জায়গায় সঠিক বাতাস চলাচল: বদ্ধ জায়গায় জমা হওয়া এলপিজি ধোঁয়া বিপদের লক্ষণ। তাই, সিলিন্ডারের সুরক্ষার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিকটি হচ্ছে পর্যাপ্ত বাতাস চলাচল। এর জন্য সিলিন্ডারটি রাখার জন্য যতটা সম্ভব উন্মুক্ত পরিবেশের ব্যবস্থা করতে হবে। বাড়ির যে জায়গাটি বেশি খোলামেলা সেখানে মাটির উপর সমতোলে রাখা যেতে পারে। তবে, সরাসরি সূর্যালোক পড়ে এমন জায়গা থেকে দূরে রাখাই ভাল। এতে করে বিপজ্জনক বিস্ফোরণের ঝুঁকি অনেকাংশে কমে আসে। আর কোন কারণে বিস্ফোরণ হলেও তা থেকে ক্ষতি অনেকটা কম হয়।

সিলিন্ডার স্থাপনের জায়গাটির সুরক্ষা: জঞ্জালপূর্ণ, আবদ্ধ ও স্যাঁতস্যাঁতে জায়গায় সিলিন্ডার রাখা ঠিক নয়। বরং, যেখানে বিশৃঙ্খলা কম এমন খোলামেলা, বিচ্ছিন্ন ও পরিষ্কার শুষ্ক জায়গা নির্বাচন করা জরুরি। চুলার খুব কাছাকাছি তো রাখা যাই না, বরং লম্বা পাইপের সাহায্যে চুলা থেকে অন্তত তিন ফুট দূরত্বে সিলিন্ডারটিকে স্থাপন করতে হয়। যত বেশি দূরে রাখা যায় ততই নিরাপদ। তবে, খেয়াল রাখতে হবে- সিলিন্ডার যেন অবশ্যই শক্তভাবে মাটির উপর স্থাপিত থাকে। দুর্ঘটনাজনিত কোন আঘাতে তা যেন কাঁত হয়ে বা সম্পূর্ণ পড়ে না যায়। বিশেষ করে ভূমিকম্প প্রবণ এলাকার জন্য এ মজবুত স্থাপনাটি সবচেয়ে বেশি দরকারি। অতর্কিতে রেগুলেটরে টিপ পড়ে যাওয়া বা কাঁত হয়ে পড়ে যাওয়া রোধ করতে টেকসই সিলিন্ডার স্ট্যান্ড বা শক্ত খাঁচা ব্যবহার করা যেতে পারে।

কোন ধরনের দাহ্য বস্তু সিলিন্ডারের সংস্পর্শে না আনা: কাগজ, অ্যারোসল, পেট্রোল, পর্দা ও রান্নার তেলের মত দাহ্য বস্তু সর্বদা এলপিজি সিলিন্ডার থেকে দূরে রাখা উচিৎ। ছোট্ট আগুনের সূত্রপাত ঘটাতে পারে- এমন সবকিছুই বর্জনীয়; এমনকি ধূমপানের জন্য ম্যাচের কাঠি বা দেয়াশলাইও। এছাড়া, উচ্চ ভোল্টেজের ইলেক্ট্রনিক ও বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি সিলিন্ডারের আশেপাশে রাখা যাবে না।

রান্নার সময় করণীয়: রান্না শুরু করার আধ ঘণ্টা আগে থেকেই রান্নাঘরের দরজা-জানালা খুলে দিতে হবে। এতে করে তাজা বাতাস চলাচল করতে পারবে। রান্নাঘর যথেষ্ট প্রশস্ত না হলে সিলিন্ডার রান্নাঘরে রাখা উচিৎ নয়। অবশ্য বর্তমানে ঢাকা শহরের প্রায় প্রতিটি রান্নাঘর অত্যন্ত ছোট। বিভিন্ন ধরনের তৈজসপত্রে ঠাসা ছোট জায়গাটি কোনভাবেই গ্যাসের সিলিন্ডারের মত বিপজ্জনক বস্তুর জন্য উপযুক্ত থাকে না। রান্না শেষে চুলার চাবি বন্ধ করতে কোন মতেই ভুলে যাওয়া চলবে না।

নিয়মিত পরিদর্শন ও রক্ষণাবেক্ষণ: এলপিজি সিলিন্ডারের সংযোগগুলো ক্ষয়ক্ষতি ও লিক জনিত যে কোন লক্ষণের জন্য আগে থেকেই পরীক্ষা করে নেয়া উচিৎ। আর একটি নির্দিষ্ট রুটিন মেনে পরিদর্শন এ পরীক্ষার কাজে সহায়ক হবে। এর বাইরেও বহু সময় কোন ফাটল চোখে পড়তে পারে বা গ্যাস লিকের মত আশঙ্কাজনক কোন শব্দ কানে আসতে পারে। এ সময় দ্রুত গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে সিলিন্ডার সরবরাহকারি প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করা আবশ্যক। এছাড়া, শুধু সিলিন্ডারই নয়, এর সাথে ব্যবহৃত বিভিন্ন খুটিনাটি পার্টসগুলোর প্রতিও সজাগ দৃষ্টি রাখা আবশ্যক। এগুলোর মধ্যে আছে সিলিন্ডার রেগুলেটর, সংযোগ পাইপ, ভাল্ভ ক্যাপসহ বিভিন্ন ধরনের ছোট ছোট যন্ত্রাংশ। এগুলোতে ত্রুটি থাকা সামগ্রিকভাবে পুরো সিলিন্ডারের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এক্ষেত্রে, সবচেয়ে ফলপ্রসূ উপায় হচ্ছে, সেই অনুমোদিত ও স্বীকৃত প্রতিষ্ঠান বাছাই করা। এ পরিদর্শন ও রক্ষণাবেক্ষণে তারা দক্ষ কর্মী দিয়ে সার্বিক নিরাপত্তায় সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে।

সিলিন্ডার পরিবর্তনের সময় চুলা বন্ধ রাখা: গ্যাস শেষ হয়ে গেলে রিফিল করার সময় ডিস্ট্রিবিউটরের কর্মীরাই এ সাবধানতাটি অবলম্বন করবেন। এছাড়া, ব্যবহারকারিদেরকেও তারা এ সময় চুলা বন্ধ রাখার কথা বলেন। এছাড়া, গ্যাস শেষ হয়ে গেলে চুলাতে এমনিতেই গ্যাসের কোন শব্দ থাকে না। এরপরেও চুলা বন্ধ রাখাটাই উত্তম। সিলিন্ডার রিফিল হয়ে যাওয়ার পর যখন গ্যাস অপারেটর যাচাইয়ের জন্য চুলা জ্বালাতে বলবেন একমাত্র তখনি চুলা জ্বালানো যেতে পারে।

ঘরে গ্যাসের গন্ধ পেলে সাথে সাথে সিলিন্ডার সরবরাহকারি প্রতিষ্ঠানকে জানানো: দীর্ঘ ভ্রমণে যাওয়ার কারণে বাড়ি বহু দিন বদ্ধ অবস্থায় থাকতে পারে। এ সময় বাইরে থেকে ঘরে ঢুকার পর সবার পূর্বে দরজা জানালা খুলে দিতে হবে। ঘরের ভেতরে গ্যাসের কোন গন্ধ পাওয়া গেলে সাথে সাথে স্থানীয় গ্যাস ডিস্ট্রিবিউটরকে জানাতে হবে। গ্যাস টেকনিশিয়ান আসার পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত ম্যাচের কাঠি জ্বালানো, ইলেকট্রিক সুইচ অন করা, কিংবা সিলিন্ডারের রেগুলেটরে হাত দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।

গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহারে এ সাবধানতাগুলো অনাকাঙ্ক্ষিত বিস্ফোরণ থেকে বাড়িকে সুরক্ষিত রাখার উপযুক্ত উপায়। মূলত কোথা থেকে বা কাদের কাছ থেকে কেনা হচ্ছে সেদিকে গুরুত্ব দেয়া হলে নিরাপত্তা নিশ্চিতের অর্ধেক কাজই হয়ে যায়। কেননা, অনুমোদিত ও স্বীকৃত প্রতিষ্ঠান সর্বাঙ্গীনভাবে তাদের পণ্যের মান নিশ্চিতকরণের দিকে খেয়ালা রাখে। ফলে, সিলিন্ডারের মেয়াদ, গ্যাস লিক, নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ ও গ্যাস রিফিল নিয়ে দুশ্চিন্তার অবকাশ থাকে না। এর বাইরে ক্রেতাকে নিশ্চিত করতে হবে সিলিন্ডার স্থাপনের স্থানে বাতাস চলাচলের পরিবেশ ও তার আশেপাশে দাহ্য বস্তু না রাখার ব্যাপারটি। সর্বোপরি, এলপিজি সিলিন্ডারজনিত যে কোন অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য চুলার কাজ ছাড়াও প্রতিনিয়ত গ্যাস লিকের বিষয়ে সতর্ক থাকা আবশ্যক।