রবিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

শিরোনাম

শিখ নেতা খুনের ষড়যন্ত্র নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ‘গোপন ব্রিফিং’

রবিবার, ডিসেম্বর ১৭, ২০২৩

প্রিন্ট করুন
গুরপাতবন্ত সিং পান্নুন

ওয়াশিংটন, যুক্তরাষ্ট্র: যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের পাঁচজন ভারতীয় বংশোদ্ভূত সদস্যকে ‘গোপন ব্রিফিং’ করেছে বাইডেন প্রশাসন। যুক্তরাষ্ট্রের এক নাগরিককে নিজের দেশের মাটিতেই হত্যার ষড়যন্ত্রে ভারতীয় কর্মকর্তার জড়িত থাকার ব্যাপার নিয়েই ওই ‘গোপন ব্রিফিং’ হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। ‘ব্রিফিংয়ের’ পর যৌথ বিবৃতি দিয়ে ওই পাঁচজন কংগ্রেস সদস্য জানিয়েছেন, যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তা উদ্বেগজনক ও ব্যাপারটির যদি সমাধান না করা হয়, তবে যুক্তরাষ্ট্র-ভারত সম্পর্কের ‘উল্লেখযোগ্য ক্ষতি’ হতে পারে। খবর বিবিসি, পিটিআইয়ের।

গেল মাসে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাটর্নি জেনারেলের দপ্তর নিউ ইয়র্কের এক আদালতে যে অভিযোগপত্র জমা দেয়, তা অনুযায়ী নিখিল গুপ্তা নামে ভারতীয় এক নাগরিক ও নাম উল্লেখ না করা ভারতীয় এক কর্মকর্তা যুক্তরাষ্ট্রের এক নাগরিককে হত্যার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলেন। গুপ্তাকে চেক প্রজাতন্ত্রে গ্রেফতার করা হয়েছে।

কথিত ষড়যন্ত্রে যুক্তরাষ্ট্রের যে নাগরিককে খুনের ষড়যন্ত্র হয়েছিল বলে দাবি করা হয়েছে, অভিযোগপত্রে তার নাম উল্লেখ করা হয়নি। তবে, ভারতীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, মনে করা হচ্ছে ওই ব্যক্তি হলেন শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা গুরপতবন্ত সিং পান্নুন। তাকে ভারত বেশ কয়েক বছর পূর্বেই সন্ত্রাসী বলে ঘোষণা করেছিল।

যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের সদস্যরা যা বলছেন: ভারতীয় পাঁচ বংশোদ্ভূত কংগ্রেসের সদস্য অমি বেরা, প্রমীলা জয়পাল, রো খান্না, রাজা কৃষ্ণমূর্তি ও শ্রী থানেদার ‘ব্রিফিংয়ের’ শেষে যৌথ বিবৃতিটি দিয়েছেন। ভারত সরকার যে অভিযোগগুলো নিয়ে তদন্ত কমিটি গড়েছে, সেই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে ওই পাঁচজন কংগ্রেস সদস্য বলেছেন, ‘এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে ভারত পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করুক, ভারত সরকারের কর্মকর্তাসহ যারা দায়ী তাদের চিহ্নিত করুক, জবাবদিহি নিশ্চিত করুক আর এই আশ্বাস দিক যে এই ঘটনা আর কখনো হবে না।’ যৌথ বিবৃতিতে কংগ্রেসের ওই সদস্যরা বলেছেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধুত্ব দুই দেশের মানুষের জীবনেই একটা সদর্থক প্রভাব ফেলেছে। কিন্তু, আমাদের উদ্বেগটা এখানেই যে অভিযোগপত্রে যেসব ঘটনার বর্ণনা দেয়া হয়েছে, সেগুলো নিয়ে যদি যথার্থ ব্যবস্থা না নেয়া হয়, তাহলে এই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের গুরুতর ক্ষতি হবে।’ ধারণা করা হচ্ছে, ওই ‘গোপন ব্রিফিংয়ে’ বাইডেন প্রশাসন এমন কিছু প্রমাণ তাদের সামনে তুলে ধরেছে, যার সব কিছু হয়তো আদালতে দাখিল করা অভিযোগপত্রে লেখা হয়নি।

নিখিলের পরিবারের মামলা: এ দিকে, চেক প্রজাতন্ত্রে গ্রেফতার হওয়া নিখিল গুপ্তার পরিবারের পক্ষ থেকে ভারতের সুপ্রিম কোর্টে একটি হেবিয়াস কর্পাস পিটিশন দায়ের করা হয়েছে। ওই পিটিশনে দাবি জানানো হয়েছে, কোর্ট ভারত সরকারকে ব্যাপারটিতে হস্তক্ষেপ করার নির্দেশ দিক। হেবিয়াস কর্পাস পিটিশন হল কোন ব্যক্তির খোঁজ না পেলে তাকে সশরীরে আদালতে হাজির করানোর দাবি জানিয়ে আবেদন। গুপ্তার আইনজীবী দাবি করেছেন, তাকে অবৈধভাবে আটক করা হয়েছে ও যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যর্পণের প্রক্রিয়াও শুরু করা হয়েছে। আইনজীবী রোহিনী মুসা বলেন, ‘তার বিরুদ্ধে প্রত্যর্পণের আদেশ জারি করা হয়েছে। কিন্তু, আমাদের এই আদেশের কপি দেয়া হয়নি। কিছু রিপোর্ট অনুসারে, তাকে প্রত্যর্পণও করা হয়েছে, তবে আমরা তার কাছ থেকে কোন তথ্য পাচ্ছি না।’ গুপ্তার পরিবারের দাবি, ‘স্বঘোষিত যুক্তরাষ্ট্রের এজেন্টরা’ গ্রেফতারি পরোয়ানা ছাড়াই তাকে গ্রেফতার করেছে এবং এখনো পর্যন্ত তাকে ন্যায্য আইনি প্রক্রিয়া থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। ওই পিটিশনে বলা হয়েছে, ‘তাদের নির্জন কারাগারে রাখা হয়েছে, যেখানে তাদের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে। তার ধর্মবিশ্বাসের বিরুদ্ধে গিয়ে গরুর ও শুয়োরের মাংস খেতে বাধ্য করা হচ্ছে বলেও দাবি করা হয়েছে।’ চেক প্রজাতন্ত্র ও যুক্তরাষ্ট্রে গুপ্তার হয়ে লড়াই করতে তার পরিবার একজন ভারতীয় উকিলও চেয়েছেন। মামলাটির শুনানির সময় ভারতের শীর্ষ আদালত ব্যাপারটিকে ‘অত্যন্ত সংবেদনশীল বিষয়’ বলে বর্ণনা করেন ও নিখিল গুপ্তার জ্যেষ্ঠ আইনজীবীকে চেক প্রজাতন্ত্রের আদালতে আবেদন করতে বলেন।

নিখিলকে গ্রেফতারের কারণ: ভারতীয় নাগরিক নিখিল গুপ্তার বিরুদ্ধে পূর্ব থেকেই মাদক ও অস্ত্র চোরাচালানের অভিযোগ আছে। তবে চেক প্রজাতন্ত্রে তিনি গ্রেফতার হওয়ার পেছনে যে অভিযোগ আছে, তা হল যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক গুরপতবন্ত সিং পান্নুনকে সে দেশের মাটিতেই হত্যার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাটর্নি জেনারেলের দপ্তর এ নিয়ে যে অভিযোগপত্র প্রকাশ করেছে, তাতে লেখা হয়েছে, পরিকল্পনা করা ওই হত্যার জন্য গ্রেফতারকৃত ব্যক্তি একজন ভাড়াটে খুনি নিয়োগের চেষ্টা করেছিলেন। যুক্তরাষ্ট্র প্রাথমিক অভিযোগপত্র প্রকাশ করার পরই নিখিল গুপ্তা ধরা পড়েন চেক প্রজাতন্ত্রে। গুপ্তা নগদ এক লাখ মার্কিন ডলার দিয়ে ভাড়াটে খুনিকে হত্যাকাণ্ডের জন্য নিয়োগ করতে যাচ্ছিলেন। কিন্তু, সেই ভাড়াটে খুনি আসলে ছিলেন একজন ছদ্মবেশী ফেডারেল এজেন্ট। পুরো ঘটনায় নাম না করে ভারতীয় এক নিরাপত্তা কর্মকর্তার জড়িত থাকার কথাও অভিযোগপত্রে লেখা হয়েছে।

ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য: ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচী বিবৃতিতে বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হত্যার অভিযোগকে গুরুত্ব সহকারে নিচ্ছে ভারত।’ এই অভিযোগে কোন ভারতীয় কর্মকর্তার নাম নেই জানিয়ে বাগচী বলেন, ‘আমরা পূর্বেই উল্লেখ করেছি, যুক্তরাষ্ট্রের সাথে দ্বিপক্ষীয় নিরাপত্তা সহযোগিতা নিয়ে সংলাপের সময় তারা সংগঠিত অপরাধী, সন্ত্রাসী, অস্ত্র ব্যবসায়ী ও অন্যদের যোগসাজশ সম্পর্কে কিছু তথ্য দিয়েছিল। ভারত এই ঘটনার তদন্তের জন্য বিশেষ তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।’

এর পূর্বে কানাডাও শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা হরদীপ সিং নিজ্জার হত্যাকাণ্ডে ভারতের জড়িত থাকার অভিযোগ এনেছিল।