শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪

শিরোনাম

ভূমিকম্পে তুরস্ক-সিরিয়ায় মৃত ছাড়িয়েছে ২১ হাজার

শুক্রবার, ফেব্রুয়ারী ১০, ২০২৩

প্রিন্ট করুন

বাব আল-হাওয়া বর্ডার ক্রসিং, সিরিয়া: তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভয়াবহ ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা বৃহস্পতিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত বাড়তে থাকে। জাতিসংঘের প্রথম সাহায্য সিরিয়ার বিদ্রোহী-নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে পৌঁছানোর সাথে সাথে নিহতের সংখ্যা ২১ হাজার ছাড়িয়ে যায় এবং আরো জীবিতদের খুঁজে পাওয়ার আশা ম্লান হয়ে যায়। খবর এএফপির।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) প্রধান টেড্রোস আধানম গেব্রেয়াসিস বলেছেন, তিনি সিরিয়া যাচ্ছেন। সেখানে প্রচন্ড ঠান্ডার কারণে হাজার হাজার ধসে পড়া সমতল ভবনে অনুসন্ধানে বাধা সৃষ্টি করেছে এবং আশ্রয় ও পানীয় জলের অভাবে ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের জীবনকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে।’

তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর আন্তাকিয়ার একটি হাসপাতালের গাড়ি পার্কিংয়ে নিখোঁজ আত্মীয়দের খোঁজে সারিবদ্ধ করে রাখা বডি ব্যাগগুলো ট্র্যাজেডির মাত্রার ভয়াবহতার ইঙ্গিত দেয়।

সিরিয়ান শরণার্থী রানিয়া জাবুবি বলেছেন, ‘আমরা আমার খালাকে পেয়েছি, কিন্তু আমার চাচাকে পাইনি’। রানিয়া তার পরিবারের আট সদস্যকে হারিয়েছেন।

জীবিতদের খুঁজে পাওয়ার সম্ভাবনা এখন ম্লান হয়ে গেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, জীবন বাঁচানোর সবচেয়ে সম্ভাব্য সময় ৭২-ঘন্টার সীমা পেরিয়ে গেছে।

৭.৮-মাত্রার ভূমিকম্পটি সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) ভোররাতে মানুষের ঘুমের সময় আঘাত হানে এমন একটি অঞ্চলে, যেখানে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের কারণে ইতোমধ্যে অনেক লোক ক্ষতিগ্রস্ত ও বাস্তুচ্যুত হয়েছে।

টেড্রোস আধানম গেব্রেয়াসিস টুইটে বলেছেন, ‘আমি সিরিয়া যাওয়ার পথে যেখানে সাম্প্রতিক ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলে ডব্লিউএইচও প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য সেবা দিচ্ছে।’

বাব আল-হাওয়া সীমান্ত ক্রসিংয়ের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ভূমিকম্পের পর প্রথম সম্ভাব্য জীবন রক্ষাকারী সহায়তা নিয়ে একটি বহর বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ায় পৌঁছেছে।

সিরিয়ার সরকারী বাহিনী দ্বারা নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলগুলোর মধ্য দিয়ে না গিয়ে জাতিসংঘের সহায়তা বেসামরিকদের কাছে পৌঁছানোর একমাত্র উপায় এ সীমান্ত ক্রসিং।

এক দশকের গৃহযুদ্ধ এবং সিরীয়-রাশিয়ান বিমানের বোমাবর্ষণ ইতিমধ্যে হাসপাতাল ধ্বংস করেছে, অর্থনীতি ভেঙ্গে দিয়েছে ও বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও পানির ঘাটতি দেখা দিয়েছে।

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তেনিও গুতেরেস তুরস্ক ও সিরিয়ার মধ্যে নতুন আন্তঃসীমান্ত মানবিক সহায়তা কেন্দ্র খোলার অনুমোদন দেয়ার জন্য নিরাপত্তা পরিষদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন।

উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ার বিদ্রোহী-নিয়ন্ত্রিত এলাকায় বসবাসরত ৪০ লাখ মানুষকে প্রায় এক দশক আগে নিরাপত্তা পরিষদ কর্তৃক অনুমোদিত একটি আন্তঃসীমান্ত সাহায্য অভিযানের অংশ হিসেবে বাব আল-হাওয়া ক্রসিংয়ের উপর নির্ভর করতে হয়েছে।

গুতেরেস বলেছেন, ‘এখন ঐক্যের সময়, রাজনীতি বা বিভাজনের সুযোগ নেই। তবে এটি স্পষ্ট যে, আমাদের ব্যাপক সমর্থন প্রয়োজন।’

তুরস্কের শহর গাজিয়ানটেপের তাপমাত্রা বৃহস্পতিবারের (৯ ফেব্রুয়ারি) শুরুতে মাইনাস পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াস (২৩ ডিগ্রি ফারেনহাইট) এ নেমে আসে। কিন্তু হাজার হাজার পরিবার গাড়ি ও অস্থায়ী তাঁবুতে রাত কাটিয়েছে। তাদের বাড়িতে ফিরতে নিষেধ করা হয়েছে।

সোমবারের (৬ ফেব্রুয়ারি) ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থলের কাছাকাছি বাবা-মায়েরা তাদের বাচ্চাদের কম্বলে জড়িয়ে শহরের রাস্তায় হাঁটছিলেন। কারণ, এটি তাঁবুতে বসে থাকার চেয়ে শরীরের উষ্ণতা ধরে রাখছিল।

জিমনেসিয়াম, মসজিদ, স্কুল ও কিছু দোকান রাতে খোলা হয়েছে। কিন্তু বিছানা এখনো দুর্লভ রয়েছে ও হাজার হাজার মানুষ উষ্ণতার জন্য ইঞ্জিন চালু রেখে গাড়িতে রাত কাটায়।

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়িপ এরদোয়ান বুধবার (৮ ফেব্রুয়ারি) স্বীকার করেছেন, দুর্যোগ মোকাবেলায় সরকারের ‘ত্রুটি’ ছিল।

সোমবারের ভূমিকম্পটি ১৯৩৯ সালের পর তুরস্কের সবচেয়ে ভয়াবহ ভূমিকম্প ছিল। আগের সেই ভূমিকম্পে পূর্ব এরজিনকান প্রদেশে ৩৩ হাজর মানুষ মারা গিয়েছিল।

কর্মকর্তা ও চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, সোমবারের সাত দশমিক আট মাত্রার কম্পনে তুরস্কে ১৭ হাজার ৬৭৪ জন ও সিরিয়ায় তিন হাজার ৩৭৭ জন মারা গেছেন, নিশ্চিত মোট নিহতের সংখ্যা ২১ হাজার ৫১-এ পৌঁছেছে।

বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, সংখ্যাটি ব্যাপক বাড়তে থাকবে।

সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত আদিয়ামান প্রদেশের হাকান তানরিভার্দি বলেন, ‘ভূমিকম্পে যারা মারা যায়নি, তাদের ঠান্ডায় মারা যেতে হয়েছে।’

অসুবিধা সত্ত্বেও, হাজার হাজার দেশি ও বিদেশী অনুসন্ধানকারী আরো বেঁচে থাকা ব্যক্তিদের সন্ধানের হাল ছেড়ে দেয়নি।

তুর্কি সাইপ্রিয়ট অঞ্চলের সরকার একটি জাতীয় সংহতি ঘোষণা করেছে, একটি বেসরকারী বিমান ভাড়া করেছে; যাতে তারা শিশুদের জন্য অনুসন্ধান ও উদ্ধার প্রচেষ্টায় যোগ দিতে পারে।

ইলহামি বিলগেন, যার ভাই হাসান ভলিবল দলে ছিলেন, তিনি কংক্রিটের স্ল্যাব ও ভারী ইটের ভয়ঙ্কর স্তুপের দিকে তাকিয়ে বললেন ‘ওখানে হোটেলটি ছিল।’

বিলগেন বলেন, ‘ওখানে একটা ফাঁপা আছে। বাচ্চারা এতে হামাগুড়ি দিয়ে থাকতে পারে।’ ‘আমরা এখনো আশা ছাড়িনি।’

চীন ও যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েক ডজন দেশ সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

বিশ্ব ব্যাংক বলেছে, তারা ত্রাণ ও পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টায় সহায়তা করতে তুরস্ককে এক দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার সহায়তা দেবে।

তুরস্কে বিদ্যমান দুইটি প্রকল্প থেকে ৭৮০ মিলিয়ন ডলারের তাৎক্ষণিক সহায়তা দেয়া হবে। ব্যাংকটি বলেছে, ‘যখন পুনরুদ্ধার এবং পুনর্গঠনের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের সহায়তার জন্য এক বিলিয়ন ডলারের কার্যক্রম প্রস্তুত করা হচ্ছে।

ফিচ রেটিং বলেছে, ‘ভূমিকম্পে বিপুল মানুষের মৃত্যুর সংখ্যা ছাড়াও অর্থনৈতিক ক্ষতি সম্ভবত দুই বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে ও চার বিলিয়ন বা তারচেয়েও বেশি হতে পারে।