শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪

শিরোনাম

গাজার আল-শিফা হাসপাতাল একটি ‘ডেথ জোন’

রবিবার, নভেম্বর ১৯, ২০২৩

প্রিন্ট করুন

জেনেভা, সুইজারল্যান্ড: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও) বলেছে, ‘সংস্থাটি গাজা শহরের আল-শিফা হাসপাতালের পরিস্থিতি মূল্যায়নে একটি মিশনের নেতৃত্ব দিয়েছে এবং এটিকে তারা একটি ‘মৃত্যু অঞ্চল’ বলে স্থির করেছে।’ একইসাথে হাসপাতালটির রোগী, স্বাস্থ্যকর্মী ও সুবিধা সম্পূর্ণ সরিয়ে নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।

রোববার (১৯ নভেম্বর) জাতিসংঘের এ স্বাস্থ্য সংস্থা বিবৃতিতে বলেছে, ‘ডাব্লিউএইচও এবং অংশীদাররা দ্রুত অবশিষ্ট রোগী, কর্মী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের সরিয়ে নেয়ার জন্য পরিকল্পনা তৈরি করছে।’

সংস্থা বলেছে, ‘হাসপাতালের ভিতরে এখনো ২৯১ রোগী ও ২৫ জন স্বাস্থ্যকর্মী রয়েছেন।’

ডাব্লিউএইচও বলেছে, ‘সংস্থাটি শনিবার (১৮ নভেম্বর) হাসপাতালে একটি সংক্ষিপ্ত ও ‘খুব উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ’ মিশনে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, লজিস্টিক অফিসার এবং বিভিন্ন সংস্থার নিরাপত্তা কর্মীসহ জাতিসংঘের একটি যৌথ দলের নেতৃত্ব দিয়েছে।’

ডাব্লিউএইচও জানিয়েছে, ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী এর আগে হাসপাতালের মাঠে আশ্রয় নেয়া প্রায় আড়াই হাজার বাস্তুচ্যুত মানুষকে সরিয়ে নেয়ার নির্দেশ দেয়ার পরে মূল্যায়ন দলটি আল-শিফায় গিয়েছিল।

কমপ্লেক্সের চারপাশে বিকট বিস্ফোরণের শব্দ শোনার পর ডাক্তার ও নার্সদের সাথে অসুস্থ, আহত, অঙ্গহানি হয়েছে- এমন রোগী ও বাস্তুচ্যুত মানুষদের অ্যাম্বুলেন্স ছাড়াই সমুদ্রের দিকে যেতে দেখা গেছে। এ দিকে, নিরাপত্তা পরিস্থিতির কারণে জাতিসংঘের মূল্যায়ন দল হাসপাতালের ভেতরে মাত্র এক ঘণ্টা সময় কাটাতে পেরেছিল।

ডাব্লিউএইচও দল, হাসপাতালটিকে ‘মৃত্যু অঞ্চল’ ও পরিস্থিতি ‘ভয়াবহ’ হিসাবে বর্ণনা করেছে।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘হাসপাতালটিতে শেলিং ও গুলির চিহ্ন স্পষ্ট ছিল। দলটি হাসপাতালের প্রবেশপথে একটি গণকবর দেখেছিল ও সেখানে ৮০ জনেরও বেশি লোককে কবর দেয়া হয়েছে।’

ডাব্লিউএইচও বলেছে, ‘ছয় সপ্তাহ ধরে বিশুদ্ধ পানি, জ্বালানি, ওষুধ, খাদ্য ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সাহায্যের অভাবের কারণে গাজার সবচেয়ে বড় ও সবচেয়ে উন্নত হাসপাতালটি মূলত একটি চিকিৎসা সুবিধা হিসেবে এর কাজ বন্ধ করে দিয়েছে।’

এতে বলা হয়, ‘করিডোর ও হাসপাতালের মাঠ চিকিৎসা ও কঠিন বর্জ্যে ভরা ছিল, যা সংক্রমণের মারাত্মক ঝুঁকি বাড়িয়ে দিয়েছে।’

ডাব্লিউএইচও বলেছে, ‘হাসপাতালে বাকি রোগীদের মধ্যে ‘অত্যন্ত গুরুতর অবস্থায়’ ৩২ জন শিশু ছিল।’

বায়ু চলাচল ছাড়াই নিবিড় পরিচর্যায় দুইজন ব্যক্তিও ছিলেন, ২২ জন ডায়ালাইসিস রোগী যাদের জীবন রক্ষাকারী চিকিৎসার সুবিধা মারাত্মকভাবে বাতিল করা হয়েছিল ও অনেকে ট্রমা শিকার।

ডাব্লিউএইচও জানিয়েছে, চিকিৎসা পরিষেবা বন্ধ থাকার কারণে’ গেল দুই থেকে তিন দিনে বেশ কয়েকজন রোগী মারা গেছেন।

জাতিসংঘের স্বাস্থ্য সংস্থা হাসপাতালের অবস্থা দেখে, দলটি স্বাস্থ্যকর্মী ও রোগীদের অন্যান্য সুবিধা অন্যত্র সরিয়ে নিতে বলেছে।

ডাব্লিউএইচওর প্রধান টেড্রোস আধানম গেব্রেইসাস এক্সে (সাবেক টুইটারে) বলেছেন, ‘আমরা একটি জরুরী স্থানান্তর পরিকল্পনা তৈরি করতে অংশীদারদের সাথে কাজ করছি ও এই পরিকল্পনার সম্পূর্ণ সুবিধার জন্য প্রয়োজনীয় সহযোগিতার ব্যাপারে জানতে চেয়েছেন।’

‘আমরা স্বাস্থ্য ও বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষার জন্য আহ্বান জানিয়ে যাচ্ছি’ এ কথা উল্লেখ করে ক্ষোভ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতি অসহনীয় ও অযৌক্তিক। যুদ্ধবিরতি চাই। এখনই চাই।’

ডাব্লিউএইচও বলেছে, ‘আগামী ২৪-৭২ ঘন্টার মধ্যে, নিরাপদ উত্তরণের গ্যারান্টি মুলতুবি থাকায়’

দক্ষিণ গাজার নাসের মেডিকেল কমপ্লেক্স ও ইউরোপীয় গাজা হাসপাতালে রোগীদের পরিবহনে সহায়তা করার জন্য অতিরিক্ত মিশন পাঠাবে। যদিও, এটি জোর দিয়েছিল যে, সেই হাসপাতালগুলো এরমধ্যেই ক্ষমতার বাইরে কাজ করছে ও নতুন রোগীর ‘আরো চাপে অতিরিক্ত স্বাস্থ্য কর্মী ও সংস্থানগুলো চাপের মধ্যে পড়বে।’

২০০৭ সাল থেকে গাজা শাসনকারী হামাস সরকার জানায়, ইসরায়েলের সেনাবাহিনীর অবিরাম বিমান ও স্থল অভিযানে ১২ হাজার ৩০০ লোকের মৃত্যু হয়েছে, যাদের অধিকাংশই বেসামরিক নাগরিক, যাদের মধ্যে পাঁচ হাজারেও অধিক শিশু রয়েছে।