সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪

শিরোনাম

ব্রিকসে যোগদান ও রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধানে বাংলাদেশের পাশে থাকবে চীন

বৃহস্পতিবার, আগস্ট ২৪, ২০২৩

প্রিন্ট করুন

জোহানেসবার্গ, দক্ষিণ আফ্রিকা: ব্রিকসে যোগদান ও রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধান নিশ্চিতে চীন সব সময় বাংলাদেশের পাশে থাকবে বলে আশ্বস্ত করেছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং।

পররাষ্ট্র মন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন শির উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন, ‘আপনি ব্রিকসে যোগ দিতে পারলে আমি আপনাকে (শেখ হাসিনা) সব সময় সমর্থন করব।’

১৫তম ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে বুধবার (২৩ আগস্ট) বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এসব আশ্বাস দেন।

চীনা প্রেসিডেন্ট আরো বলেছেন, ‘রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী সমাধানে বাংলাদেশকে সহায়তা করবে চীন। আমরা এই অঞ্চলে অস্থিতিশীলতা চাই না।’

বুধবার (২৩ আগস্ট) সন্ধ্যায় হোটেল হিলটন স্যান্ডটনে বৈঠক শেষে মোমেন সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলেছেন, ‘শি চীন, বাংলাদেশ ও মায়ানমারের ত্রিপক্ষীয় সম্পৃক্ততার মাধ্যমে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান করতে চান।’

চীনের প্রেসিডেন্টের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনি ব্রিকসে যোগ দিতে পারলে আমি আপনাকে (শেখ হাসিনা) সব সময় সমর্থন করব।’

মোমেন জানান, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তার সরকার রোহিঙ্গাদের তাদের মাতৃভূমিতে প্রত্যাবাসন করতে চায়। কারণ, তারা এই অঞ্চলের শান্তির জন্য হুমকি হয়ে উঠছে। কারণ, তাদের মধ্যে অনেকেই অবৈধ মাদক ও অস্ত্র ব্যবসায় জড়িয়ে গেছে।

তিনি বলেন, ‘উন্নয়নের জন্য শান্তি অপরিহার্য।’

চীনের প্রেসিডেন্ট রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে বাংলাদেশকে সব সময় সমর্থন দিয়ে যাবে ও বাংলাদেশের জ্বালানি, নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও অবকাঠামো উন্নয়নে সহায়তা করতে তার দেশের আগ্রহের কথা জানান।

শি বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলায় পরিণত করতে সহযোগিতার ও আশ্বাস দেন।

তিনি আরো বলেন, ‘একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ ‘সোনার বাংলা’ গড়ার স্বপ্নকে সম্ভাব্য দ্রুততম সময়ে বাস্তবায়িত করতে চীন আপনাকে সাহায্য করবে।’

প্রধানমন্ত্রী চীনা অর্থায়নে পরিচালিত কিছু প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়নে শি জিনপিংয়ের সহায়তা চেয়েছেন; যা এখন তহবিল সংকটের জন্য আটকে রয়েছে। চীনা প্রেসিডেন্ট বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দেন।

আলোচনাকালে শেখ হাসিনা বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়ে বলেন, ‘বাংলাদেশ বর্তমানে প্রতি বছর প্রায় দুই হাজার কোটি মার্কিন ডলারের চীনা পণ্য আমদানি করেছে, যেখানে চীন মাত্র ৭০ কোটি মার্কিন ডলারের বাংলাদেশি পণ্য আমদানি করেছে।’

চীনের প্রেসিডেন্ট আশ্বস্ত করেছেন, চীন-বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্যিক ঘাটতি হ্রাস করার উদ্যোগ নেবেন।

তিনি জানান, চীনের বাজারে ৯৮ শতাংশ বাংলাদেশী পণ্যে শুল্ক ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার দেয়া হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশে কিছু চীনা বিনিয়োগ এলে বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য ব্যবধান কমবে।

তিনি দুই দেশের মধ্যে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি (পিটিএ) সইয়ের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।

উত্তরে চীনা প্রেসিডেন্ট বলেছেন, ‘আমরা দেশগুলির মধ্যে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি সইয়ের জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নেব।’

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ চীনে তাজা ফল যেমন আম, কাঁঠাল, পেয়ারা, তাজা শাক-সবজি এবং গবাদি পশু ও হাঁস-মুরগির খাদ্য রপ্তানি করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।’

মোমেন বলেন, ‘শি জিনপিং এসব বিষয় নিয়ে অবশ্যই বিবেচনা করার আশ্বাস দিয়েছেন।’

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী আগামী অক্টোবরে পদ্মা রেল সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান প্রত্যক্ষ করতে চীনের প্রেসিডেন্টকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।

জবাবে চীনা প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমি অবশ্যই আপনার দেশে আসব। তবে, দুই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রীর মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে সফরের সময় নির্ধারণ করা হবে।’

মোমেন জানান, শি জিন পিং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকেও চীন সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।

জবাবে শেখ হাসিনা বলেছেন, তিনি চীন সফর করবেন। তবে, সময় লাগতে পারে। কারণ, জাতীয় নির্বাচন দরজায় কড়া নাড়ছে। তিনি নির্বাচনী প্রচারে ব্যস্ত থাকবেন।

এ দিকে, শেখ হাসিনা চীনের প্রেসিডেন্টকে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের চীনে পড়াশোনার সুযোগ বাড়ানোর আহ্বান জানান এবং শি জিন পিং বিষয়টি দেখবেন বলে আশ্বাস দেন।

শেখ হাসিনা জোহানেসবার্গে ২২-২৪ আগস্টের ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে মঙ্গলবার (২২ আগস্ট) এখানে পৌঁছেছেন।

তিনি বৃহস্পতিবার (২৪ আগস্ট) ৭০টি দেশের প্রতিনিধির সমন্বয়ে ফ্রেন্ডস অফ ব্রিকস লিডারস ডায়ালগ (ব্রিকস-আফ্রিকা আউটরিচ ও ব্রিকস প্লাস ডায়ালগ) ‘ব্রিক্সের নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক’ এর সদস্য হিসেবে বাংলাদেশের পক্ষে বক্তৃতা দেবেন।

চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং সোমবার (২১ আগস্ট) মধ্যরাতে দক্ষিণ আফ্রিকায় পৌঁছেছেন।

বৈঠকে একে আব্দুল মোমেন, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান, প্রধানমন্ত্রীর কন্যা ও ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের বিষয়ভিত্তিক অ্যাম্বাসেডর এবং অটিজম ও নিউরোডেভেলপমেন্টাল ডিসঅর্ডার বিষয়ক জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারপারসন সায়মা ওয়াজেদ, প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাসুদ বিন মোমেন উপস্থিত ছিলেন।