ঢাকা: সয়াবিন তেলের মূল্য লিটারে দশ টাকা কমানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আগামী ১ মার্চ থেকে নয়া মূল্য কার্যকর হবে। ‘দ্রব্যমূল্য ও বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা’ বিষয়ক টাক্সফোর্সের সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সভা কক্ষে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘টিকে গ্রুপ, সিটি গ্রুপ, এস আলম গ্রুপ, বসুন্ধারা গ্রুপের প্রতিনিধিরা সভায় ছিলেন। সরকারের উদ্যোগে আমরা পাঁচ টাকা ট্যারিফ কমিয়েছি। আমি ওনাদের বলেছি, প্রধানমন্ত্রী প্রত্যাশা করেন- আমাদের যারা বড় শিল্প গ্রুপ ও ব্যবসায়ী আছেন, তাদেরও সামাজিক দায়বদ্ধতায় এগিয়ে আসতে হবে। সবকিছু বিবেচনায় আমাদের অনুরোধের প্রেক্ষিতে ব্যবসায়ীরা ভোজ্য তেলের মূল্য দশ টাকা প্রতি লিটারে কমানোর জন্য একমত হয়েছেন। উনারা নিজেরাই প্রস্তাবটা করেছেন।’
তিনি আরো বলেন, ‘সর্বোচ্চ বাজার দাম রমজানে প্রতি এক লিটারের বোতল ১৬৩ টাকা করার ব্যাপারে আমরা একমতে পৌঁছেছি। যে দামটা ছিল ১৭৩ টাকা ও তার পূর্বের বছরে ১৮৫ টাকার মত ছিল।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা জানেন, আমাদের ট্যারিফের সার্কুলারটা এসেছে গেল ৮ ফেব্রুয়ারি, যে কোন জাহাজের বিদেশ থেকে আসতে প্রায় এক মাস লেগে যায় এবং সেটা খালাস করে ভোক্তা পর্যায়ে যেতে ন্যুনতম দুই মাস লেগে যায়। দুই মাস আমাদের রমজানের নেই। তবে, আমাদের বিশেষ অনুরোধে ব্যবসায়ীরা এ বাজার মূল্যটা আগামী ১ মার্চ থেকে কার্যকর করবে।’
আহসানুল ইসলাম বলেন, ‘যেহেতু ভোজ্যতেলের সাথে বহু কিছু সম্পৃক্ত, তাই আশা করি, ভোক্তা পর্যায়ে বাজারে একটা স্বস্তি আসবে। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, খোলা তেলের সর্বোচ্চ দাম থাকবে ১৪৯ টাকা। আর পাঁচ লিটারের বোতল ৮০০ টাকায় বিক্রি হবে। আমরা আশা করছি, এতে ভোক্তা সাধারণ উপকৃত হবেন।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের যারা ব্যবসায়ী আছেন, বিভিন্ন পর্যায়ের তারা এটুকু নিশ্চিত করেছেন যে, আগামী রমজানে যে পরিমাণ অত্যাবশ্যকীয় পণ্য বাজারে থাকা বা মজুর থাকা বা পাইপলাইনে থাকা দরকার, তার সবগুলোই পর্যাপ্ত রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আপনারা সকলে জানেন ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, ফিলিস্তিন-ইসরায়েল যুদ্ধসহ বিভিন্ন কারণে পরিবহনের ব্যয় বেড়েছে, ডলারে আমদানি পর্যায়ে ব্যয় বেড়েছে। তারপরও প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য আমাদের ব্যবসায়ীরা সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছেন। নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য যেন যৌক্তিক পর্যায়ে থাকে, সে জন্য কিছু পরিবর্তন করেছে।’
আগামীতে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে ব্যাংকের পক্ষ থেকে ব্যবসায়ীরা আরো বেশি সহযোগিতা পাবেন বলে তিনি জানান।
আহসানুল ইসলাম আরো জানান, অত্যাবশ্যকীয় পণ্যগুলোর ট্যারিফ আগামী বাজেটে যেন যৌক্তিক পর্যায়ে থাকে, সে জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন আমদানিকৃত যে পণ্য আছে ও যে পরিমাণ মজুদ আছে, সেটা রমজানের জন্য যথেষ্ট।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘ভারত থেকে পেঁয়াজ ও চিনি আমদানির জন্য প্রক্রিয়া শুরু করেছি, নীতিগতভাবে ভারত সরকার পেঁয়াজের বিষয়ে সম্মতিও দিয়েছে। এখন ভারতের পক্ষ থেকে আমরা অফিসিয়ালি কাগজ পেলে, পেঁয়াজ দ্রুত সময়ের মধ্যে বাংলাদেশে এসে পৌঁছাতে পারে সে পদক্ষেপ আমরা নেব।’
আহসানুল ইসলাম বলেন, ‘মিয়ানমার থেকে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য আমরা যেন বর্ডার থেকে নদী পথে আনতে পারি, সে ধরনের একটি এমওইউ ড্রাফট আমাদের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে সেই দেশের সরকার। আমি প্রধানমন্ত্রীর সাথে এ ব্যাপারে কথা বলেছি, উনি ব্যাপারটিকে ইতিবাচকভাবে নিয়েছেন।’
তিনি বলেন, ‘কৃষি মন্ত্রণালয় বছরে দুই বার পেঁয়াজ উৎপাদনের যে উদ্যোগ নিচ্ছে, আমরা আশা করছি আগামী কয়েক বছরের মধ্যে চালের মত এটাতেও আমাদের আমদানি নির্ভর হতে হবে না।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘টিসিবির মাধ্যমে এক কোটি পরিবারকে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য বিতরণ আমরা শুরু করেছি। এ রমজানে দুই বার এটা দেয়া হবে। সেখানে চাল থাকবে পাঁচ কেজি, তেল, ডাল, চিনি, খেজুর ও ছোলা থাকবে।’
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আজ আমরা শুধু ভোজ্যতেলের ব্যাপারে কথা বলেছি ও মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। আমরা আশা করি, বাজার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বাকি যে পণ্যগুলো আছে, সেগুলোর মূল্য যৌক্তিক পর্যায়ে চলে আসবে।’
তিনি বলেন, ‘পাম অয়েল আমাদের বোতল আকারে আসে না। একটা ব্যাপার জানিয়ে রাখা দরকার যে, এ প্রথম আন্তর্জাতিক বাজারে পাম আয়েলের মূল্য সয়াবিনের থেকে বেশি। সুতরাং, এটা যদি আমরা এখন পুনঃনির্ধারণ করতে যাই, তবে সেটা ভোক্তাদের জন্য খারাপ হয়ে যাবে।’
সাংবাদিকদের আর এক প্রশ্নের জবাবে আহসানুল ইসলাম বলেন, ‘আগামী ১ মার্চ থেকে ভোজ্য তেলের নয়া মূল্য কার্যকর হবে। আমাদের এ ট্যারিফটা আগামী ১৫ মার্চ পর্যন্ত কার্যকর থাকবে।’