ঢাকা: জেনোসাইড বিশেষজ্ঞদের আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব জেনোসাইড স্কলার্স (আইএজিএস) ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে সংঘটিত হত্যাযজ্ঞকে ‘জেনোসাইড, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধ’ ঘোষণা করে প্রস্তাব পাস করেছে। এ ঘোষণার মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশে একাত্তরে সংঘটিত গণহত্যার বিশ্বজনীন স্বীকৃতির প্রয়াসে তাৎপর্যপূর্ণ পদক্ষেপ গৃহীত হল।
মঙ্গলবার (২৫ এপ্রিল) মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘সম্মিলিতভাবে প্রণীত এ প্রস্তাবে মুক্তিযুদ্ধকালে পাকবাহিনী পরিচালিত নৃশংসতার উদ্দেশ্য ও ধরণ বিশ্লেষণ করে বিশদ ব্যাখ্যা দেয়া হয়। প্রস্তাবনাটি প্রতিষ্ঠানের সদস্যদের অনুমোদনের জন্য মাসব্যাপী ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। সোমবার (২৪ এপ্রিল) আইএজিএসের পক্ষ থেকে ভোটের ফলাফলের ভিত্তিতে বাংলাদেশে সংঘটিত জেনোসাইড সংক্রান্ত প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে বলে সিদ্ধান্ত জানানো হয়। বর্তমানে আইএজিএসের ৬২৬ জন সদস্য রয়েছেন। ভোটদাতা ২১৮ জন সদস্যের মধ্যে ২০৮ জন প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছেন, যার মাধ্যমে এ প্রস্তাব নিরঙ্কুশ সমর্থনে পাস হয়েছে।’
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘আইএজিএসের নির্বাহী পরিষদে প্রস্তাবনা পেশ করেন শহীদ বুদ্ধিজীবী সিরাজুদ্দিন হোসেনের পুত্র জেনোসাইড বিশেষজ্ঞ তৌহীদ রেজা নূর। তার সাথে সহ-উদ্যোক্তা হিসেবে ছিলেন জেনোসাইড ওয়াচের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি গ্রেগরি স্ট্যানটন, পারমানেন্ট পিপলস ট্রাইবুন্যালের সভাপতি হেলেন জার্ভিস, ব্রিটিশ কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক অ্যাডাম জোন্স, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক ও তরুণ প্রজন্মের জেনোসাইড গবেষক ইমরান আজাদ ও শাহরিয়ার ইসলাম। আইএজিএসের প্রাতিষ্ঠানিক সদস্য হিসেবে এ প্রস্তাবের প্রাতিষ্ঠানিক সমর্থক ছিল মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর।’
আইএজিএসের গৃহীত প্রস্তাবে বলা হয়, ‘আইএজিএস ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের বাঙালি জনগোষ্ঠীর ওপর পরিচালিত অপরাধকে জেনোসাইড, মানবতা-বিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধ হিসেবে স্বীকৃতি দিচ্ছে ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বিশেষভাবে পাকিস্তান সরকারের কাছে ১৯৭১ সালের জেনোসাইডের স্বীকৃতি দিতে ও যথাযথ ফোরামে এ বিষয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থাদি গ্রহণের জন্য আবেদন জানাচ্ছে। সেই সাথে আইএজিএস বাঙালি জাতিকে প্রয়োজনীয় ক্ষতিপূরণ প্রদানের ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করছে ও ১৯৭১ এর জেনোসাইডের স্বীকৃতিদান করে বিশেষ প্রস্তাব গ্রহণের জন্য জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে।’
তৌহীদ রেজা নূর জানান, ২০২১ সালের জুলাই মাসে তিনি সংস্থাটি ১৯৭১ এ সংঘটিত জেনোসাইডকে স্বীকৃতির প্রস্তাব উপস্থাপন করেন। এরপর ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রস্তাব পাঠানো হয়। আইএজিএসের গঠনতান্ত্রিক একটি নিয়মের কারণে প্রথম দফায় প্রস্তাবটি পাস না হলেও সেটাতে সংশোধনী আনার পর ভোটাভুটি সফল হয়েছে।
তিনি আরো জানান, সংস্থার আগের নিয়মে কোন প্রস্তাবের বিষয়ে মোট সদস্যের ৫০ শতাংশ ভোট দিতে হবে। তারপর ওই প্রস্তাবের বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসবে। কিন্তু, এত সদস্যের ভোট গ্রহণের বিষয়টি বেশ কঠিন। বাংলাদেশের জেনোসাইডের স্বীকৃতির প্রস্তাবের পর গঠনতন্ত্রে ওই ধারায় সংশোধনী আনে আইএজিএস। সংশোধনীতে বলা হয়, ‘২০ শতাংশের একজন বেশি ভোট দিলেও কোন প্রস্তাবের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে।’ দ্বিতীয় দফায় টানা এক মাস ভোটাভুটি শেষ করে ২৩ এপ্রিল বাংলাদেশে সংঘটিত হত্যাযজ্ঞকে ‘জেনোসাইড, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধ’ ঘোষণা করে প্রস্তাবটি পাস হয়।