চট্টগ্রাম: জাতীয় কৃমি নিয়ন্ত্রণ সপ্তাহ (৭-১২ জানুয়ারি) উপলক্ষে সোমবার (২ জানুয়ারি) সকালে সিটির আন্দরকিল্লাস্থ চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের অডিটরিয়ামে জেলা পর্যায়ের এডভোকেসী সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার ফাইলেরিয়াস নির্মূল, কৃমি নিয়ন্ত্রণ ও ক্ষুদে ডাক্তার কার্যক্রমের বাস্তবায়নে জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় এ সভার আয়োজন করে।
চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডাক্তার মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও জেলা স্বাস্থ্য তত্বাবধায়ক সুজন বড়ুয়ার সঞ্চালনায় সভায় মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়। সভায় বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ফরিদুল আলম হোসাইনী, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. শহীদুল ইসলাম, লোহাগাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার মোহাম্মদ হানিফ, সীতাকুণ্ড উপজেলা স্বাস্থ্য ও প. প. কর্মকর্তা ডাক্তার মোহাম্মদ নূর উদ্দিন, কর্ণফুলী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বাবুল চন্দ্র নাথ ও পটিয়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আবু আহমেদ।
সভায় বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য ও প. প. কর্মকর্তা, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, প্রতিনিধি, শিক্ষক, স্যানিটারী পরিদর্শক, স্বাস্থ্য পরিদর্শক, স্বাস্থ্য কর্মী, মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট, ইপিআই কর্মকর্তা, পরিবার পরিকল্পনা কর্মী ও কৃমি নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে নিয়োজিত কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
এবার চট্টগ্রাম জেলার ১৫ উপজেলায় ৫-১৬ বছর বয়সী শিক্ষার্থী ও অন্যান্য মিলে ১৪ লাখ ৮৩ হাজার ৩১৩ জনকে এক ডোজ করে কৃমি নাশক ট্যাবলেট ‘মেবেন্ডাজল-৫০০ মিলি গ্রাম’ খাওয়ানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়।
সভায় মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী বলেন, ‘আগামী ৭-১২ জানুয়ারি পর্যন্ত সপ্তাহব্যাপী অনুষ্ঠিত হবে ২৭তম জাতীয় কৃমি নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচী। জেলার প্রত্যেক উপজেলার ৫-১৬ বছর বয়সী প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থী, বিদ্যালয় বহির্ভূত, ঝড়ে পড়া পথ শিশু, শ্রমজীবী শিশু ও বেদে পরিবারের শিশুসহ সব শিশুকে এক ডোজ কৃমি নাশক ট্যাবলেট ‘মেবেন্ডাজল-৫০০ মিলি গ্রাম’ খাওয়ানো হবে। এটি চুষে খাবার ট্যাবলেট নয়, ভরা পেটে পানি দিয়ে গিলে খাওয়াতে হবে। কোন শিশু পুরো ট্যাবলেট গিলে খেতে অসমর্থ হলে তাকে জোর না করে অন্য ট্যাবলেট ভেঙ্গে টুকরা টুকরা করে গিলে খাওয়ানো যেতে পারে। এ কর্মসূচী সফল করতে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে সব শিক্ষক, শিক্ষা কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্টদেরকে আন্তরিকভাবে কাজ করতে হবে। একইসাথে গণ মাধ্যমসহ সর্বত্র ব্যাপক প্রচার-প্রচারণার ব্যবস্থা করা হবে। জেলা প্রশাসন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি বা স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধিদের সাথে পরামর্শক্রমে জাতীয় কৃমি নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচী সফল করার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া হবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে আেমাদের সবাইকে সুস্থ থাকতে হবে। গত চার মাস আগে যারা করোনা টিকার তৃতীয় ডোজ নিয়েছেন, তাদের ক্ষেত্রে টিকার চতুর্থ ডোজ গ্রহণ অত্যন্ত জরুরী, কোন অবস্থাতেই অবহেলা করা যাবে না। ওমিক্রন বিএফ- সাত নামে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট থেকে রক্ষা পেতে আমাদের প্রত্যেককে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।’
ইলিয়াছ চৌধুরী বলেন, ‘শিশুদের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে তৃতীয় থেকে দশম শ্রেণির শিক্ষাথীদের মধ্যে থেকে বাচাই করে ক্ষুদে ডাক্তার টিম গঠন করা হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ল প্রধান শিক্ষক বা শ্রেণি শিক্ষকের পরামর্শ নিয়ে শিক্ষার্থীদের ওজন মাপানো, উচ্চতা নিধারণ, দৃষ্টিশক্তি ও পুষ্টিহীনতা নির্ণয়সহ স্বাস্থ্য পরীক্ষায় তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। নিজেরা নিজের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সজাগ থাকার পাশাপাশি পরিবার ও সমাজকে এ বিষয়ে সচেতন করবে। স্বাস্থ্য কর্মীরা নির্দিষ্ট সময়ে বিদ্যালয়গুলো পরিদর্শনের মাধ্যমে ক্ষুদে ডাক্তারদের কার্যক্রম তদারকি করবে। একই সাথে স্বাস্থ্য পরীক্ষার তালিকা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার জন্য সংশ্লিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠাতে প্রতিষ্ঠান প্রধানকে আন্তরিক থাকতে হবে। উপজেলা স্বাস্থ্য ও প. প. কর্মকর্তা ও স্বাস্থ্য পরিদর্শকগণকেও এ বিষয়ে সুদৃষ্টি রাখতে হবে। সকলের আন্তরিক সহযোগিতায় তৃণমূল পর্যায় থেকে কৃমি নিয়ন্ত্রণ ও ক্ষুদে ডাক্তার কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে পারলে স্বাস্থ্য বিভাগের কার্যক্রমে ঈর্ষণীয় সাফল্য আসবে।’