শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪

শিরোনাম

বিশ্ব সংকটের কারণেই জ্বালানির দাম বাড়াতে হয়েছে

সোমবার, আগস্ট ৮, ২০২২

প্রিন্ট করুন

ঢাকা: সারা বিশ্বেই সংকট সৃষ্টির কারণে সরকারকে জ্বালানির দাম বৃদ্ধি করতে হয়েছে ও বিশ্ব বাজারে জ্বালানির দাম স্থিতিশীলভাবে কমলে ফের দেশে দাম সমন্বয় করা হবে বলে জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী হাছান মাহমুদ।

সোমবার (৮ আগস্ট) দুপুরে সচিবালয়ে সমসাময়িক বিষয় নিয়ে সাংবাদিকদের সাথে মত বিনিময়কালে তিনি এ কথা বলেন।

এ সময় বঙ্গমাতা শহীদ শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ৯২তম জন্ম বার্ষিকী উপলক্ষে তার প্রতি শ্রদ্ধা জানান হাছান মাহমুদ।

এ সময তিনি আরো বলেন, ‘ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে পৃথিবীতে জ্বালানি তেলের দাম ৭০ শতাংশ থেকে ১০০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। সেই প্রেক্ষাপটেও সরকার জনগণের কথা চিন্তা করে জ্বালানি তেলের দাম গত বছর বৃদ্ধি করে নি ও ২০২১-২২ অর্থ বছরে জ্বালানি ও বিদ্যুৎখাতে ৫৩ হাজার কোটি টাকা বা ছয় বিলিয়ন ডলার ভর্তুকি দিয়েছে। এমন অব্যাহতভাবে ভর্তুকি দেয়া কোন দেশের পক্ষে সম্ভবপর নয়। গত তিন মাসে বিপিসি সাড়ে আট হাজার কোটি টাকা লোকসান দিয়েছে অর্থাৎ প্রতিদিন প্রায় ১০০ কোটি টাকা। সেই প্রেক্ষাপটে কয়েক দিন আগে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছে।’

জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির পরও আমাদের দেশের মূল্য ভারতের পশ্চিমবাংলার মূল্যের সমান উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে ডিজেলের মূল্য ১১৪ টাকা, ভারতের ডিজেলের মূল্য পশ্চিমবাংলায় ১১৪-১১৫ টাকা। বাংলাদেশে পেট্রোলের দাম ১৩০ টাকা, ভারতেও পশ্চিমবাংলায় ১৩০-১৩১ টাকা। ডিজেলের দাম নেপালে ১২৮ দশমিক ৬৩ টাকা, ভুটানে ১৪৪ দশমিক ৩৯ টাকা, শ্রীলংকা ১১৪ টাকা, ফ্রান্সে ২২৪ টাকা, জার্মানিতে ১৯০ টাকা, অস্ট্রেলিয়া ১৬০ টাকা, সাউথ কুরিয়া ১৪৪ টাকা, চীনে ১১৮ দশমিক ৬৩ টাকা, ইউএই যে দেশ তেল রপ্তানি করে সেখানে ডিজেলের দাম ১২২ দশমিক ৮ টাকা, ইউকেতে ২৩০ টাকা, সিঙ্গাপুরে ১৮৯ দশমিক ৭৮ টাকা, হংকংয়ে ২৬০ দশমিক ৭৫ টাকা, ফিলিপাইনে ১৩৮ টাকা।

পেট্রোলের তুলনামূলক মূল্যের উপাত্ত তুলে ধরে তথ্য মন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশে পেট্রোলের মূল্য ১৩০ টাকা। সেটি ভারতের পশ্চিমবাংলায় ১৩০-১৩১ টাকা। নেপালে ১৩৫ দশমিক ৩৬ টাকা, ভুটানে ১২০ টাকা, শ্রীলংকায় ১৪২ দশমিক ০৩ টাকা, ফ্রান্সে ২৩২ টাকা, জার্মানিতে ১৭৫ টাকা, অস্ট্রেলিয়ায় ১৫০ টাকা, চীনে ১৩১ দশমিক ৯৯ টাকা, ইউএইতে ১১৬ দশমিক ৬৪ টাকা, সিঙ্গাপুরে ১৯০ দশমিক ৪৫ টাকা, হংকংয়ে ১৬৪ দশমিক ৭২ টাকা। এটা হচ্ছে পেট্রোলের মূল্য। সরকার দাম বাড়ানোর পরও জ্বালানিতে ভর্তুকি এখনো দিতে হবে।’

ইউরোপের বিভিন্ন দেশ জ্বালানি সংকটের কারণে কি ব্যবস্থা নিয়েছে উল্লেখ করে সম্প্রচার মন্ত্রী বলেন, ‘ইউরোপের সবচেয়ে শক্তিশালী দেশ জার্মানি জ্বালানি সংকটের কারণে সাশ্রয়ের উদ্যোগ নিয়েছে। বিভিন্ন শহরে সড়ক বাতি বন্ধ করে দিয়েছে। বাথরুমে গরম পানি সরবরাহ শহরে বন্ধ করে দিয়েছে। এরই মধ্যে ২০ শতাংশ জ্বালানি সাশ্রয়ের উদ্যোগ নিয়েছে, আরো ২০ শতাংশ সাশ্রয়ের উদ্যোগ নেবে। জার্মানিতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এক মিনিটের জন্যও কখনো বিদ্যুৎ যায় নি, সেখানে লোডশেডিং হচ্ছে, বিদ্যুতের রেশনিং করা হচ্ছে।’

হাছান মাহমুদ আরো জানান, পৃথিবীর অন্যতম শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ, স্থায়ী পরিষদের সদস্য ফ্রান্সে জ্বালানি সাশ্রয়ের জন্য ২৭ জুলাই থেকে পাবলিক প্লেস, শপিংমলে এয়ারকন্ডিশন চালানোর ওপর বিধিনিষেধ দেয়া হয়েছে। এর ব্যত্যয় ঘটলে ৭৫০ ইউরো জরিমানা করার ঘোষণাও দিয়েছে। গ্রিস এ বছরের মধ্যে দশ শতাংশ জ্বালানি সাশ্রয়ের ঘোষণা দিয়েছে। এই গ্রীষ্মকালেও তাদের দেশে এয়ারকন্ডিশনের তাপমাত্রা ২৭ ডিগ্রী রাখতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ইটালিতে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপের মধ্যে রয়েছে পাবলিক স্থাপনা, পার্ক, শপিংমলগুলো সন্ধ্যা সাতটার পর বাতি নিভিয়ে দেয়া। হাঙ্গেরিতে বিদ্যুতে জ্বালানি সংকটের তীব্রতায় ১৯ জুলাই থেকে এনার্জি এমারজেন্সি ঘোষণা করা হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যেককে এসএমএস দিয়ে বলা হয়েছে, ‘‘জ্বালানি ও বিদ্যুৎ সাশ্রয় করার জন্য।’’

বিশ্বে এ সংকটের প্রেক্ষাপটে আমাদের সরকারকে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি করতে হয়েছে, বিশ্ব বাজারে যখন তেলের মূল্য স্থিতিশীলভাবে কমে আসবে ও এর প্রভাব বাংলাদেশে শুরু হবে তখন জ্বালানি তেলের মূল্য আবার সমন্বয় করা হবে, আশ্বস্ত করেন তিনি।

চীনের সাথে বন্ধুত্বের ফলে ভারতের সাথে সম্পর্কে প্রভাব পড়বে কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে হাছান বলেন, ‘ভারত-বাংলাদেশের যে সম্পর্ক সেটি রক্তের অক্ষরে লেখা। ভারতের সরকার ও জনগণ আমাদের মুক্তিযুদ্ধে যে সহায়তা করেছে, বাংলাদেশ যত দিন থাকবে, তত দিন রক্তের অক্ষরে সেটি লেখা থাকবে। তাদের সাথে আমাদের সম্পর্ক যে উচ্চতায় সেই সম্পর্কের সাথে অন্য কোন দেশের সম্পর্ক তুলনীয় নয়। চীন আমাদের একটি বন্ধুপ্রতিম দেশ ও আমাদের একটি বড় উন্নয়ন সহযোগী। বন্ধুপ্রতিম দেশ যে কোন প্রস্তাব দিতে পারে। কারো সাথে বৈরিতা নয়, সবার সাথে বন্ধুত্ব সেটি আমাদের পররাষ্ট্র নীতি। অন্য কোন দেশের সম্পর্কের কারণে রক্তের অক্ষরে লেখা ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের ওপর কোন প্রভাব পড়বে না। বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য।’

এ সময় বিএনপি সম্পর্কে সাংবাদিকদের অপর এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বহু দিন থেকেই বিএনপির হাঁকডাক-নাকডাক শুনছি। ২০০৯ সালে সরকার গঠন করার পর থেকেই সরকার পতনের কথা শুনছি। বিএনপিকে অনুরোধ জানাবো, বিশ্ব পরিস্থিতির দিকে তাকানোর জন্য। মানুষকে বিভ্রান্ত করার রাজনীতি পরিহার করার জন্য। তারা মাঝেমধ্যে মানুষকে বিভ্রান্ত করে কিন্তু মানুষ তাদের আসল উদ্দেশ্য জানে, তাই বিএনপির হাঁকডাকে কোন লাভ হবে না।’