ঢাকা: ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের সরকারি অনুদানে পূর্ণদৈর্ঘ্য ও স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য প্রস্তাব আহ্বান করেছে সরকার।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, চলচ্চিত্র শিল্পে মেধা ও সৃজনশীলতাকে উৎসাহিত করা এবং বাংলাদেশের আবহমান সংস্কৃতি সমুন্নত রাখার লক্ষ্যে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং মানবীয় মূল্যবোধসম্পন্ন জীবনমুখী, রুচিশীল ও শিল্পমানসমৃদ্ধ পূর্ণদৈর্ঘ্য ও স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে সরকারি অনুদান প্রদানের উদ্দেশ্যে কাহিনী ও চিত্রনাট্য বাছাইয়ের জন্য প্রযোজক, পরিচালক, প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান, চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্বগণের নিকট থেকে পূর্ণাঙ্গ প্যাকেজ প্রস্তাব আহ্বান করা যাচ্ছে।
প্রস্তাব জমাদানের ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত শর্তাবলি অনুসরণ করতে হবে-
শর্তাবলি: শুধু বাংলাদেশের নাগরিকরা অনুদান প্রাপ্তির জন্য যোগ্য বিবেচিত হবেন। অনুদানপ্রাপ্ত চলচ্চিত্রের সব শিল্পী, কলাকুশলীকে বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে। তবে, বিশেষ ভূমিকায় অংশগ্রহণের জন্য যদি কোন বিদেশি শিল্পী, কলাকুশলীর প্রয়োজন হয়, তাহলে মন্ত্রণালয়ের অনুমতিক্রমে ওই শিল্পী, কলাকুশলী চলচ্চিত্রে অংশ নিতে পারবেন।
অনুদানপ্রাপ্ত পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের নির্মাণ অনুদানের প্রথম চেক প্রাপ্তির নয় মাসের মধ্যে ও স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের নির্মাণ অনুদানের প্রথম চেক প্রাপ্তির ছয় মাসের মধ্যে সমাপ্ত করতে হবে। নির্মাণাধীন, সমাপ্ত বা মুক্তিপ্রাপ্ত কোন চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য অনুদানের জন্য বিবেচিত হবে না। অনুদানে নির্মিত, নির্মিতব্য চলচ্চিত্র মৌলিক নয় বলে প্রমাণিত হলে ও চুক্তিনামার শর্তাবলি বরখেলাপ করলে প্রযোজক অনুদান হিসেবে গৃহীত সমুদয় অর্থ ও সেবার মূল্য রাষ্ট্রীয় কোষাগারে প্রচলিত হারে সুদসহ ফেরত দিতে বাধ্য থাকবেন মর্মে ৩০০ টাকার নন-জ্যুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে অঙ্গীকারপত্র (মূলকপিসহ ১১ সেট ফটোকপি) আবেদনপত্রের সঙ্গে দিতে হবে। শর্ত খেলাপকারী সংশ্লিষ্ট প্রযোজকের বিরুদ্ধে সরকার আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে।
প্রতি অর্থ বছরে প্রাপ্ত বরাদ্দের আলোকে দশটি পূর্ণদৈর্ঘ্য ও দশটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রকে অনুদান দেয়া হবে। তবে, বিশেষ ক্ষেত্রে সরকার পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে পারবে। উপযুক্ত প্রস্তাব না পাওয়া গেলে অনুদান প্রদান বন্ধ অথবা অনুদানের সংখ্যা কমানো যাবে।
অনুদান প্রদানের ক্ষেত্রে সাহিত্য নির্ভর গল্প ও চিত্রনাট্যকে অগ্রাধিকার দেয়া হবে। অনুদানের অর্থ নির্বাচিত চলচ্চিত্রের প্রযোজককে দেয়া হবে। অনুদান প্রাপ্তির জন্য নির্বাচিত ও অনুমোদিত পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের প্রযোজককে ‘পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণে সরকারি অনুদান প্রদান নীতিমালা ২০২০ (সংশোধিত)’ ও স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের প্রযোজককে ‘স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণে সরকারি অনুদান প্রদান নীতিমালা ২০২০ (সংশোধিত)’ এর আওতায় অনুদান দেয়া হবে। এ ক্ষেত্রে, সংশ্লিষ্ট অনুদান কমিটির সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে। তবে, অনুদান প্রদান কার্যক্রম চলাকালীন বর্ণিত নীতিমালা দুটি সংশোধন করা হলে ওই সংশোধিত নীতিমালা অনুযায়ী অনুদান দেয়া হবে।
সরকারি অনুদান প্রদান সংক্রান্ত বর্ণিত নীতিমালা দুটি তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রদর্শিত আছে; যা আবেদনকারীরা দেখতে পারেন। কোন বিষয়ে অস্পষ্টতা থাকলে মন্ত্রণালয়ের চলচ্চিত্র-২ শাখায় যোগাযোগ করা যেতে পারে।
পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র অনুদান প্রাপ্তির লক্ষ্যে গল্প, চিত্রনাট্য ও চলচ্চিত্র নির্মাণের সার্বিক পরিকল্পনাসহ পূর্ণাঙ্গ প্যাকেজ প্রস্তাবের একটি মূল কপিসহ ১১ সেট ও স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র অনুদানের জন্য একটি মূল কপিসহ নয় সেট করে জমা দিতে হবে।
প্রস্তাবের সাথে নিম্নবর্ণিত তথ্যাদি/কাগজপত্রাদি দাখিল/উল্লেখ করতে হবে- প্রস্তাবিত গল্প ও চিত্রনাট্য মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক, শিশুতোষ, সাধারণ শাখা না-কি প্রামাণ্যচিত্র তা আবেদনে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে; দেশি গল্প/কাহিনীর ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট লেখক, সংস্থা, প্রকাশকের লিখিত সম্মতি/অনুমতি নিতে হবে। বিদেশি গল্প বা কাহিনীর ক্ষেত্রে কপিরাইট আইনের আওতায় সংশ্লিষ্ট লেখক, সংস্থা, প্রকাশকের অনুমতি নিতে হবে ও সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র দাখিল করতে হবে; প্রযোজকের নাম, মোবাইল নম্বরসহ জীবন-বৃত্তান্ত (পিতা-মাতার নাম, স্থায়ী ঠিকানা, বর্তমান ঠিকানা ও ই-মেইলসহ) সুষ্পষ্টভাবে অবশ্যই উল্লেখ করতে হবে। বর্তমান ঠিকানা পরিবর্তন হলে তা তাৎক্ষণিকভাবে জানাতে হবে; প্রযোজকের আর্থিক সক্ষমতা সংক্রান্ত ব্যাংক প্রত্যয়নপত্র, জাতীয় পরিচয়পত্র, টিআইএন প্রত্যয়নপত্র ও চলচ্চিত্র বিষয়ক প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠনের প্রত্যয়নপত্র (যদি থাকে) দাখিল করতে হবে; কাহিনী ও চিত্রনাট্যকারের স্পষ্টাক্ষরে পূর্ণ নাম ও পরিচালকের স্পষ্টাক্ষরে পূর্ণ নাম, স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা, শিক্ষাগত যোগ্যতা, প্রশিক্ষণ ও সংশ্লিষ্ট অভিজ্ঞতার বর্ণনা সম্বলিত জীবন-বৃত্তান্ত, মোবাইল নম্বর, টেলিফোন নম্বর, অবশ্যই প্রস্তাবের সাথে দাখিল করতে হবে; পূর্ণাঙ্গ প্যাকেজ প্রস্তাবের সাথে চলচ্চিত্রের প্রস্তাবিত শিল্পী ও কলাকুশলীদের নাম, ঠিকানা, তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা ও সংশ্লিষ্ট অভিজ্ঞতার বর্ণনা, নির্মাণ সংস্থার কারিগরি, আর্থিক ও অবকাঠামোগত সক্ষমতার বিবরণ, আউটডোর শুটিং স্পটের বিবরণ, পরিচালক নির্মিত একটি চলচ্চিত্রের নমুনা ও প্রস্তাবিত চলচ্চিত্রের যথার্থ বাজেট বিভাজনসহ নির্মাণ সমাপ্তির শেষ তারিখ উল্লেখ করে দাখিল করতে হবে; প্রস্তাবিত চলচ্চিত্রের কাহিনী সংক্ষেপ দাখিল করতে হবে ও পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের প্রক্ষেপণ সময় (স্থিতি) দুই ঘন্টা ও স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের প্রক্ষেপণ সময় (স্থিতি) ৩০ মিনিট পর্যন্ত হতে হবে। তবে, সরকার এ সময় হ্রাস-বৃদ্ধি করতে পারবে।
অনুদানপ্রাপ্ত পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ শেষে সেন্সর সনদ প্রাপ্তি সাপেক্ষে দেশের কমপক্ষে ২০টি সিনেমাহলে মুক্তি দিতে হবে। অনুদানে নির্মিত চলচ্চিত্রগুলো বাংলাদেশ টেলিভিশনের চাহিদা অনুযায়ী প্রদর্শনের লক্ষ্যে প্রযোজক সরবরাহ করবেন।
কোন প্রযোজক পর পর দুই বছর অনুদান পাওয়ার যোগ্য হবেন না। তবে, একই প্রযোজক দ্বিতীয় বার অনুদান পাওয়ার পর চার বছর অতিক্রান্ত হলে পুনরায় অনুদানের জন্য আবেদনের যোগ্য হবেন। একজন প্রযোজক সর্বোচ্চ তিন বারের বেশি অনুদান পাবেন না।
অনুদানপ্রাপ্ত পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ শেষে সিনেমা হলে মুক্তি ও স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ শেষে সেন্সর সনদ গ্রহণ ব্যতীত কোন প্রযোজক পুনরায় আবেদন করার যোগ্য হবেন না।
পূর্ণদৈর্ঘ্য ও স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য অনুদান প্রাপ্তির লক্ষ্যে গল্প, চিত্রনাট্য ও চলচ্চিত্র নির্মাণের সার্বিক পরিকল্পনাসহ পূর্ণাঙ্গ প্যাকেজ প্রস্তাব আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর বিকাল চারটার মধ্যে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের চলচ্চিত্র-২ শাখায় পৌঁছাতে হবে। ওই তারিখ ও সময়ের পরে কোন প্রস্তাব বা আবেদন গ্রহণ করা হবে না।
পূর্ণদৈর্ঘ্য ও স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য পৃথক পৃথক প্রস্তাব দাখিল করতে হবে।
অনুদান প্রদান সংক্রান্ত বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হিসেবে গণ্য হবে ও অনুদান প্রদানের পরও সরকার যে কোন যুক্তিসংগত শর্তারোপ করতে পারবে।