শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

শিরোনাম

দেশের ই-স্পোর্টস ইন্ডাস্ট্রিতে প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের অমিত সম্ভাবনা

রবিবার, জানুয়ারী ২৯, ২০২৩

প্রিন্ট করুন

প্রতিনিয়ত ফ্যানবেজ বৃদ্ধির ধারায় আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তার দিকে এগুচ্ছে ই-স্পোর্টস। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে অনলাইন কিংবা অফলাইন মাধ্যমে প্রতিযোগীদের অংশগ্রহণে যে প্রতিযোগিতামূলক ভিডিও গেমস খেলা হয়, সাধারণত তাকেই ইলেকট্রনিক স্পোর্টস বা সংক্ষেপে ই-স্পোর্টস বলা হয়। নিছক বিনোদনের পাশাপাশি অনেক সময় বাণিজ্যিক পরিসরেও ই-স্পোর্টস টুর্নামেন্ট আয়োজিত হয়ে থাকে। একক খেলোয়াড়দের পাশাপাশি বিভিন্ন টিম ও লিগ ভিত্তিক ই-স্পোর্টস প্রতিযোগিতা আয়োজিত হয়ে থাকে ও তা প্রায়ই বিভিন্ন টিভি চ্যানেল বা স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মে সম্প্রচারিত হয়। বিশ্বজুড়ে গেমারদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় ই-স্পোর্টসের তালিকায় রয়েছে লিগ অব লিজেন্ডস, ডোটা ২, কাউন্টার-স্ট্রাইক: গ্লোবাল অফেনসিভ, ফোর্টনাইট, কল অফ ডিউটি, ফিফা, এনএফএলসহ অসংখ্য গেমস।

অনেকেই মনে করেন, ই-স্পোর্টসের ইতিহাস খুব বেশি পুরোনো নয়। কিন্তু বাস্তবতা এর সম্পূর্ণ ভিন্ন। এ ক্ষেত্রে, ১৯৭২ সালের অক্টোবরে আয়োজিত প্রথম অফিসিয়াল ভিডিও গেম প্রতিযোগিতার কথা উল্লেখ করা যায়। ‘স্পেসওয়ার’ গেমসের সেই আসর রীতিমতোজমজমাট হয়ে উঠেছিল। আর পুরস্কার হিসেবে প্রতিযোগিতার বিজয়ী জিতে নিয়েছিলেন রোলিং স্টোন ম্যাগাজিনের এক বছরের সাবস্ক্রিপশন। এ ঘটনার পর থেকে ই-স্পোর্টস ইন্ডাস্ট্রিতে আয়োজক, সহযোগী ও অংশগ্রহণকারীদের কোন অভাব হয়নি বললেই চলে। উল্টো গত কয়েক দশকে বিশ্বের অন্যতম সম্ভাবনাময় এক খাতে পরিণত হয়েছে ই-স্পোর্টস।

বিশ্বব্যাপী ই-স্পোর্টসের এ ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তার পেছনে একটি বড় কারণ হচ্ছে- প্রযুক্তি ও ইন্টারনেটের বিস্তৃতি। দ্রুতগতির ইন্টারনেট সংযোগ আমাদেরকে ভার্চ্যুয়ালি একে অন্যের সাথে যুক্ত থাকতে সাহায্য করছে, যার ফলে প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়াও আরো সহজ হয়ে উঠছে। পাশপাশি, ভাল মানের গেমিং সরঞ্জাম ও কম্পিউটারও আগের চেয়ে সহজলভ্য হয়েছে, যার ফলে আরো বেশি মানুষ ই-স্পোর্টসের সাথে যুক্ত হওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। ইস্পোর্টসের প্রবৃদ্ধির পেছনে আরেকটি বড় কারণ হচ্ছে- টুইচের মত স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মগুলোর জনপ্রিয়তা, যা ই-স্পোর্টস প্রতিযোগিতার মজা উপভোগ করা ও প্রফেশনাল প্লেয়ারদের দেখে খেলার কৌশল রপ্ত করে নেয়াকে সহজ করে তুলেছে। এভাবে সম্ভাবনাময় এ ইন্ডাস্ট্রির জন্য অল্প সময়ের মধ্যেই এক বিশাল ও সক্রিয় দর্শকশ্রেণি তৈরি হয়েছে, যাতে আরো বেশি স্পন্সর ও বিনিয়োগকারীরা আকৃষ্ট হচ্ছেন।

খেলতে পারেন যে কেউ: কম্পিউটার বা গেমিং কনসোল ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় অনুসঙ্গের সাহায্যে যে কেউই ই-স্পোর্টসে অংশ নিতে পারেন। বন্ধুদের সাথে নিছক বিনোদনের জন্য এতে অংশ নেয়া যায়, আবার অনলাইনে টুর্নামেন্ট বা লিগ হিসেবে সংগঠিতভাবেও খেলা যায়। তবে ই-স্পোর্টসের বড় বড় প্রতিযোগিতাগুলোতে অংশগ্রহণ করতে প্রতিযোগীদের একটি নির্দিষ্ট যোগ্যতার মাপকাঠিতে উত্তীর্ণ হতে হয়। অনলাইন টুর্নামেন্ট, লিগ, ল্যান টুর্নামেন্ট ও স্পন্সর করা পেশাদার টিম-সহ ই-স্পোর্টসে অংশগ্রহণ করার নানা উপায় রয়েছে। তবে, যেহেতু ইন্ডাস্ট্রি হিসেবে পুরোপুরি বিকাশে ই-স্পোর্টসের এখনো কিছু ধাপ বাকি রয়েছে, তাই বিভিন্ন গেমসে অংশ নেয়ার ক্ষেত্রে এখনো গেমসের ধরণ, ব্যবহারকারীর দেশ বা অঞ্চল ইত্যাদির মত কিছু শর্তের প্রযোগ্য হয়ে থাকে।

কোথায় দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ: অন্য অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশের ই-স্পোর্টস ইন্ডাস্ট্রি এখনো তুলনামূলকভাবে অনেক ছোট। তবে এটি এখন বর্ধনশীল অবস্থায় রয়েছে ও ভবিষ্যতে এর বিকশিত হয়ে ওঠার অমিত সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। এ বিকাশের পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। দেশে এখন ইন্টারনেট ও স্মার্টফোনের ব্যবহার উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে, যাতে করে মানুষ খুব সহজেই অনলাইন গেম খেলতে পারছেন। একই সাথে, বিশ্বব্যাপী ই-স্পোর্টসের জনপ্রিয়তা বেড়ে যাওয়ার প্রভাব হিসেবে বাংলাদেশে তরুণদের মাঝে এই ইন্ডাস্ট্রির দিকে মনোযোগ বাড়ছে। বর্তমানে বাংলাদেশে রয়েছে এক সম্ভাবনাময় তরুণ জনগোষ্ঠী, যারা তাদের মেধা ও সমস্যা সমাধানের দক্ষতার জোরে অনলাইন গেমের ইন্ডাস্ট্রিতে নিজেদের জন্য বিশেষ জায়গা অর্জন করে নিচ্ছেন। এ তরুণেরাই দেশে ই-স্পোর্টস ইন্ডাস্ট্রির মূল চালিকাশক্তি হয়ে উঠতে পারেন। তবে, এ ইন্ডাস্ট্রির উন্নয়ন ঘটাতে ও সামনে এগিয়ে নিতে হলে প্রয়োজন অবকাঠামোগত সহযোগিতা। এ জন্য সরকার ও বেসরকারি খাতগুলোকে একযোগে কাজ করতে হবে। এ ছাড়া, ইন্ডাস্ট্রির বিকাশ ঘটাতে হলে ই-স্পোর্টস ট্যালেন্টদেরও খুঁজে বের করতে হবে ও দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগ তৈরি করতে হবে। ই-স্পোর্টস ইন্ডাস্ট্রি গত কয়েক দশক ধরে অত্যন্ত দ্রুতগতিতে বেড়ে চলেছে এবং বর্তমানে এটি এক মাল্টি-বিলিয়ন ডলার ইন্ডাস্ট্রিতে পরিণত হয়েছে। এখন এটি এক বৈশ্বিক বাস্তবতায় পরিণত হয়েছে, যা থেকে বাংলাদশও আলাদা নয়। তাই, দেশে ই-স্পোর্টসের বিস্তৃতিকে স্বাগত জানানোর এখনই সময়।

প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা: স্ট্যাটিস্টা’র তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে বিশ্বের ই-স্পোর্টস খাতের মোট মূল্য ছিল আনুমানিক এক দশমিক ৩৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি, যা ২০২৫ সাল নাগাদ এক দশমিক ৮৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের অঙ্ক ছুঁতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বাংলাদেশেও ই-স্পোর্টসের জগতকে সমৃদ্ধ করতে আগ্রহী তরুণ গেমারদের সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। দক্ষ তরুণরা এখানে তাদের সৃজনশীলতা ও মেধার স্বাক্ষর রাখছেন ও অনেকে ক্যারিয়ার হিসেবেও এ ইন্ডাস্ট্রিকে বেছে নিতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। ইস্পোর্টসআর্নিংসের হিসাব অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের ৭৩ জন ই-স্পোর্টস খেলোয়াড় ৭০টি টুর্নামেন্ট থেকে প্রাইজমানি হিসেবে ০.২ মিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি অর্থ পুরস্কার হিসেবে জিতে নিয়েছেন! অন্য একটি রিপোর্ট অনুসারে, বিশ্বব্যাপী ই-স্পোর্টসের অনিয়মিত দর্শকের সংখ্যা বেড়ে এখন ২৯ কোটি ১৬ লাখে (২৯১ দশমিক ছয় মিলিয়ন) দাঁড়িয়েছে।

ই-স্পোর্টসের ব্যাপারে যদি আপনার আরো জানার আগ্রহ থাকে, তাহলে ঘুরে আসতে পারেন পারিম্যাচনিউজ থেকে। বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত কাভারেজের কারণে এ স্পোর্টস নিউজ পোর্টাল থেকে আপনি শীর্ষ ই-স্পোর্টসগুলোর সর্বশেষ আপডেট পাবেন।