ঢাকা: ঢাকার জাতীয় নাট্যশালার স্টুডিও থিয়েটার হলে রোববার (১৮ ডিসেম্বর) সন্ধায় প্যান্টোমাইম মুভমেন্টের প্রযোজনায় রিজোয়ান রাজনের একক মূকাভিনয় ‘ট্রাজেডি-কমেডি’ মঞ্চস্থ হয়ে গেল। ‘লাইফ ইজ এ ট্রাজেডি হোয়েন সিন ইন ক্লোজ-আপ বাট এ কমেডি ইন লং-শর্ট’ চার্লি চ্যাপলিনের এ উক্তি থেকেই প্রযোজনাটির নামকরণ হয়েছে ‘ট্রাজেডি-কমেডি।’ তিনটি ভিন্ন স্বাদের কাহিনী যথাক্রমে ‘বুড়ো জাদুকরের গপ্পো’, ‘মিঠুর কুত্তা টাইগার’ ও ‘এই শহরে লালচান’ নিয়েই ট্রাজেডি-কমেডি প্রদর্শিত হল।
প্রথম গল্পটির ভাবনা ভারতের বিখ্যাত নট ও মূকাভিনয়শিল্পী অঞ্জন দেবের। দ্বিতীয় গল্পটির ভাবনা ভারতের কিংবদন্তীতুল্য মূকাভিনয়শিল্পী পদ্মশ্রী নিরঞ্জন গোস্বামীর ও তৃতীয় গল্পটির রচয়িতা রাজন নিজেই। ‘বুড়ো জাদুকরের গপ্পো’তে জাদুকর সাকলাইন সাহেব অফিসের অবসরে জাদু পরিবেশন করেন পরিচিত মহলে। জাদুর আসরে স্ত্রী থাকেন তার সহকারি হিসাবে। জাদুকরের ভুলো মন তাই মাঝে মাঝে সব ওলট পালট হয়ে যায়। এভাবে এক দিন তার স্ত্রীকে শূণ্যে তোলার পর আর নামাতে পারলেন না। এক সময় তার স্ত্রী শূণ্যেই মিলিয়ে গেলেন…। ‘মিঠুর কুত্তা টাইগার”। এটি আমাদের প্রতিদিনের পরিচিত ঘটনা। সকালে অনেকেই জগিংয়ের সময় বাড়ির পোষা কুকুরকে নিয়ে বের হয়। এখানে মিঠুকে দেখা যায়, তার টাইগারকে (কুকুর) নিয়ে নানা মজার ঘটনায় মেতে উঠতে কিংবা নিজেই আবার কখনো অসহায় হয়ে পড়ে টাইগারের দস্যিপনার কাছে। তৃতীয় গল্পটি ‘এই শহরে লালচান’। লালচান সার্কাস দেখায়। কিন্তু আসর জমানোর জন্য নানা রকম খেলনা সামগ্রী বিক্রি করে লোক সমাগম করে। এক দিন সার্কাস করার সময় পড়ে পা ভেঙ্গে ফেলে। তার নিয়মিত রোজগারের পথ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে তার পেশাও বদলে যায়।
মানুষের পুরো জীবনটাই ট্রাজেডি-কমেডিতে ভরপুর। মুদ্রার এপিঠ ওপিঠের মত চিরকালীন আবার জীবনের উত্থান-পতনের মতই স্বাভাবিক। মূকাভিনয়গুলোতে পরিচিত ঘটনা প্রবাহের সাথে মানব জীবনের সহজাত আবেগ অনুভূতির প্রকাশ, মানবিক বোধ ও জীবনের টানাপোড়েন স্থান পেলেও ফ্যান্টাসিকে আশ্রয় করে কাহিনী এগিয়ে গেছে।
প্রযোজনাটি সম্পর্কে রিজোয়ান রাজন বলেন, ‘চ্যাপলিনকে আমি সমাজ সংস্কারক হিসাবেই দেখি। আর মূকাভিনয়ের গল্পগুলোকে সমাজ-রাস্ট্রের প্রেক্ষাপটে উপস্থাপনে আগ্রহী। এ প্রযোজনার আবহ সঙ্গীতে ছিলেন রাজ ঘোষ, পোশাক পরিকল্পনায় তামিমা সুলতানা ও আলোক পরিকল্পনা করেছেন ফজলে রাব্বি সুকর্নো। ট্রাজেডি-কমেডি প্রযোজনাটি শুরুর আগে বাংলাদেশ মূকাভিনয় ফেডারেশানের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও প্রথম চেয়ারম্যান জাহিদ রিপন শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন। প্রযোজনা শেষে বাংলাদেশ থিয়েটার আর্কাইভসের প্রতিষ্ঠাতা বাবুল বিশ্বাস, বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটারের সংগঠক ও গবেষক কামরুল হাসান, চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের কেন্দ্রীয় কমান্ডার নিখিল দাশ ও বাংলাদেশ মূকাভিনয় ফেডারেশানের সেক্রেটারি জেনারেল ধীমান সাহা জুয়েল প্রযোজনা সম্পর্কে অনুভূতি ব্যক্ত করেন। আয়োজনটি সঞ্চালনায় ও প্রযোজনা অধিকর্তা ছিলেন প্যান্টোমাইম মুভমেন্টের সাধারণ সম্পাদক সোলেমান মেহেদী।