রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪

শিরোনাম

হলিউডে ধর্মঘট, আটকে যেতে পারে বহু চলচ্চিত্র

শনিবার, জুলাই ১৫, ২০২৩

প্রিন্ট করুন

ক্যালিফোর্নিয়া, যুক্তরাষ্ট্র: বেশ কিছু দিন ধরে ধর্মঘট করছেন যুক্তরাষ্ট্রের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি হলিউডের লেখকেরা। এবার তাদের ধর্মঘটে যোগ দিয়েছেন অভিনয়শিল্পীরাও। এ কর্মবিরতির ফলে মুক্তির অপেক্ষায় থাকা যুক্তরাষ্ট্রের সব ধরনের চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন সিরিজের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এতে অচলাবস্থার মুখে পড়েছে পুরো হলিউড ইন্ডাস্ট্রি। খবর বিবিসির, য়েচে ভেলের।

৬৩ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় রকমের স্থবিরতার মুখে পড়তে যাচ্ছে হলিউড। এ কর্মবিরতির জেরে হলিউডের অধিকাংশ চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন প্রোডাকশন হাউজে ধীরে ধীরে সব কাজ বন্ধ হয়ে যাবে।

বৃহস্পতিবার (১৩ জুলাই) মধ্যরাতে অ্যাক্টর ইউনিয়নের সভাপতি ফ্র্যাঁ ড্রেশার হলিউডের স্টুডিও মালিকদের কড়া সমালোচনা করে ধর্মঘটের আহ্বান জানান। মধ্যরাত থেকে হলিউডের প্রায় এক লাখ ৬০ হাজার শিল্পী লস অ্যাঞ্জেলেসে কাজ করা বন্ধ করে দেন। এতে যুক্তরাষ্ট্রের সব চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন প্রোডাকশন বন্ধ হয়ে যায়।

হলিউডের অভিনয়শিল্পীদের সংগঠন দ্য স্ক্রিন অ্যাক্টরস গিল্পের (এসএজি–সেগ) আগে নেটফ্লিক্সসহ স্ট্রিমিং জায়ান্টগুলোর সাথে বৈঠকে কোন সুরাহা না হওয়ায় লেখকদের ধর্মঘটে যোগ দেয়ার ঘোষণা দেয়।

পারিশ্রমিক বাড়ানোসহ বেশ কিছু দাবিতে ধর্মঘট করে আসছিলেন হলিউডের লেখকেরা। তাদের দাবির সাথে একাত্মতা জানিয়ে নিজেদের কিছু দাবি নিয়ে নেটফ্লিক্স ও ডিজনিসহ হলিউডের শীর্ষ স্টুডিওগুলোর সাথে আলোচনায় বসেছিল সেগ। লভ্যাংশ ও আরো ভাল কর্ম পরিবেশের দাবি জানিয়ে স্ট্রিমিং জায়ান্টগুলোর সাতে বৈঠক করে সেগ।

এ দিকে, ধর্মঘট চলাকালীন অভিনয়শিল্পীদের তাদের অভিনীত কোন চলচ্চিত্র দেখানো যাবে না বলে জানিয়েছে সেগ। এমনকি তারা যেসব কাজ এরইমধ্যে শেষ করেছেন, সেগুলোর প্রচারেও কেউ অংশ নেবেন না।

১৯৬০ সালের পর এ প্রথম আন্দোলনে নামল হলিউডের অভিনেতাদের সংগঠন। আজ থেকে ৬৩ বছর আগেও এক বার হলিউড অভিনেতারা আন্দোলনে নেমেছিলেন। সে সময় হলিউড অ্যাক্টরস গিল্ডের সভাপতি ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যান।

অ্যাক্টর ইউনিয়নের সভাপতি ফ্র্যাঁ ড্রেশার বলেন, ‘হলিউডে বিনিয়োগকারীরা আজ নিজেদের ওয়ালস্ট্রিট খুলে বসেছে ও লোভকে প্রাধান্য দিতে তারা এ শিল্পটিকে একটি মেশিনে পরিণত করেছে। তবে, তারা মেশিনটি চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় অবদানকারীদের কথা ভুলে যায়। এটি খুবই জঘন্য। তাদের ধিক্কার, তারা ইতিহাসের ভুল পিঠে দাঁড়িয়ে।’

বুধবার (১২ জুলাই) গভীর রাত পর্যন্ত একাধিক স্টুডিও কর্তৃপক্ষের সাথে দীর্ঘ বৈঠক হয় অভিনেতা ইউনিয়নের। কিন্তু, ইউনিয়নের প্রতিটি দাবি মেনে নিতে পারেনি স্টুডিও কর্তৃপক্ষ।

অভিনেতাদের দাবি, তাদের বেতন বাড়াতে হবে। পাশাপাশি অনলাইন স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মগুলোকে জনপ্রিয়তা অনুযায়ী প্রণোদনা দিতে হবে। আগে টেলিভিশনের জনপ্রিয় সিরিয়ালগুলো ভিউ অনুযায়ী অভিনেতাদের প্রণোদনা দিত। ইউনিয়নের অভিযোগ, নেটফ্লিক্সসহ অন্যান্য অনলাইন স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মগুলো ভিউয়ের হিসাব পর্যন্ত দেয় না। ফলে, কোনটি জনপ্রিয় হচ্ছে, তা বোঝাও যায় না, প্রণোদনাও দেয়া হয় না।

এ আলোচনার কয়েক ঘণ্টা আগে, স্ক্রিন অ্যাক্টরস গিল্ড, আমেরিকান ফেডারেশন অব টেলিভিশন অ্যান্ড রেডিও আর্টিস্টসহ অভিনেতাদের বিভিন্ন সংগঠন ডিজনি, নেটফ্লিক্স, অ্যামাজন এবং অন্যান্য নিয়োগকর্তাদের প্রতিনিধিত্বকারী প্রতিষ্ঠানের জোট অ্যালায়েন্স অব মোশন পিকচার অ্যান্ড টেলিভিশন প্রযোজকদের তিন বছরের একটি চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। পরে তারা বিষয়টি নিয়ে আলোচনায় বসেন; কিন্তু কোনে ঐকমত্য না হওয়ায় আলোচনা বন্ধ হয়ে যায়।

৬৩ বছর পর এভাবে হলিউড ইন্ডাস্ট্রি কার্যত বন্ধ হয়ে গেল। ধর্মঘট শুরু হওয়ার খবর পেয়ে লন্ডনে ওপেনহেইমারের প্রিমিয়ার শো ছেড়ে অভিনেতাদের বেরিয়ে যেতে দেখা যায়। হলিউডের সব স্তরের অভিনেতাই এ ধর্মঘটে যোগ দিচ্ছেন বলে ইউনিয়ন দাবি করেছে।

ইউনিয়ন জানিয়েছে, এর ফলে এক দিকে যেমন শুটিং বন্ধ থাকবে, অন্য দিকে বড় বড় চলচ্চিত্রের প্রিমিয়ারে অভিনেতারা উপস্থিত হবেন না। ছবির প্রোমোশনেও তাদের দেখা যাবে না। এর অর্থ, বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্র মুক্তি পেলেও প্রোমোশনে যেতে পারবে না।