শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

শিরোনাম

প্রথম আলো উত্তর আমেরিকার আট বছরে পদার্পণ; সিবিএন টিভির উদ্বোধন

বৃহস্পতিবার, মার্চ ২৮, ২০২৪

প্রিন্ট করুন

নিউ ইয়র্ক সিটি, যুক্তরাষ্ট্র: যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক সিটির বাংলাদেশি কমিউনিটির উচ্ছ্বাস, আনন্দ ও ব্যতিক্রমের আতিশয্যে ভরপুর ছিল প্রথম আলো উত্তর আমেরিকার আট বছরে পদার্পণ অনুষ্ঠান এবং সিবিএন টিভির উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতা, সিটি অফিসের কর্মকর্তা, সংবাদপত্রসেবী, সম্পাদক, সাংবাদিক ও লেখকসহ অগ্রসর জনসমাজের মেলা বসেছিল উডসাইডের গুলশান টেরেসে। কথায়, প্রতিশ্রুতিতে ও কর্মে ভিন্ন ধারার অনুষ্ঠানে ঋদ্ধ হয়েছেন অতিথিরা।

বুধবার (২৭ মার্চ) বিকাল সাড়ে চারটার দিকেই সিটি অফিসের কর্মকর্তাদের আসা শুরু হয়। নিউ ইয়র্ক সিটির মেয়র এরিক অ্যাডাম আসার জন্য আগাম নিরাপত্তা টিমও যথাস্থানে অবস্থান নেয়। বিপত্তি বাঁধে ওজন পার্কে পুলিশের হাতে বাংলাদেশি তরুণ গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুর ঘটনায়। ফলে, এরিক অ্যাডামকে ভিন্ন কাজে ঝাঁপিয়ে পড়তে হয়।

বিকাল ঠিক সাড়ে পাঁচটায় প্রথম আলো উত্তর আমেরিকার লেখক ও সাংবাদিক রহমান মাহবুবের আমন্ত্রণে পত্রিকাটির সম্পাদক ইব্রাহীম চৌধুরী ও নির্বাহী সম্পাদক মনজুরুল হক মঞ্চে উপস্থিত হন। এ সময় মেয়রের অফিসের এথনিক ও কমিউনিটি মিডিয়া বিষয়ক নির্বাহী পরিচালক হোজে বয়েনা, মেয়র অফিসের প্রধান প্রশাসনিক কর্মকর্তা মীর বাশার, কারেকশন অফিসারদের সাংগঠনিক প্রধান কাজী হাসান, লেখক ও সাংবাদিক হাসান ফেরদৌসকে নিয়ে প্রথম পর্বের আলোচনা শুরু হয়।

মীর বাশার বলেন, ‘প্রথম আলো নিউ ইয়র্কে কমিউনিটির কথা বলে আসছে।’

এ প্রতিষ্ঠানের নয়া সহযোগী সংগঠন হিসেবে সিবিএন টিভি একইভাবে সবাইকে নিয়ে কাজ করবে বলে তিনি প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।

হোজে বয়েনা বলেন, ‘শুরু থেকেই প্রথম আলোর সাথে সিটি অফিসের কার্যকর যোগাযোগ রয়েছে। যে কোন কাজে, কমিউনিটির যে কোন প্রয়োজনে প্রথম আলো যেভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ে, সিটি অফিস থেকেও এ পত্রিকার জন্য একই প্রতিক্রিয়ায় সাড়া দিয়ে থাকে।’

এ পত্রিকাটির মাধ্যমে এবং তাদের সিবিএন টিভির সাথে নারীদের ব্যাপক অংশগ্রহণ প্রশংসার এবং সিটি অফিস সর্বতভাবে এ প্রতিষ্ঠানটির পাশে থাকবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

হাসান ফেরদৌস বলেন, ‘আট বছর আগে প্রথম আলো যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে শুরু করেছিল, কঠিন পরিশ্রম ও প্রথম আলোর ভাবমূর্তি ধারণ করে তাদের এগিয়ে চলা অব্যাহত থাকবে বলে আমি বিশ্বাস করি।’

অনুষ্ঠানে এক পর্যায়ে যুক্ত হন নিউ জার্সি রাজ্যের একমাত্র বাংলাদেশি নির্বাচিত প্রতিনিধি কাউন্সিল ওম্যান শিফা উদ্দিন। প্রথম আলো পত্রিকার বিন্যাসের শাড়ীর সাজে অনুষ্ঠানে উপস্থিত প্রথম আলো পরিবারের নারী লেখক ও সাংবাদিকদের কাজকর্মের প্রশংসা করে তিনি বলেন, ‘ব্যতিক্রমী কাজের মাধ্যমে প্রথম আলো নারীদের সম্পৃক্ত করে এগিয়ে যাচ্ছে।’

বাংলাদেশি কমিউনিটির অগ্রযাত্রায় এ এক তাৎপর্যপূর্ণ কাজ বলে তিনি উল্লেখ করেন।

অনুষ্ঠানে ইব্রাহীম চৌধুরী পত্রিকার প্রকাশনা থেকে শুরু করে নিউ ইয়র্কে এর এগিয়ে চলার নানা বাঁধা বিপত্তির কথা তুলে ধরেন। তিনি ঢাকা প্রথম আলো পত্রিকার সম্পাদক তার পিতৃসম মতিউর রহমান এবং ট্রান্সকম গ্রুপের প্রয়াত চেয়ারম্যান লতিফুর রহমানকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন।

ইব্রাহীম চৌধুরী বলেন, ‘প্রথম আলো যেমন করে কমিউনিটিকে নিয়ে, কমিউনিটির জন্য কাজ করেছে; একইভাবে সবাইকে, সকলের সহযোগিতা নিয়ে সিবিএন টিভিও গড়ে তুলে হবে।’

তিনি প্রথম আলো পত্রিকার কাণ্ডারি হিসেবে সহকর্মী মনজুরুল হকের নিরলস কাজের প্রশংসা করেন।

মনজুরুল হক বলেছে, ‘প্রথম আলো পত্রিকার জন্য কাজ করতে গিয়ে তিনি নিজের সন্তান জন্মের দিনক্ষণের কথাও জানাননি।’

কাজকে এভাবেই প্রাধান্য দেয়ার চর্চার মাধ্যমে পত্রিকাটির এগিয়ে চলা এবং সিবিএন টিভিও একইভাবে এগিয়ে যাবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

অনুষ্ঠানের মাঝামাঝি পর্যায়ে ইব্রাহীম চৌধুরী সিবিএন টিভির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেন এবং দর্শকদের স্ক্রিনে টিভির প্রামাণ্য অনুষ্ঠান দেখানো হয়। প্রথম আলো উত্তর আমেরিকার দুইজন সহকর্মীকে তাদের কাজের জন্য সম্মাননা জানানো হয়। এদের একজন হচ্ছেন পত্রিকাটির সাহিত্য সম্পাদক এইচবি রিতা এবং অন্যজন হচ্ছেন রিপোর্টার রুদ্র মাসুদ। তাদের নাম ঘোষণা করেন কবি রওশন হাসান ও ফার্মাসিস্ট সুমাইয়া চৌধুরী।

প্রথম আলো উত্তর আমেরিকার সম্মানজনক ‘কবিতার এক পাতা’র সম্পাদক ফারুক ফয়সল পত্রিকাটির যাত্রাপথ তুলে ধরেন এবং নানা কঠিন বাস্তবতার মধ্যে এ পত্রিকাটির সাথে তার সম্পৃক্ততার মাধ্যমে বাংলা সাহিত্য ও কবিতার উৎকর্ষতায় ভূমিকা রাখতে পারছেন বলে জানান।

প্রথম আলো নারী লেখক ও সাংবাদিকদের মধ্যে রওশন হক বলেন, ‘নিউ ইয়র্কে প্রথম আলো প্রকাশিত হওয়ার পর এখানকার অনেকেই নিজেদের প্রতিভাকে কাজে লাগাতে সক্ষম হয়েছেন। লেখক হওয়া বা সাংবাদিক হওয়ার জন্য ভালবেসে সবাই এক প্লাটফর্মে যুক্ত থাকতে পারছেন। মান যাই হোক, সবাই মুক্তভাবে এ পত্রিকার মাধ্যমে লেখালেখি করে নিজেদের উৎকর্ষ অর্জনে সক্ষম হচ্ছেন এবং এ অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে।’

প্রথম আল উত্তর আমেরিকার লেখক, সাংবাদিক এবং ‘টক অব দ্যা উইক’ অনুষ্ঠানের সংগঠকদের মধ্যে সোহানা নাজনীন, ফরিদা ইয়াসমীন ও রোকেয়া দীপা বলেন, ‘তারা নির্ভয়ে কাজ করার সাহস পেয়েছেন প্রথম আলোর মাধ্যমে এবং নিজেদের যোগ্যতা বৃদ্ধি করতে পেরেছেন।’

প্রথম আলো তাদের জন্য একটি ভালবাসার প্লাটফর্ম বলে তারা উল্লেখ করেন।

লেখক ও সাংবাদিক শেলী জামান খান, ভায়লা সালিনা, রুপা খানম, বিলকিস সুমি, সেমু আফরোজা, বদরুন নাহার, ইসমত হানিফা, কান্তা কাবির, মনীষা তৃষা উল্লেখ করেন, প্রথম আলো দূর দেশে দেশের ভাষা ও সংস্কৃতি বিকাশে কাজ করছে এবং এ পত্রিকাকে তারা ভালবাসার প্লাটফর্ম হিসেবে দেখে থাকেন।

কুইন্স ডেমোক্র্যাট পার্টির ডিসট্রিক্ট লিডার এট লার্জ অ্যাটর্নী মঈন চৌধুরী উল্লেখ করেন, তিনি প্রথম আলো পত্রিকার পাশে ছিলেন সব সময়। এখন সিবিএন টিভি করে কমিউনিটিকে সংবাদ মাধ্যম হিসেবে তারা যে সার্ভিস দেবে, তার পাশে তিনি থাকবেন।

নারী সংগঠক সালমা ফেরদৌস বলেন, ‘প্রথম আলো উত্তর আমেরিকা নারীদের নিয়ে কাজ করে নিউ ইয়র্কে ব্যতিক্রম সৃষ্টি করেছে।’

সিবিএন টিভিও একইভাবে নারীদের প্রাধান্য দিয়ে কাজ করে যাবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

প্রবীণ সম্পাদক মঞ্জুর আহমেদ প্রথম আলো পত্রিকার আট বছরে পদার্পণে আশীর্বাদ করেন।

অপর প্রবীণ সম্পাদক নাজমুল আহসান বলেন, ‘কমিউনিটি নির্মাণে সংবাদপত্রই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছে।’ প্রথম আলোর মত সিবিএন টিভিও একই প্রত্যয় নিয়ে কাজ করবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

টাইম টিভির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এবং বাংলা পত্রিকার সম্পাদক আবু তাহের সহযোগী সংবাদ মাধ্যম হিসেবে প্রথম আলো উত্তর আমেরিকার পাশে আছেন বলে উল্লেখ করেন।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন গোল্ডেন এজ হোমকেয়ারের সিইও এবং আজকাল পত্রিকার সম্পাদক শাহনেওয়াজ, প্রবাসের সম্পাদক মোহাম্মদ সাঈদ, জন্মভূমির সম্পাদক রতন তালুকদার, নবযুগের সম্পাদক শাহাব উদ্দিন সাগর, মুক্তচিন্তার সম্পাদক ফরিদ আলম, নিউ ইয়র্ক বাংলাদেশ প্রেস ক্লাবের সভাপতি মনোয়ারুল ইসলাম, নিউ ইয়র্ক সময় পত্রিকার সম্পাদক জাকারিয়া মাসুদ জিকু এবং প্রধান সম্পাদক দর্পন কবির, শওকত রচি, শামসুন নাহার নিম্মি, এনামুল হক, জলি রহমান, সাংবাদিক ফিরোজ কবির, রিমন ইসলাম, বিলকিস দোলা, মোস্তফা অনীক রাজ।

কণ্ঠশিল্পী বেবি নাজনীন এক লাইন গান গেয়ে প্রথম আলোর প্রতি তার ভালবাসার কথা জানান। উপস্থিত ছিলেন ও কথা বলেন শোটাইম মিউজিকের আলমগীর খান আলম, মঈনুল হক চৌধুরী হেলাল, সেকিল চৌধুরী, তোফায়েল চৌধুরী, রওশন জাহান, জন সংগঠক সৈয়দ ফজলুর রহমান, আহসান হাবীব, জাকির হোসেন, কবি স্বপ্ন কুমার ও মাসুম আহমেদ, সৈয়দ উতবা, মিয়া মোহাম্মদ আছকির, লেখক ফজলুর রহমান চৌধুরী, আব্দুল হাই, মোহাম্মদ কে আহমদ, ঊষা রহমান, ডেইজী, মাহবুব চৌধুরী, অ্যাটর্নি খায়রুল বাশার, ইমাম কাজী কাইয়্যুম, মোহাম্মদ নাসির শিকদার, ঝর্না চৌধুরী, শামসুদ্দিন বশির, রানু ফেরদৌস, আব্দুল কাইয়ুম, আহমেদ হোসেন, ডাক্তার এম হাসান, বেনজীর শিকদার, জাহিদা আলম, আমানউদ্দৌলা, মুকুল হক, আজাদ উদ্দিন, মামুনুর রশীদ চৌধুরী, আবুল কালাম আজাদ, ফারমিছ আখতার, তাজউদ্দিন আহমেদ, মনিজা রহমান, জয়তূর্য চৌধুরী, এডভোকেট জয় আচার্য ও শামীম আহমেদ সিদ্দিকী, ফরিদা ইয়াসমীন, প্রতীক রহমান, ফটো সাংবাদিক সানাউল হক, আমজাদ হোসেন, জুলহাস কবির, মোহাম্মদ দিপু, অনির্বাণ খন্দকার, এমবি তুষার, রেজাউল করিম রাজু, এমএইচ পাহলভি, সানজিদা উর্মী, সানজিদা আখতার, আবু নাসের, রিনা শাহা, মোহাম্মদ কে আহমেদ, সুজন মিয়া।

ইমাম কাজী কাইয়্যুম বক্তব্য দেন ও ইফতারের জন্য আজান দেন। তিনি প্রথম আলো উত্তর আমেরিকা সংশ্লিষ্ট সবাইকে প্রাণবন্ত অনুষ্ঠান উপহার দেয়ার জন্য ধন্যবাদ জানান। ইফতার ও নৈশভোজের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শেষ হয়।

অনুষ্ঠান শেষে সতর্কভাবে অসতর্ক অনুষ্ঠান বিন্যাসে প্রথম আলো উত্তর আমেরিকার আট বছরে পদার্পণ এবং সিবিএন টিভির যাত্রা লগ্ন অনেকের কাছেই স্মরণীয় থাকবে বলে অতিথিরা উল্লেখ করেন।

প্রথম আলো উত্তর আমেরিকা অষ্টম বর্ষে পদার্পণ এবং সিবিএন টিভির উদ্বোধন উপলক্ষে ১১২ পৃষ্ঠার একটি পৃথক ম্যাগাজিন প্রকাশিত হয়েছে। অনুষ্ঠানে বিশেষ সহযোগিতা করেছে এসেনশিয়াল হোম কেয়ার, রাজু ল’ ফার্ম এবং আব্রাহাম ল’ গ্রুপ।