শনিবার, ১৮ মে ২০২৪

শিরোনাম

রেছালত ও বেলায়ত গগনের উজ্জ্বল নক্ষত্র নজীর আহম্মদ শাহ্ আল্ মাইজভান্ডারী

রবিবার, ডিসেম্বর ২৫, ২০২২

প্রিন্ট করুন

ছৈয়দ আখতার কামাল শাহ্ আল্ মাইজভান্ডারী: আল্হামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামিন, আচ্ছালাতু ওয়াচ্ছালাম, আলা আশরাফুল আম্বিয়ায়ে ওয়ালমুরসালিন, ওয়ালা আহ্লেহি, ওয়াআছহাবিহি, ওয়া আউলিয়ায়ে উম্মাতিহি, ওয়া শুহাদায়ে মুহাব্বাতেহি আজমাঈন। বিছমিল্লাহির রাহমানির রাহিম। রব্বানা ওয়াবয়াছ ফিহীম রাসুলাম মীনহুম ইয়াতলু আলাইহীম আইয়াতিকা ওয়াইউ আল্লীমু হুমুল কিতাবা ওয়াল হিকমাতা ওয়াইউ জাক্কীহিম ইন্নাকা আনতাল আজীজুল হাকিম। অর্থ: হে আমাদের প্রতিপালক ও প্রেরণ করুন, তাদের মধ্যে একজন রাসুল তাদেরই মধ্যে থেকে যিনি আপনার আয়াতগুলো তাদের কাছে তেলাওয়াত করবেন ও তাদেরকে আপনার কিতাব ও হিকমাহ্ (ইলমে আসরার নিগুঢ় রহস্যগুলোর জ্ঞান) শিক্ষা দিবেন ও তাদেরকে আত্মশুদ্ধি করবে। নিশ্চয় আপনি পরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময়। (সূরা বাকারা, আয়াত-১২৯)

জ্ঞানী ও আশেকে রাসূল, জ্ঞান পিপাসু পাঠকমণ্ডলী- এ পৃথিবীতে আল্লাহ্র অলীদের ভূমিকা ও জগতবাসীদের কর্তব্য শির্ষক বিষয়বস্তুুর লক্ষ্য উদ্দেশ্য অবগত হওয়ার উদ্দেশ্যে আমার আলোচনা। সব বিশ্বাসী মুমিন মুসলমান নর-নারী অবগত রয়েছেন যে, আল্লাহ্র প্রিয় মাহ্বুব হযরত মুহাম্মদ (সা.) আখেরী পয়গাম্বার। তার পরে আর কোন নবী পৃথিবীতে আসবে না। তিনি খাতামুন নবী। তার পরে নবুয়াত সমাপ্ত। কিন্তুু রেসালাত বাকি আছে, থাকিবে। রেসালাত চলমান। রাসুলে পাকের (সা.) রেসালাত প্রচারের দায়িত্ব যাদের উপর অর্পিত হয়েছে, তাদের পরিচিতি জ্ঞান অর্জন না হলে, তাদেরকে না চিনিলে তাদের নিকটে কি করে পৌঁছাবে, তাদের আনুগত্য কিভাবে করবে? এ বিষয়ে জানতে হলে প্রথমে কোরআন শরীফের যে আয়াতটি আমি উল্লেখ করেছি, ওটার অর্থের প্রতি একটু মনোনিবেশ করা যাক। হযরত ইব্রাহিম (আ.) আল্লাহ্র নিকটে প্রার্থনা করেছেন, তাদের হেদায়েতের জন্য আমার পরে এ জাতির মধ্য থেকে তাদের জন্য একজন রাসূল পাঠান। তিনি আপনার আয়াতগুলো তাদের নিকট বিস্তারিত তেলাওয়াত করবে। এখানে ‘আয়াত’ শব্দের অর্থ আল্লাহর নিদর্শনগুলো। অর্থাৎ, পূর্বাপর আপনার নিদর্শনগুলোর ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করে শুনাবে ও নিদর্শনগুলো প্রদর্শনের কারণ, নিদর্শনগুলোর ব্যাপারে তাদের কর্তব্য, করণীয় ইত্যাদি বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করে শিক্ষা দিবেন।

দ্বিতীয়ত: কিতাব শিক্ষা দিবেন। অর্থাৎ, আল্লাহ্পাকের যাবতীয় আদেশ নিষেধ কিভাবে পালন করবে। আল্লাহ হুমুক পালনের পদ্ধতি ইত্যাদি শিক্ষা দিবেন। তৃতীয়ত: ‘হিকমাহ্’ ইলমে আসরার, ইলমে তাসাউফ, ইলমে লাদুনী, আত্মতত্ব জ্ঞান শিক্ষা দিবেন। চতুর্থত: ওয়াইউ জাক্কিহীম অর্থাৎ আত্মশুদ্ধি করায়ে বিশুদ্ধ অন্তকরণে ফায়েজ দান ও আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করায়ে দিবেন। আমরা কোরআন শরীফের আয়াত হতে পরিস্কারভাবে জানতে পারলাম, উপরে উল্লেখিত চারটি বিষয়ে শিক্ষা দেয়া রাসূলের মৌলিক দায়িত্ব। ‘রাসূল’ শব্দের অর্থ পথ প্রদর্শক, বার্তাবাহক, হেদায়েতকারী, হাদি, শায়েখ, পীর মোর্শেদ, বন্ধু, অলী, শিক্ষক, গুরু, হক্কানী আলেম ইত্যাদি। আল্লাহ্র মাহ্বুব (সা.) ইরশাদ ফরমাইয়াছেন আল্ ওলামাউ ওয়ারেছাতুল আম্বিয়া। অর্থ: আলেমরা হচ্ছেন নবীদের ওয়ারিশ। অর্থাৎ, পূর্ববর্তী নবীদের ওয়ারিশ ছিল আলেমরা। আর আমার ওয়ারিশও হবে আলেমরা। এতে প্রমাণিত হল- নবীদের রেসালাত চলমান ছিল, এখনো চলমান আছে ও থাকবে। হাদিসে পাকের দুইটি শব্দ লক্ষণীয়: ওয়ারিশ, প্রতিনিধি বা খলিফা ও আলেম। ‘আলেম’ শব্দের অর্থ জ্ঞানী। অর্থাৎ, নবী রাসূলদের উপরে রেসালাতের মৌলিক যেই চারটি বিষয় প্রচারের দায়িত্বে ছিল। ওই চারটি বিষয়ে উম্মাতে মুহাম্মদীর ভিতরে যেই ব্যক্তি পারদর্শিতা অর্জনকারী হবেন। কেবল সেই মহাজ্ঞানীর উপরে অর্পিত হবে রেসালাত প্রচারের দায়িত্ব, আল্লাহ্র পক্ষ হতে অর্পিত হইবে। আর তিনিই হইবেন ওয়ারেসাতুল আম্বিয়া। যিনি ওয়ারেসাতুল আম্বিয়ার দায়িত্বপ্রাপ্ত হবেন, তার প্রচারক স্বয়ং আল্লাহ্পাক নিজেই হবেন। যিনি বাসূলের দায়িত্বপালনকারী হবেন। তিনি শুধু রাসূলের প্রতিনিধি নয়। তিনি হবেন আল্লাহ বন্ধু। যাকে আল্লাহ অলী বলা হয়। মাদ্রাসায় পড়ে কোরআন-সুন্নাহ্র জ্ঞানে জ্ঞানী হয় বলে সমাজে ও জ্ঞানীকে আলেম বলে থাকেন। তাই বলে সব আলেম ওয়ারেছাতুল আম্বিয়া নন।

খলিফায়ে গাউছুল আজম মাইজভাণ্ডারী শাহ্ ছুফী মাওলানা হাফেজ ছৈয়দ নজীর আহম্মদ শাহ্ আল্ মাইজভাণ্ডারী (ক.) ছিলেন কোরআনের হাফেজ, বিশিষ্ট আলেমে দ্বীন ওআল্লাহর বন্ধু, অলীআল্লাহ্। একজন প্রকৃত ওয়ারেছাতুল আম্বিয়া হওয়ার জন্য যে চারটি বিষয়ে পরিশুদ্ধ জ্ঞানী হওয়ার শর্ত কোরআন শরীফে বর্ণনা করা হয়েছে, হযরত নজীর ভাণ্ডারী (ক.) ছিলেন সেই জ্ঞানের সমুদ্র। রেছালত ও বেলায়ত গগনের উজ্জ্বল নক্ষত্র। তার জীবন চরিত্র পর্যালোচনায় দিবালোকের উদিত সূর্যের ন্যায়, যাহা উদ্ভাসিত। তার হায়াতে জিন্দেগানি অতিবাহিত করেছেন- রিসালাত, বেলায়েতের দায়িত্ব প্রচার-প্রসারের ভিতর দিয়ে। আর সফলতাও অর্জন করেছেন। তিনি অমর হয়ে থাকবেন অনন্তকাল।

আমাদের করণীয়: আল্লাহ আয়াত বা নিদর্শন সম্পর্কে জানার জন্য; আল্লাহ কিতাবের জ্ঞান অর্জনের জন্য; হিকমা আত্মতত্ত¡ ইলমে আসরার নিগুঢ় রহস্য জ্ঞান অর্জনের জন্য এবং আত্মশুদ্ধির পদ্ধতি অবগত হয়ে বিশুদ্ধ আত্মার সংযোগ স্থাপন তথা ছালাত প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আল্লাহর অলীদের অনুগত্য গ্রহণ করা। তাদের আদর্শে জীবন গড়া তাদের পথ ও মতে জীবন পরিচালিত করা। কারণ, এটাই হচ্ছে রেসালাতের পথ, প্রকৃত ধর্ম।

হযরত নজীর ভাণ্ডারী (ক) তার উপরে আল্লাহ ও রাসুলের পক্ষ থেকে অর্পিত দায়িত্ব আঞ্জাম দিয়ে মাহবুবে হাকিকী, আল্লাহর সাথে মহা মিলনের উদ্দেশ্যে স্বীয় প্রভুর আহবানে সাড়া দিয়ে এ পৃথিবী হতে বিদায় নিয়েছেন ১৫ রজব ১৩৮৯ হিজরী ১২ জানুয়ারি ১৯৬০, ২৯ পৌষ ১৩৬৫ বঙ্গাব্দ, রোজ বৃহস্পতিবার। তার স্মরণে প্রতি বছরের মত এবারো বাংলা মাসের ২৯ পৌষ, ১৩ জানুয়ারি শুক্রবার ২০২৩ চট্টগ্রাম সিটির আগ্রাবাদের ছোটপুলস্থ আস্তানায়ে নজীর ভাণ্ডার দরবার শরীফে ৬৩তম বার্ষিক ওরশ শরীফ উদ্যাপিত হবে। যার প্রকৃত উদ্দেশ্য আল্লাহর দয়া-মেহেরবাণী অর্জন, শুকরিয়া জ্ঞাপন, আল্লাহর মেহেবুব (সা.) ও আউলিয়া কেরামদের ফয়ুজাত হাসিল করা। ওই উদ্দেশ্য হাসিলের উদ্দেশ্যে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকলের প্রতি ওরশ শরীফের ঈমানি, রূহানী দাওয়াত রইল। আমিন।

লেখক: মুন্তাজেমে আস্তানায়ে নজীর ভাণ্ডার দরবার শরীফ, দক্ষিণ আগ্রাবাদ, ছোটপোল, চট্টগ্রাম।