সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪

শিরোনাম

৭ এপ্রিল স্বাস্থ্য দিবস: সরকারের সাফল্য

শুক্রবার, এপ্রিল ৭, ২০২৩

প্রিন্ট করুন

ডাক্তার মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী: ৭ এপ্রিল (শুক্রবার) বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস-২০২৩। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে ‘সবার জন্য স্বাস্থ্য’। এটি ফোকাস করার পাশাপাশি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) ৭৫তম বার্ষিকী পালন করবে জনস্বাস্থ্যের উন্নতির ৭৫ বছর থিমের অধীনে। ১৯৪৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে জাতিসংঘ অর্থনীতি ও সমাজ পরিষদ আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে সম্মেলন ডাকার সিদ্ধান্ত নেয়। একই বছর জুন ও জুলাই মাসে আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় এবং হু’র সাংগঠনিক আইন গৃহীত হয়। ১৯৪৮ সালের ৭ এপ্রিল এ সংগঠন আইন আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যকর হয় এবং এ দিন বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস বলে নির্ধারিত হয়। প্রতি বছর সংস্থাটি এমন একটি স্বাস্থ্য ইস্যু বেছে নেয়, যা বিশেষ করে সারা পৃথিবীর জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। সে দিন স্থানীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে পালিত হয় এ দিবসটি। ১৯৫০ সালে ৭ এপ্রিল প্রথম বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস পালন করা হয়।

দিবসের তাৎপর্য: ‘স্বাস্থ্যই সম্পদ, স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল’। পৃথিবীর মানুষের স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নশীল হওয়া উচিত, সেটার গুরুত্ব উপলব্ধি জন্য দিবসটি পালনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে হু কর্তৃক ১৯৫০ সালে প্রথম বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস পালন করা হয়। সকলকে সমান গুণগতমানের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত পরিষেবা দিতে হু বদ্ধ পরিকর। হু প্রতি বছর এমন একটি প্রতিপাদ্য বিশ্ববাসীর সামনে নিয়ে আসে, যা বিশ্বব্যাপী জনস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৫০ সালের বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল ‘নো ইউর হেলথ সার্ভিসেস। এর অর্থ নিজের স্বাস্থ্য সেবা সম্পর্কে সচেতন হোন। এভাবে গত ৭১ বছর ধরে প্রতি বছর ৭ এপ্রিল বিশ্বজুড়ে পালিত হচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস। বিশ্ব গত দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে করোনা ভাইরাস নামের অদৃশ্য শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে যাচ্ছে এবং বিশ্বজুড়ে সব সেক্টরেই কঠোরভাবে আঘাত করেছে এ প্রাণণঘাতী করোনাভাইরাস। এখন পর্যন্ত সারা বিশ্বে প্রায় ৪৯ কোটি ৫০ লক্ষাধিক মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে এবং প্রায় ৬২ লক্ষাধিক মানুষ এ প্রাণণঘাতী ভাইরাসে মৃত্যুবরণ করেছেন। বাংলাদেশে এ পর্যন্ত প্রায় নয় লাখ ৫২ হাজার আক্রান্ত ও মৃত্যুবরণ করেছে প্রায় ২৯ হাজার ২০০ জন।

এসডিজি অর্জনে স্বাস্থ্য খাতের সাফল্য: স্বাস্থ্য বিষয়ক এসডিজি অর্জনে বাংলাদেশের বেশ অগ্রগতি হয়েছে। দেশের সর্বত্র বিস্তারে লাভ করেছে ডিজিটাল স্বাস্থ্য সেবা নেটওর্য়াক। এসডিজিতে ১৭টি লক্ষ্যমাত্রা, ৪৭টি সূচক ও ১৬৯টি সহযোগী লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হয়েছে। এসডিজির মেয়াদ ২০১৬-২০৩০ সাল পর্যন্ত। সব বয়সী সব মানুষের জন্য সুস্বাস্থ্য ও কল্যাণ নিশ্চিতকরণ।

অভীষ্ট ৩-এর লক্ষ্যমাত্রা: ৩.১-২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী মাতৃমৃত্যুর অনুপাত প্রতি এক লাখে জীবিত জন্মে ৭০’র নিচে নামিয়ে আনা। ৩.২-২০৩০ সালের মধ্যে নবজাতক ও অনূর্ধ্ব ৫-বছর বয়সী শিশুর প্রতিরোধযোগ্য মৃত্যু বন্ধের পাশাপাশি সব দেশের লক্ষ্য হবে প্রতি এক হাজার জীবিত জন্মে নবজাতকের মৃত্যু হার কমপক্ষে ১২-তে এবং প্রতি এক হাজার জীবিত জন্মে অনূর্ধ্ব ৫-বয়সী শিশুমৃত্যুর হার কমপক্ষে ২৫-এ নামিয়ে আনা। ৩.৩-২০৩০ সালের মধ্যে এইডস, যক্ষা রোগ, ম্যালেরিয়া ও উপেক্ষিত গ্রীষ্মমন্ডলীয় রোগসমূহের মহামারীর অবসান ঘটানো এবং হেপাটাইটিস, পানিবাহিত রোগ ও অন্যান্য সংক্রামক ব্যাধির মোকাবেলা করা। ৩.৪-প্রতিরোধ ও চিকিৎসার মাধ্যমে ২০৩০ সালের মধ্যে অসংক্রামক রোগের কারণে অকাল মৃত্যু এক-তৃতীয়াংশে কমিয়ে আনা এবং মানসিক স্বাস্থ্য ও কল্যাণ নিশ্চিতে সহায়তা করা। স্বাস্থ্য বিষয়ক টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে বাংলাদেশের প্রশংসনীয় অগ্রগতি হয়েছে। গত ২১ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের এসডিজি অগ্রগতি পুরস্কার পেয়েছেন শেখ হাসিনা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘স্বাস্থ্য সেক্টরের এসডিজি অর্জনের অনেক ইতিবাচক উপসর্গ ইতিমধ্যে দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে। দেশের সর্বত্র বিস্তার লাভ করেছে ডিজিটাল স্বাস্থ্য সেবার নেটওয়ার্ক। স্বাধীনতার পর গত ৫০ বছরে দেশের প্রতিটি সূচকে বাংলাদেশের অভাবনীয় সাফল্য মিলেছে। শূন্য থেকে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুর মৃত্যু হার কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাফল্যকে ইতিমধ্যে স্বীকৃতি দিয়েছে জাতিসংঘ শিশু তহবিল (ইউনিসেফ)। শিশু মৃত্যুহার হ্রাসে সাফল্যের জন্য শেখ হাসিনা এমডিজি অ্যাওয়ার্ড-২০১০ অর্জন করেছেন।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মা ও শিশু মৃত্যু হার কমানোর কৌশলপত্রের তথ্য মতে, ২০০৯ সালে প্রতি লাখ সন্তান প্রসবে মাতৃ মৃত্যু হার ছিল ২৫৯ জন। সম্প্রতি সংখ্যাটা কমে দাঁড়িয়েছে ১৬৫ জনে। গত দশ বছরে মাতৃ মৃত্যু হার কমেছে প্রতি লাখ জীবিত জন্মে প্রায় ৯৪ জন। শিশু মৃত্যু হার হ্রাসে ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। শূন্য থেকে পাঁচ বছরের কম বয়সি শিশুর মৃত্যু হার কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাফল্যকে ইতিমধ্যে জাতিসংঘ শিশু তহবিল (ইউনিসেফ) স্বীকৃতি দিয়েছে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের টার্গেট নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ। সরকারের লক্ষ্য ২০৩০ সালের মধ্যে মাতৃমৃত্যু প্রতি হাজারে ৫০ জনের নিচে নামিয়ে আনা।

পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘এসডিজি অনুযায়ী, আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে শূন্য থেকে এক মাস বয়সি শিশু মৃত্যু হার প্রতি হাজারে ১২ জনে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। তবে, শূন্য থেকে পাঁচ বছর বয়সী শিশু মৃত্যু হার প্রতি হাজারে ৩৮ জন। এ দিকে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ২০৩৫ সালের মধ্যে জীবিত জন্মানো শিশু মৃত্যু হার প্রতি হাজারে ২০ জনে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। বাংলাদেশ জনমিতি ও স্বাস্থ্য জরিপ ২০১৭-১৮ (বিডিএইচএস) প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, শিশুপুষ্টির সূচকে দেশ উন্নতি করেছে।

সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘স্বাধীনতার পর থেকেই মাতৃস্বাস্থ্য, পরিবার পরিকল্পনা, শিশুপুষ্টি এসব বিষয়ে সরকার গুরুত্ব দিয়েছিল। দেশের সংবিধানে, বিভিন্ন সময়ে নেয়া পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা, স্বাস্থ্যনীতি ও সর্বশেষ স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি খাত কর্মসূচিতে এসব বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে বিশেষ বরাদ্দ রাখা হয়।’

বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেন বার্ষিক গ্লোবাল চাইল্ড হুড রিপোর্ট ২০১৯ শীর্ষক প্রতিবেদনে দেখা যায়, দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত ও নেপালে গত দুই দশকে শিশুমৃত্যুর সংখ্যা অনেক হ্রাস পেয়েছে। চারটি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি অগ্রগতি অর্জন করেছে, যেখানে ভুটানের শিশু মৃত্যু হার কমেছে ৬০ শতাংশ, নেপালে ৫৯ শতাংশ ও ভারতের ৫৭ শতাংশ। আর বাংলাদেশে শিশু মৃত্যুর হার কমিয়েছে ৬৩ শতাংশ।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘সরকার মাতৃ ও শিশু মৃত্যু রোধে সকল সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করেছে। আর এ কারণেই দেশে মাতৃ ও শিশুমৃত্যু উভয়ই কমেছে। ২০১৭ সালে গর্ভকালীন মাতৃমৃত্যুর হার প্রতি লাখে ১৭৬ জন থাকলেও বর্তমানে তা ১৭২ জন। এ ছাড়া, ২০১৫ সালে প্রতি হাজার নবজাতকের মধ্যে মৃত্যু হার ২০ জন থাকলেও বর্তমানে তা হ্রাস পেয়ে ১৮ দশমিক চার ভাগে দাঁড়িয়েছে।’

হুর কর্মসূচী পালনে স্বাস্থ্য খাতের অবদান: হু প্রতি বছর এমন একটি প্রতিপাদ্য বিশ্ববাসীর সামনে নিয়ে আসে, যা বিশ্বব্যাপী জনস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৫০ সালের বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল ‘নো ইউর হেলথ সার্ভিসেস’ এর অর্থ নিজের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন হোন। এভাবে গত ৭৩ বছর ধরে ৭ এপ্রিল বিশ্বজুড়ে পালিত হচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস।

শিশু মৃত্যু হার ও মাতৃ মৃত্যু হার নিয়ন্ত্রণে সাফল্য: সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচী একটি সফল কর্মসূচী। কর্মসূচীর কারণে মাতৃমৃত্যু হার ও শিশুমৃত্যু হার রোধ হয়েছে। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার সময় বাংলাদেশে শিশুমৃত্যু হার ছিল ১৪১, যা বর্তমানে ২১ জনে উন্নীত হয় অর্থাৎ শিশু মৃৃত্যুহার কমেছে ৮৫ শতাংশ। অন্য দিকে, ২০০৯ সালে জীবিত সন্তান প্রসবকালে প্রতি এক লাখ মায়ের মধ্যে ২৬৯ জন মারা যেতেন। এখন সেটা কমে দাঁড়িয়েছে ১৬৫ জনে। গত দশ বছরে মাতৃ মৃত্যুহার কমেছে প্রতি লক্ষ জীবিত জম্মে ৯৪ জন। সরকারের লক্ষ্য হচ্ছে, ২০৩০ সালের মধ্যে মাতৃমৃত্যু প্রতি হাজারে ৫০ জনে কমিয়ে আনা। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ২০৩৫ সালের মধ্যে জীবিত জম্ম শিশু মৃত্যুহার প্রতিহাজারে ২০ জনে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। শিশুমৃত্যু হার হ্রাসে ভারত ও পাকিস্তান থেকে এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। শিশু মৃত্যুহার কমিয়ে আনার জন্য ইউনিসেফ বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছে।

করোনা ভাইরাস মহামারীর প্রেক্ষাপটে এ দিবসের গুরুত্ব: অতিমারী করোনা ভাইরাস পুরো বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছে সবার জন্য একিভূত সমঅধিকারে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার কত প্রয়োজন। করোনা বলে দিয়েছে, ধনী-দরিদ্র, শিশু-বৃদ্ধ, পুরুষ-মহিলা, জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে কেউই মহামারী থেকে আলাদা ছিলেন না। সুতরাং, এবারের প্রতিপাদ্য ‘সবার জন্য স্বাস্থ্য’ আমি মনে করি যুক্তিযুক্ত হয়েছে। এসডিজি’স অর্জনে স্বাস্থ্য খাতের অবদান আজ সবার কাছে পরিস্কার। মাতৃমৃত্যু, শিশুমৃত্যু হারের উন্নতি আমরা অনেক আগে অর্জন করেছি। বর্তমান সরকার ভবিষ্যতে এ সাফল্য ধরে রেখে তা আরো শুন্যের কৌটায় নামিয়ে আনার চেষ্টা করেছে।

করোনা নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ সরকারের সাফল্য ও টিকাদান কর্মসূচী চলমান থাকবে: শেখ হাসিনার দিকনির্দেশনায় বাংলাদেশ বেশ ভালভাবেই করোনাকে সামাল দিতে সক্ষম হয়েছেন। করোনা মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করে এবং করোনা ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রমে সারা বিশ্বে পঞম স্থান অর্জন করেছে।

উল্লেখ করা প্রয়োজন, বাংলাদেশে ১০০ শতাংশ মানুষকে প্রথম ডোজ, ৮৭ শতাংশ জনগণকে দ্বিতীয় ডোজ, ৫৪ শতাংশ জনগণকে তৃতীয় ডোজ এবং ৬০’র উর্ধ্বে ও ফ্রন্টলাইনারদের চতুর্থ ডোজের আওতায় আনা হয়েছে। তবে, একথা সত্য, তার নিরলস পরিশ্রম ও অদম্য মনোবলের কারণে বিশ্বের অনেক উন্নত দেশের আগেই করোনা মোকাবিলায় বাংলাদেশ ইতিবাচক সাফল্য অর্জন করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের জনসংখ্যা প্রায় ৩৪ কোটি, যেখানে বাংলাদেশে জনসংখ্যা মাত্র ১৭ কোটি। করোনায় যুক্তরাষ্ট্রে এ পর্যন্ত মারা গেছে প্রায় নয় লাখ মানুষ, সেখানে বাংলাদেশে মারা গেছে ২৯ হাজার। আয়তনের দিক দিয়েও বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় অনেক ছোট। সে তুলনায় করোনা মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে বাংলাদেশ অনেক ভাল অবস্থানে আছে। জার্মানির আয়তন বাংলাদেশের প্রায় তিনগুণ আর জনসংখ্যা বাংলাদেশের অর্ধেক। অপর দিকে, নিউজিল্যান্ডের আয়তন বাংলাদেশের দ্বিগুণ আর জনসংখ্যা বাংলাদেশের প্রায় পঁয়ত্রিশ ভাগের এক ভাগ। সে হিসাবে বলা যায়, করোনা মোকাবিলায় বাংলাদেশের তুলনায় উল্লেখিত দেশ তিনটির কাজ সহজ ছিল। মূলত সীমিত আয়তন ও বিপুল জনসংখ্যার বাংলাদেশের দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে শেখ হাসিনা অত্যন্ত দৃঢ়চিত্তে তা মোকাবিলা করে চলেছেন। কিছু দিন আগে গণটিকা কর্মসূচিতে এক দিনে প্রায় এক কোটি ২০ লাখ মানুষকে টিকা দেয়া হয়েছে। এত বিপুলসংখ্যক মানুষকে এক দিনে টিকা দেয়া সম্ভব হয়েছে একমাত্র প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণে। বিশ্বের ১১৭টি দেশের মধ্যে ৪২টি দেশে জনসংখ্যার পরিমাণ এক কোটি ২০ লাখ। যেখানে ৪২টি দেশে সর্বমোট জনসংখ্যাই এক কোটি ২০ লাখ, সেখানে বাংলাদেশ সরকার এক দিনে এক কোটি ২০ লাখ মানুষকে টিকা দিয়ে বিশ্বের মধ্যে অন্যতম দেশ হিসাবে সক্ষমতার পরিচয় দিয়েছি। করোনা অতিমারী চলাকালীন সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচী চালু থাকার কারণে মা ও শিশুরা অকাল মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে। সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচীতে করোনা টিকা একিভূত করে চালু রাখার প্রাথমিক পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে।

নন-কমিউনিকেবল ডিজিজ নিয়ন্ত্রণে সরকারের কর্মসূচী: বর্তমানে অসংক্রামক রোগ একটি গুরুত্বপূর্ণ ও জরুরী জনস্বাস্থ্য সমস্যা। বর্তমান বিশ্বে রোগের প্রকোপ সংক্রামক থেকে অসংক্রামক দিকে ঝুকে যাচ্ছে। পৃথিবীর মোট মৃত্যুর ৬৮ ভাগ ঘটে অসংক্রামক রোগের কারণে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সেবা বিভাগের তত্বাবধানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে একটি অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচী (এনসিডিসি) শাখা রয়েছে। একজন পরিচালক পদ মর্যাদা লাইন ডাইরেক্টর এ শাখার নেতৃত্ব দেন। বর্তমানে দেশের প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এনসিডি কণার্র চালুর মাধ্যমে ডায়াবেটিক, উচ্চ রক্তচাপ, স্টোক, অতিরিক্ত ওজন নিয়ন্ত্রণ, চক্ষু চিকিৎসা, অন্ধত্ব দূরীকরণ, কৃমি নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি জনকল্যাণমূখী স্বাস্থ্য সেবা চালু করা হয়েছে। অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচী (এনসিডিসি) রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের জন্য ২০১৮-২০২৫ একটি বহু খাত ভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা নিয়েছে, যা সময় উপযোগী পদক্ষেপ। যার উদ্যেগের মধ্যে- এডভোকেসী, তামাকের হ্রাস, মাদকের ব্যবহার হ্রাস,স্বাস্থ্যকর খাদ্যেভাসের প্রসার, কায়িক পরিশ্রমের প্রসার, স্বাস্থ্যকর স্থাপনার প্রসার ও গৃহস্থিত বায়ু দূষণের বিস্তার হ্রাস।

স্বাস্থ্য খাতে জাতির পিতা ও প্রধানমন্ত্রীর অবদান: শেখ মুজিবুর রহমানের ভাবনা ছিল একটি সমৃদ্ধ দেশ গড়তে হলে প্রয়োজন স্বাস্থ্যবান জাতি। এ লক্ষ্যে স্বাস্থ্য খাতকে শুধু গুরুত্ব দিয়েই ক্ষান্ত হননি, ব্যাপক সময়োপযোগী পদক্ষেপ নিয়েছিলেন তিনি। তৃণমূল পর্যায়ে স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছে দেয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। সেই লক্ষ্যে গৃহীত দশ শয্যার থানা স্বাস্থ্য কেন্দ্র বিশ্বে আজো সমাদৃত মডেল।

চিকিৎসক ও চিকিৎসা খাতে বঙ্গবন্ধুর উল্লেখযোগ্য অবদান: সংবিধানে স্বাস্থ্য ও পুষ্টিসেবা মৌলিক অধিকার এবং রাষ্ট্রের কর্তব্য হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান। আইপিজিএমআর (সাবেক পিজি) হাসপাতালকে পূর্ণাঙ্গ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল হিসেবে স্থাপন। এ প্রতিষ্ঠান থেকে চিকিৎসকরা পোস্টগ্র্যাজুয়েশন করে থাকেন। এ সঙ্গে প্রতি বছর লাখ লাখ রোগীকে উচ্চ মানসম্পন্ন চিকিৎসা দেয়া হয়। বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ান অ্যান্ড সার্জন্স (বিসিপিএস) প্রতিষ্ঠা। এ প্রতিষ্ঠান থেকে চিকিৎসকদের ফেলোশিপ দেয়া হয়। স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা। ১৯৭৩ সালে প্রণীত প্রথম পঞ্চ বার্ষিক পরিকল্পনায় স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনাকে অধিকতর গুরুত্ব প্রদান। ১৯৭৪ সালে জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা। ১৯৭৫ সালের ২৩ এপ্রিল ‘বাংলাদেশ পুষ্টি পরিষদ’ গঠনের আদেশে সই করেন শেখ মুজিবুর রহমান। বাংলাদেশ মেডিক্যাল রিসার্চ কাউন্সিল প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। চিকিৎসকদের সরকারি চাকরিতে প্রথম শ্রেণির মর্যাদা প্রদান। আগে যা দ্বিতীয় শ্রেণির পদমর্যাদায় ছিল। নার্সিংসেবা ও টেকনোলজির উন্নয়নে সংশ্লিষ্ট ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা। উন্নয়নশীল দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার মূল নীতি হল- ‘প্রিভেনশন ইজ বেটার দেন কিউর’-এ নীতিকে বাস্তবায়ন করার জন্য শেখ মুজিবুর রহমানের পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রতিষ্ঠিত হয় ‘নিপসম’ নামের প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানে রোগ, রোগতত্ত ও রোগের প্রতিকার বিষয়ক গবেষণা ও প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) এবং ঢাকা শিশু হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা।

শেখ হাসিনার উল্লেখযোগ্য অবদান: শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য সেবার অবকাঠামো বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশের মডেল হয়ে দাঁড়িয়েছে। জনবল বৃদ্ধি, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্যে হ্রাস ঔষধের সরবরাহ বৃদ্ধি পেয়েছে। জনগণের দোড়গোড়ায় স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে তিনি কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৯৬ সালে প্রথম বারের মত ক্ষমতায় এসে প্রধানমন্ত্রী দেশের প্রতি ছয় হাজার গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জন্য একটি করে কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। দেশে এ পর্যন্ত ১৩ হাজার ৫০০টি কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠা করেন প্রধানমন্ত্রী। যা পূর্ব এশিয়াতে অনেক সরকার প্রধানের ঈর্ষণীয় কর্মসূচী। কমিউনিটি ক্লিনিকে ৩০ ধরণের ওধুধ বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়ে থাকে। প্রতি মাসে প্রায় ৯০ লক্ষ মানুষ কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে সেবা নেন। চট্টগ্রাম জেলায়ও ৫৩৭টি কমিউনিটি ক্লিনিক চালু আছে। স্বাস্থ্য খাতে ডিজিটাল বাংলাদেশ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে নানাবিধ উন্নয়নের উদ্যেগ নিয়েছে। দেশের ৯৯ শতাংশ উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিষেবার আওতায়। ৯১ দশমিক তিন শতাংশ শিশুকে সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচীর আওতায় আনা হয়েছে। স্বীকৃতি স্বরুপ আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন পদক ও পুরস্কার প্রাপ্ত পান প্রধানমন্ত্রী। বর্তমান সরকারের আমলে বাংলাদেশকে পোলিও ও ধনুষ্টংকার মুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। দেশব্যাপী ব্যাপকভিত্তিক স্বাস্থ্যসেবা নেটওর্য়াক গড়ে তোলা হয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন স্নোগান নয়। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে এর সুবিধা পৌঁছে গেছে। দেশের সব হাসপাতালে শয্যার সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। নতুন মেডিকেল কলেজ, ডেন্টাল কলেজ, হেলথ টেকনোলজী প্রতিষ্ঠান, নাসির্ং কলেজ ও নাসিংক ট্রেনিং ইনস্টিটিউট স্থাপন করেছেন। ডাক্তার নার্সসহ স্বাস্থ্য সেবার প্রতিটি ক্ষেত্রে জনবল বাড়ানো হয়েছে। অনুর্ধ্ব পাঁচ বছর বয়সীর শিশুর ওজন হার ৩৬ দশমিক চার ভাগে নেমেছে ও অনুর্ধ্ব পাঁচ বছর বয়সী শিশুমৃত্যু হার ৭১ ভাগ। মাতৃস্বাস্থ্যের হার তিন দশমিক ৭৬ (প্রতি হাজার জীবিত জম্মে)। পুরোদমে এগিয়ে চলছে স্বাস্থ্য খাতে ডিজিটাল বাংলাদেশের কার্যক্রম। ওয়ার্ড পর্যায়ের সব কর্মীর জন্য ট্যাব কম্পিউটার বিতরণ করা হয়েছে ও সেবাদান অনলাইন ভিত্তিক। গ্রাম পর্যায়ের সব স্বাস্থ্য সেবা অনলাইনে মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। প্রতিটি উপজেলা ও জেলা হাসপাতালে ইন্টারনেট সংযোগ চালুমহ ভিডিও কনফারেন্সিং ব্যবস্থা, ডিজিটাল হাজিরার মাধ্যমে চিকিৎসক ও অন্যান্য কর্মীদের উপস্থিতি পর্যবেক্ষণ, টেলি মেডিসিন সেবা (বিশেষজ্ঞ ডাক্তার সেবা), জিপিআরএস সিস্টেম ও কম্পিউটারইজ অটোমেশন ব্যবস্থা, বৈকালিক স্বাস্থ্য সেবা চালু, ২৪ ঘন্টা মোবাইল ফোনে স্বাস্থ্যসেবা, প্রতিটি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে নিজস্ব ওয়েবসাইট ব্যবস্থা, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ফ্রি চিকিৎসা সেবা, হাসপাতালে কেবিন ও সীট সংরক্ষিত রাখা ও উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা। গর্ভবতীদের মহিলাদের জন্য ফ্রি এ্যাম্বুলেন্স সেবা ও প্রাতিষ্ঠানিক ডেলিভারী বৃদ্ধি। শেখ হাসিনার সরকারের অন্যতম অর্জন স্বাস্থ্য খাতে একটি জাতীয় স্বাস্থ্যনীতি প্রণয়ন। একইভাবে হালনাগাদ করা হয়েছে জাতীয় ওষুধনীতিও। বর্তমানে দেশের চাহিদার সিংহভাগ পূরণ করার পাশাপাশি বিশ্বের শতাধিক দেশে আমাদের ওষুধ রপ্তানি করা হচ্ছে। পাশাপাশি দেশের বিদ্যমান সরকারী স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানগুলো নিরবচ্ছিন্নভাবে চিকিৎসা প্রাপ্তি নিশ্চিত করার তাগিদে বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারের মাধ্যমে নিয়োগ দেয়া হয়েছে চিকিৎসক। ঢেলে সাজানো হয়েছে দেশের স্বাস্থ্য প্রশাসনকে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি বিভাগকে দুটি বিভাগে রূপান্তরিত করার মাধ্যমে প্রশাসনিক কার্যক্রমে গতিশীলতা আনা হয়েছে। নিয়মিত পদোন্নতির ব্যবস্থা করা হয়েছে স্বাস্থ্য প্রশাসক ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের।

বৃদ্ধি করা হয়েছে প্রান্তিক পর্যায়ে কর্মরত চিকিৎসক ও চিকিৎসা প্রশাসকদের আবাসন, পরিবহনসহ অন্যান্য সুবিধাদি। শেখ মুজিবুর রহমান চিকিৎসকদের প্রথম শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তার মর্যাদা দিয়েছিলেন আর শেখ হাসিনা দেশের নার্সদের দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তায় উন্নীত করেন। এ সরকারের আমলে দেশে অসংখ্য নতুন বিশেষায়িত হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এরই মধ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি, নিউরোসাইন্স, গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি, ইএনটিসহ একাধিক ন্যাশনাল পোস্টগ্র্যাজুয়েট ইন্সটিটিউট। কুর্মিটোলা, মুগদা, ঢাকা ডেন্টাল কলেজ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ ইউনিট-২, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ ইউনিট-২, শেখ ফজিলাতুন্নেছা চক্ষু হাসপাতাল ইত্যাদি নতুন হাসপাতাল শেখ হাসিনার সরকারেরই অর্জন। নতুন শয্যা সংযোজন আর আধুনিকায়নের মাধ্যমে সেবার সক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে জাতীয় হৃদরোগ, কিডনী, মানসিক স্বাস্থ্য এবং শিশু ও মাতৃস্বাস্থ্য, অর্থপেডিক ইনস্টিটিউট আর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল আর আজিমপুরের মা ও শিশু হাসপাতালসহ অসংখ্য হাসপাতালের। পাইপ লাইনে আছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল এবং জাতীয় লিভার ও ফিজিক্যাল মেডিসিন ইন্সটিটিউটের মত অতি প্রয়োজনীয় হাসপাতালগুলো। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ২৪টি নতুন সরকারি মেডিকেল কলেজ আর এগুলো স্থাপিত হয়েছে জেলায় জেলায়। এর ফলে ভবিষ্যতে চিকিৎসার জন্য এ দেশে চিকিৎসকের ঘাটতি জনিত হাহাকার যে আর থাকবে না, তা নিশ্চিত করেই বলা যায়। পাশাপাশি চিকিৎসকদের আন্তর্জাতিক মানের বিশেষজ্ঞ হিসেবে গড়ে তোলা আর দেশে চিকিৎসা ক্ষেত্রে গবেষণার প্রসারের জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে। আর চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও সিলেটে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে নতুন পাবলিক মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়। ক্ষমতায় ফিরে এসে দেশের অবশিষ্ট বিভাগগুলোতেও মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। স্বাস্থ্য খাত বাদ যায়নি প্রধানমন্ত্রীর ডিজিটালাইজেশনের সুফল থেকে। দেশের কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে শুরু করে জাতীয় ইন্সটিটিউট পর্যন্ত সব হাসপাতালে ইন্টারনেট সংযোগ দেয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে প্রবর্তন করা হয়েছে ই-গর্ভনেন্স ও ই-টেন্ডারিং। সরকারি হাসপাতালগুলোকে সদ্যই আনা হচ্ছে অটোমেশনের আওতায়। দেশব্যাপী চিকিৎসা ক্ষেত্রে যে বিপুল অর্জন তার স্বীকৃতিতে ভুল করেননি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। তার আরো অসংখ্য আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির পাশাপাশি স্বাস্থ্য খাতে অর্জিত সাউথ সাউথ এওয়ার্ড, এমডিজি ফোর এওয়ার্ড ইত্যাদিও আমাদের রাষ্ট্রীয় তোষাখানা জাদুঘরকে আলোকিত করে রাখবে।

প্রধানমন্ত্রী যে শুধু স্বপ্ন দেখেন, স্বপ্ন দেখান আর স্বপ্ন পূরণ করেন তাই নয়, তিনি দেখেন বহুদূর, তার দৃষ্টি এখন রূপকল্প ২০২১, স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ, ভিশন ৪১ ছাড়িয়ে ডেলটা প্ল্যান ২১০০’তে প্রসারিত।

লেখক: সিভিল সার্জন, চট্টগ্রাম জেলা, চট্টগ্রাম।