দীর্ঘ তিন দশক সময় ধরে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করে দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনকে নিয়ে গেছেন অনন্য মাত্রায়। প্রবর্তন করেছেন বহির্বিশ্বের সর্বাধিক জনপ্রিয় ঢালিউড ফিল্ম অ্যান্ড মিউজিক অ্যাওয়ার্ড নামের বিশেষ অ্যাওয়ার্ড। দেশের সিনেমা ও নাট্যজগতের বহু অভিনেতা, অভিনেত্রী, গায়ক, গায়িকা এই অ্যাওয়ার্ড প্রদান অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ নিয়েছেন। অথচ যিনি দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গন ও কলাকুশলীদের জন্য এতকিছু করলেন, তিনিই কিনা যুক্তরাষ্ট্র থেকে স্বেচ্ছায় পাড়ি জমালেন বাংলাদেশে।
বলছিলাম যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশী কমিউনিটির প্রিয়মুখ শোটাইম মিউজিকের স্বত্ত্বাধিকারী আলমগীর খান আলমের কথা। গত শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) সকালে কাউকে না জানিয়ে অ্যামিরাতের একটি ফ্লাইটে নীরবে নিভৃতে বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগ করেন তিনি।
আলমগীর খান আলমের ঘনিষ্ঠজনেরা জানান, দীর্ঘ দুই যুগের বেশি সময় ধরে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করে আসলেও তাঁর বৈধ কাগজপত্র হয়নি। যে কারণে ট্রাম্প প্রশাসনের অবৈধ অভিবাসী গ্রেফতার অভিযান শুরু হওয়ার পর অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে নিজেই বাংলাদেশে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এছাড়া তাঁর মা হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ায় মায়ের সেবা করতে দেশে ফিরে যান বলেও কারও কারও ধারণা।
তরুণ বয়সে পড়ালেখার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন জনপ্রিয় মুখ আলমগীর খান আলম। প্রায় তিন দশক ধরে প্রবাসে থাকাকালীন অসংখ্য মানুষের সাথে তাঁর বন্ধুত্ব ও সখ্যতা গড়ে উঠে। তারা সবাই আলমের হঠাৎ দেশে ফিরে যাওয়ায় বেশ ব্যথিত হয়েছেন। দেশে ফিরে গেলেও প্রবাসি বাংলাদেশিদের হৃদয়ে তিনি যুগ যুগ ধরে থাকবেন বলেও জানান তারা।
প্রায় দুই যুগ ধরে ঢালিউড ফিল্ম অ্যান্ড মিউজিক অ্যাওয়ার্ডসের আয়োজন করে যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাপক পরিচিত লাভ করেন আলমগীর খান আলম। গত ১৮ জানুয়ারি নিউইয়র্কের ফ্লাশিং মিডোস করোনা পার্কের কুইন্স থিয়েটারের মিলনায়তনে বসে ঢালিউড ফিল্ম অ্যান্ড মিউজিক অ্যাওয়ার্ডসের ২৪তম আসর। সেখানে দেশ ও প্রবাসের ২৭ জন শিল্পী-কলাকুশলীকে ঢালিউড ফিল্ম অ্যান্ড মিউজিক অ্যাওয়ার্ড দেয়া হয়। এছাড়াও তিনি প্রতি বছর বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও পিঠা মেলার আয়োজন করতেন।
সাংস্কৃতিক অঙ্গনের বিশিষ্টজনেরা জানান, বাংলাদেশের চলচ্চিত্র, টিভি ও সঙ্গীতাঙ্গনের শিল্পীদের যুক্তরাষ্ট্রে উড়িয়ে নিয়ে গিয়ে ২৪ বছর একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা চাট্টিখানি কথা নয়। বাংলাদেশ থেকে দুই ডজনের বেশি শিল্পী এনে আটলান্টিকের এপারে অনুষ্ঠান করা অত্যন্ত ব্যয়বহুল ও কষ্টসাধ্যও বটে। আর সেই কাজটি টানা ২৪ বছর নিরলসভাবে করেছেন আলমগীর খান আলম।