রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪

শিরোনাম

লাল যাত্রা: বাঙালির সাহস ও ঐক্যের প্রতীক

শুক্রবার, মার্চ ২৯, ২০২৪

প্রিন্ট করুন

অভ্র বড়ুয়া: বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ ছিল নির্মম গণহত্যার দিন। এ কালো অধ্যায় কীভাবে ভুলি আমরা? যা একটি জাতির সংকল্প ও স্থিতিস্থাপকতাকে সংজ্ঞায়িত করে। সেই দিন ঢাকার রাজপথ লাল রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল। ২৫ মার্চ রাতে নিরস্ত্র বাঙালির উপর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর অতর্কিত আক্রমণের ফলশ্রুতিতে ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। শুরু হয়েছিল বাঙালিদের দীর্ঘ নয় মাসব্যাপী স্বাধীনতার লড়াই।

এ গণহত্যা স্মরণে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও আয়োজিত হয়েছে ‘লাল যাত্রা’ নামে পরিচিত এ র‍্যালি। নাট্যকার, নির্দেশক ও সংগীতশিল্পী রাহুল আনন্দের ভাবনা ও পরিকল্পনা এবং প্রাচ্যনাটের প্রযোজনায়, লাল যাত্রা নিছক প্রতীকবাদকে অতিক্রম করে, বাঙালি জাতির সম্মিলিত চেতনাকে মূর্ত করে। এ যাত্রা যেন সেই দৃশ্যের চিত্রায়ন, যেন কালো সীমানাসহ লাল শাড়ির এক সমুদ্র, স্বাধীনতার জন্য রক্ত জলাঞ্জলীর এক মর্মান্তিক অনুস্মারক, বিভিন্ন বয়সী, বিভিন্ন পেশার শত শত লোক রাস্তা দিয়ে সমাবেশে সামিল, নৃশংস এক রক্তক্ষয়ী ইতিহাসের ভারে সকলের হৃদয় ভারাক্রান্ত।

‘ধন ধান্য পুষ্পে ভরা’ গানে ঢাকার স্বোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বর (টিএসসি) থেকে স্মৃতি চিরন্তন চত্বর (ফুলার রোড সড়কদ্বীপ) পর্যন্ত মানুষের হেঁটে চলা, ২৫ মার্চের নৃশংস ইতিহাসকে হৃদয়ে ধারণ করার পদযাত্রা। কিন্তু, লাল যাত্রা শুধু একটি র‍্যালি নয়; আমাদের বাঙালি জাতির অদম্য চেতনার স্মারক। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বর্বরতার কাছে প্রাণ বির্সজন দেয়া অগণিত প্রাণের জন্য ন্যায়বিচার দাবি আদায়ের পদযাত্রা। দেশ মানে তো মা।সময় পেরিয়ে যেতে পারে, কিন্তু মা কী কখনও তার সন্তানদের মৃত্যু ভুলতে পারে? লাল যাত্র যেন সেই চিত্র তুলে ধরে; যেখানে ‘মা’ তার সন্তানদের নিয়ে রাজপথে নেমেছে ন্যায়বিচারের দাবি আদায়ে। আমাদের নতুন প্রজন্মের কাছে, লাল যাত্রা আমাদের দেশের প্রতি কর্তব্যের একটি গৌরবময় অনুস্মারক হিসাবে কাজ করে, দেশের জন্য, যাদের এত ত্যাগ তাদের স্মরণ করা ও তাদের চেতনাকে বহন করা।

২০১১ সাল থেকে বাংলাদেশের অন্যতম নাট্যদল প্রাচ্যনাট প্রতি বছর ২৫ মার্চ লাল যাত্রা র‍্যালির আয়োজন করে আসছে। আমেরিকান সাংবাদিক রবার্ট পেইন লিখেছিলেন যে, এ হত্যাকান্ডে কমপক্ষে সাত হাজার নিরস্ত্র বাঙালিকে হত্যা করা হয় এবং তিন হাজার মানুষকে গ্রেফতার করা হয়। প্রতি বছর ২৫ মার্চ সেই নৃশংস হত্যাকান্ডের ইতিহাসকে স্মরণ করাতে, তার সুষ্ঠ বিচার দাবিতে ও আর্ন্তজাতিক স্বীকৃতি আদায়ে লাল যাত্রার আয়োজন করা হয়।

আসুন, আমরা স্মরণের মশালকে এগিয়ে নিয়ে যাই, লাল যাত্রার হাত ধরে। স্বাধীনতার শিখা যেন আগামী প্রজন্মের জন্য উজ্জ্বল হয় তা নিশ্চিত করে। লাল যাত্রা চিরকাল সাহস এবং ঐক্যে বিশ্বাসী বাঙালি জাতির অবিনশ্বর চেতনার প্রতীক হয়ে থাকবে। স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা।

লেখক: শিক্ষার্থী, দার্জিলিং, ভারত।