হাটহাজারী, চট্টগ্রাম: উত্তর চট্টগ্রাম থেকে আসা হাজারো যুব তরুণ জনতার অংশগ্রহণে হাটহাজারী পার্বতী সরকারী মডেল উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে যৌতুক-মাদক ও জঙ্গিবাদ বিরোধী মহাসমাবেশ সোমবার (৯ জানুয়ারী) অনুষ্ঠিত হয়েছে। রজভীয়া নুরীয়া কমিটি বাংলাদেশ হাটহাজারী উপজেলার ব্যবস্থাপনায় আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় মহাসচিব ও আন্জুমানে রজভীয়া নূরীয়া ট্রাস্টের চেয়ারম্যান আল্লামা আবুল কাশেম নূরীর (মু জি আ) আহবানে এ সমাবেশে অনুষ্ঠিত হয়।
মহা সমাবেশের উদ্বোধন করেন আন্জুমানে রজভীয়া নূরীয়া ট্রাস্টের মহাসচিব আব্দুর রশিদ দৌলতী।
এতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এটিএম পেয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘সরকার একার পক্ষে সবকিছু সামাল দেয়া সম্ভব নয়। এ ক্ষেত্রে জনগণেরও অনেক করণীয় আছে। অথচ আমরা সে দায়িত্ব পালন করি না। সরকার সবকিছু করে দেবে এ মানসিকতা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। দেশের শীর্ষ স্থানীয় আলেমে দ্বীন আল্লামা আবুল কাশেম নূরী গরিব মানুষের প্রতি মমত্ববোধ ও দ্বীনি দায়িত্ববোধ থেকে আজ যৌতুক, মাদক ও নারী নিপীড়ন বিরোধী যে মহাসমাবেশ ডেকেছেন, তা দেখে আমরা অনুপ্রাণিত হই। তার মত আলেম, ইমাম, খতিব ও উলামা মাশায়েখরা এসব সামাজিক অনাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হলে দেশে অনুকূল পরিবর্তন আসবে।’
প্রধান আলোচক আন্জুমানে রজভীয়া নূরীয়া ট্রাস্টের সাংগঠনিক সচিব, লেখক ও গবেষক মাসুম চৌধুরী বলেন, ‘যৌতুক, মাদক, নারী নিপীড়ন থামাতে হলে বিদ্যমান আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। প্রয়োজনে বিদ্যমান আইনকে ঢেলে সাজিয়ে যুগোপযোগী আইন প্রণয়ন করতে হবে। আলেম ও ইমাম সমাজ নিজ নিজ অবস্থান থেকে সোচ্চার হলে যাবতীয় সামাজিক অনাচার থেকে মুক্তি মিলতে পারে।’
প্রস্তুতি কমিটির অর্থ সচিব সৈয়দ মুহাম্মদ সিরাজুল আলম ও সদস্য সচিব মুহাম্মদ আব্দুশ শুক্কুরের যৌথ সঞ্চালনায় সমাবেশ স্বাগত বক্তব্য দেন আহবায়ক মাওলানা আব্দুল গফুর।
আব্দুর রশিদ দৌলতী বলেন, ‘সরকার নারী নির্যাতন, যৌতুক, মাদক, শিশু নির্যাতনসহ সামাজিক নানা অনাচারের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে। এসব সামাজিক অনাচার ও দুষ্টক্ষত বন্ধে জনগণকে সচেতন হতে হবে। সামাজিক সচেতনতা ও গণঘৃণাবোধ জাগ্রত করা ছাড়া এসব সামাজিক অভিশাপ থেকে নিষ্কৃতি মিলবে না। যৌতুকের গ্লানি থেকে গরিব পরিবারগুলোকে বাঁচাতে সরকার কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
যৌতুক দেয়া-নেয়া দুইটাকেই অপরাধ হিসেবে গণ্য করতে হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত হাটহাজারী উপজেলার সভাপতি আল্লামা অধ্যক্ষ ছালেহ আহমদ আনসারীর সভাপতিত্বে সমাবেশ আলোচক ছিলেন হাটহাজারী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এসএম রাশেদুল আলম, আন্তর্জাতিক বক্তা আল্লামা মুফতি গিয়াস উদ্দিন আত্ব-তাহেরী, মঞ্জুরুল আলম, সাবেক ছাত্রনেতা নুরুল আজিম রনি, ইমাম শেরে বাংলা (র) দরবারের শাহজাদা সৈয়দ মুহাম্মদ এনামুল হক, আমির ভান্ডার দরবারের পীরজাদা সৈয়দ মোরশেদুজ্জমান আমেরী, এইচএম মন্জুরুল আনোয়ার, এসএম ফখরুদ্দীন, আবু ছালেহ আঙ্গুর, রজভীয়া নুরীয়া কমিটির কেন্দ্রীয় সংগঠক মুহাম্মদ মাছুমুর রশিদ কাদেরী, শাহ্ কুতুব উদ্দিন নূরী, সাংগঠনিক সচিব শায়ের এনামুল হক এনাম, যুগ্ম সাংগঠনিক সচিব মুহাম্মদ মিনহাজ উদ্দিন সিদ্দিকী, অর্থ সচিব মুহাম্মদ আবুল হাসান, আইন সচিব মুহাম্মদ তারেক রেজা, মাওলানা ওমর ফারুখ নঈমী, মাওলানা নাজিম উদ্দিন নূরী, মাওলানা জাফর কামালী, মুহাম্মদ নিজাম উদ্দিন চৌধুরী, আবু হানিফ রিপন, মুহাম্মদ জাকির হোসেন, শায়ের শাহাদাত হোসেন, শায়ের মুহাম্মদ মেরাজ রেজা, মুহাম্মদ পিয়ারু।
আল্লামা আবুল কাশেম নূরী বলেন, ‘যৌতুক, মাদক ও নারীর প্রতি নিত্য অবমাননা আজ বড় সামাজিক ব্যাধি হয়ে দাঁড়িয়েছে। তা দেখে আমরা নিশ্চুপ থাকতে পারি না। সামাজিক দায়বদ্ধতা, ঈমানি তাড়না ও মানবিক কর্তব্যবোধ থেকেই আমি এ ধরনের আন্দোলন শুরু করেছি। সবাই আমার পাশে দাঁড়ালে আশানুরূপ সুফল মিলবে বলে আশা করি।’
সমাবেশে সমবেত ছাত্র যুব জনতার প্রতি তিনি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।
এসএম রাশেদুল আলম বলেন, ‘নারী নিপীড়ন ও শিশু নির্যাতন আজ অতীতের সব সীমা ছাড়িয়েছে। নারী নিগ্রহ, শিশু নির্যাতন, মাদক ও যৌতুকের বিরুদ্ধে সম্মিলিত প্রতিরোধ গড়ে তোলাই আজ সময়ের দাবি। বর্তমান সময়ের দাবির প্রেক্ষিতে এ ধরনের ব্যতিক্রমী আন্দোলন গড়ে তোলায় আমরা আল্লামা নূরীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।’
নুরুল আজিম রনি বলেন, ‘গরিবের ঘরে ঘরে আজ নীরব আর্তনাদ-আহাজারি চলছে। যৌতুকের দাবি মেটাতে না পারায় দেশে প্রতিদিন শত শত পরিবার ভাঙছে। কন্যাদায়গ্রস্থ পিতা-মাতার আর্তনাদ থামাতে না পারা আমাদের বড় ব্যর্থতা। এ ব্যর্থতার গ্লানি থেকে আমাদের নিষ্কৃতি খুঁজতে হবে।’
গিয়াস উদ্দিন আত্ব-তাহেরী বলেন, ‘ইসলামের নামে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ থেকে বাঁচাতে হলে দেশের লাখ লাখ সূফি আলেম সমাজকে নিয়ে সরকারকে জাতীয় কনভেনশন করতে হবে। জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সব আলেম সূফি সমাজকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। যৌতুক, মাদক, জঙ্গিবাদ ও নারী ধর্ষণ-নির্যাতনের অভিশাপ থেকে দেশ ও জাতিকে বাঁচাতে হবে।’
মুহম্মদ মাছুমুর রশিদ বলেন, ‘মাদকের হাতছানিতে যুব তরুণরা আজ আচ্ছন্ন, তাদের জীবনে মাদক সর্বনাশ ডেকে আনছে। ঘরে ঘরে আজ মাদক ঢুকে পড়েছে। মাদকের করাল গ্রাস থেকে আমাদের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বাঁচাতে হবে। এ দায়িত্ব পালন না করলে আমাদের উত্তরসূরিরা আমাদের কখনো ক্ষমা করবে না। বর্তমান প্রজন্মকে গভীর অন্ধকারের গহবর থেকে উদ্ধার করতে হলে আমাদের দায়িত্ব সচেতন হওয়ার বিকল্প নাই।’
মহা সমাবেশ শেষে মাদে মাগরিব থেকে শুরু হয় তফসিরুল কুরআন মাহফিল। সালাত সালাম শেষে মুসলিম উম্মাহর কল্যাণ, বিশ্বের নিপীড়িত মানবতার পরিত্রান এবং দেশ ও বিশ্ববাসীর ওপর আল্লাহর রহমত কামনায় মুনাজাত করা হয়।