শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪

শিরোনাম

মুন্সীগঞ্জের খুনের মামলার আসামি নিউ ইয়র্ক সিটিতে গ্রেফতার

শনিবার, এপ্রিল ৬, ২০২৪

প্রিন্ট করুন

নিউ ইয়র্ক সিটি, যুক্তরাষ্ট্র: মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে মার্কিন নাগরিককে খুনের অভিযোগে গেনেট রোজারিও (৫২) নামের আসামীকে যুক্তরাষ্ট্রের গ্রেফতারা করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) নিউ ইয়র্ক সিটির ম্যানহাটান থেকে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগের ফৌজদারি শাখার প্রধান ও মুখ্য উপসহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল নিকোল এম আর্জেন্টিয়েরি বিবৃতিতে বলেছেন, ‘গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিও যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে বাংলাদেশে মার্কিন নাগরিককে খুনের অভিযোগ রয়েছে।’

যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগের নথিতে গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিকে মার্কিন হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ জানিয়েছে, খুনের অভিযোগে গ্রেফতার ব্যক্তিকে বৃহস্পতিবার ৳ এপ্রিল) আদালতে তোলা হয়েছিল। তার বিরুদ্ধে দুইটি অভিযোগ আনা হয়েছে। একটি হল বিদেশে যুক্তরাষ্ট্রের একজন নাগরিককে খুন। অন্যটি সশস্ত্র সহিংসতার সময় আগ্নেয়াস্ত্র সাথে রাখা, বহন ও ব্যবহারের ব্যাপারে।

অপরাধ প্রমাণিত হলে যুক্তরাষ্ট্রে তার যাবজ্জীবন জেল হতে পারে।

নিকোল এম আর্জেন্টিয়েরি বলেন, ‘যখন একজন মার্কিনী বিদেশে আরেকজন মার্কিনীকে খুন করেছেন, তখন তাকে গুরুতর পরিণতি ভোগ করতে হবে। সহিংস অপরাধ যেখানেই সংঘটিত হোক না কেন, ফৌজদারি বিচার শাখা যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের বিরুদ্ধে অপরাধের তদন্ত ও বিচার করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। অপরাধীদের তাদের কাজের জন্য জবাবদিহি করতে হবে।’

আদালতের নথি অনুযায়ী, নিউ ইয়র্ক সিটির ব্রংকসের বাসিন্দা গেনেট রোজারিও বাংলাদেশে মাইকেল রোজারিওকে (৭২) ২০২১ সালের ১১ জুন বা কাছাকাছি সময়ে খুন করে। গেনেট রোজারিওর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করেছেন ও এর মাধ্যমে খুন করেছেন।

নিউ ইয়র্ক সিটির সাউদার্ন ডিস্ট্রিক্টের মার্কিন অ্যাটর্নি ড্যামিয়ান উইলিয়ামস বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক গেনেট রোজারিও বাংলাদেশে একজন মার্কিনীকে খুন করেছেন বলে অভিযোগ আনা হয়েছে। এ থেকে বোঝা যায়, আইন প্রয়োগকারী অংশীদারদের সাথে এ অফিসের (অ্যাটর্নি অফিস) যোগাযোগ বহু বিস্তৃত। নিউ ইয়র্ক সিটির নারী ও পুরুষদের সুরক্ষায় আমাদের অঙ্গীকার ভৌগোলিক সীমানার বাইরেও রয়েছে।’’

যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল তদন্ত ব্যুরো এফবিআইয়ের লস অ্যাঞ্জেলেস ফিল্ড অফিসের ভারপ্রাপ্ত অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর মেহতাব সাইদ বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ ও যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের ওপর প্রভাব ফেলে, বিদেশে সংঘটিত এমন অপরাধগুলো তদন্তে এফবিআই উল্লেখযোগ্য সম্পদ ব্যয় করছে। বিদেশের মাটিতেও কেউ মার্কিনীদের সাথে অপরাধ করলে এফবিআইয়ের তদন্তের মাধ্যমে তাকে জবাবদিহি করানোর উদ্যোগ নেয়া হবে।’

এফবিআই নিউ ইয়র্ক ফিল্ড অফিসের ভারপ্রাপ্ত অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর তৃতীয় জেমস এইচ স্মিথ বলেন, ‘গেনেট রোজারিও ঠাণ্ডা মাথায় হিসাব-নিকাশ করেই মার্কিন নাগরিককে বিদেশের মাটিতে খুন করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। অপরাধী যেখানেই অপরাধ করুন না কেন, তাকে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে-গেনেট রোজারিওকে গ্রেফতার এফবিআইয়ের ওই প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন। এফবিআইয়ের লস অ্যাঞ্জেলেস এবং নিউ ইয়র্ক ফিল্ড অফিস গেনেট রোজারিওর বিরুদ্ধে তদন্ত করেছে।’

বলে রাখা ভাল, ২০২১ সালের ১১ জুন মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে মাইকেল রোজারিও নামের আমেরিকান প্রবাসীকে গুলি করে খুন করেন তার ভাতিজা গেনেট রোজারিও। ওই দিন রাত ১২টার দিকে জেলার একমাত্র খ্রিস্টানপল্লী কেয়াইন ইউনিয়নের শুলপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। সেই রাতেই স্থানীয় পুলিশ গেনেট রোজারিওকে একনলা বন্দুক ও গুলিসহ গ্রেফতার করে। পরে, গেনেট রোজারিও আদালত থেকে জামিন নিয়ে পালিয়ে যান।

ওই হত্যাকাণ্ড প্রসঙ্গে কেয়াইন ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য নয়ন রোজারিও সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘শুলপুর গ্রামের মাইকেল রোজারিওর সাথে তার বড় ভাই প্রয়াত বাড়ন রোজারিওর ছেলে গেনেট রোজারিওর জমিজমা নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে বিরোধ চলছিল। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে একাধিক মামলাও ছিল। চাচা-ভাতিজা উভয়েই পরিবার নিয়ে আমেরিকায় বসবাস করতেন। হত্যাকাণ্ডের প্রায় দুই মাস পূর্বে সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ নিরসনে তারা দুইজনই বাংলাদেশে আসেন।’

২০২১ সালের ১১ জুন সন্ধ্যা সাতটায় এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে সালিসি বৈঠক হয়। সেখানে জমিজমা নিয়ে বিরোধের অবসানও ঘটে। কিন্তু, সেদিনই রাত ১২টার দিকে ভাতিজা গেনেট চাচা মাইকেল রোজারিওকে গুলি করেন। গুরুতর অবস্থায় মাইকেল রোজারিওকে ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতালে নিয়ে আসার পথে মারা যান।