রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪

শিরোনাম

যোগাযোগ করেছে সোমালিয়ান দস্যুরা, দাবির ব্যাপারে মন্তব্য করছে না মালিকপক্ষ

বুধবার, মার্চ ২০, ২০২৪

প্রিন্ট করুন

চট্টগ্রাম: বাংলাদেশি ২৩ নাবিকসহ জিম্মি ‘এমভি আবদুল্লাহ’ জাহাজের মালিকপক্ষের সাথে যোগাযোগ করেছে সোমালিয়ান জলদস্যুরা। বুধবার (২০ মার্চ) দুপুরে এ যোগাযোগ হয় বলে জানিয়েছে কবির গ্রুপের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম।

সংবাদ মাধ্যমকে তিনি জানান, জিম্মি হওয়ার নয় দিন পর সোমালিয়ার দস্যুরা যোগাযোগ করেছে। আশা করা যাচ্ছে, উভয়পক্ষের আলোচনায় ব্যাপারটি সমঝোতার পর্যায়ে আসবে। জাহাজের জিম্মি নাবিকরা সুস্থভাবে ফিরে আসবেন।

তবে, জলদস্যুুদের দাবি-দাওয়া ব্যাপারে সংবাদ মাধ্যমে তিনি কোন মন্তব্য করেননি।

এ দিকে, এমভি আব্দুল্লাহর সাথে আনুষ্ঠানিক যোগাযোগের ব্যাপারটি জানিয়েছেন নৌপরিবহন অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) কমডোর মোহাম্মদ মাকসুদ আলমও।

তিনি বলেন, ‘ভারত মহাসাগরে সোমালীয় জলদস্যুদের কবলে পড়া বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহর এক ক্যাপ্টেনের সাথে যোগাযোগ হয়েছে। তাদের উদ্ধারের ব্যাপারে ইতিবাচক আলোচনাও হয়েছে সোমালিয়ান জলদস্যুদের সাথে।’

মোহাম্মদ মাকসুদ আলম আরো বলেন, ‘সোমালিয়ান জলদস্যুদের সাথে প্রথম বারের মতে যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছে। জলদস্যুদের কাছে জিম্মি নাবিক ও ক্রুদের উদ্ধারের ব্যাপারে ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে। শিগগিরই নাবিক-ক্রুদের উদ্ধারের ব্যাপারে উদ্যোগ নেয়া হবে।’

তবে, আলোচনার শর্ত গোপনীয়তার স্বার্থে বাংলাদেশি মধ্যস্থতাকারীর ব্যাপারে কোন তথ্য দেয়া হবে না বলেও জানান।

এর পূর্বে, সোমালিয়ার পুলিশ ও আন্তর্জাতিক নৌবাহিনীর সম্মিলিত দলের কমান্ডো অভিযান চালানোর কথা শোনা গেলেও জাহাজটির মালিকপক্ষ দাবি করে, এ ব্যাপারে কিছু জানেন না তারা। আবার শনিবার (১৬ মার্চ) রাতের পর ওই জাহাজ থেকেও যোগাযোগ করা যাচ্ছিল না। এ অবস্থায় তৈরি হয় উভয় সংকট।

এ দিকে, বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ক্যাপ্টেন এম আনাম চৌধুরীর মতে, এখন জাহাজ পুরোপুরি দস্যুদের নিয়ন্ত্রণে। এ অবস্থায় অভিযান চালালে দস্যুরা ছেড়ে কথা বলবে না। তারাও আক্রমণ করবে। এমনকি নাবিকদের মেরে ফেলতে পারে তারা। এতে হিতে বিপরীত হতে পারে।

গেল ১২ মার্চ জাহাজ জিম্মির পর বেশ কয়েক বার অবস্থান পরিবর্তন করা হয়েছে বলে জানা গেছে। ১৪ মার্চ রাতে সোমালিয়ার গারাকাদ উপকূল থেকে সাত নটিক্যাল মাইল দূরে দস্যুরা প্রথমে জাহাজটি নোঙর করে। এরপর গারাকাদ উপকূল থেকে সরিয়ে ১৫ মার্চ ৫০ নটিক্যাল মাইল উত্তরে জাহাজটিকে নিয়ে যায়। এরপর গদবজিরান উপকূল থেকে মাত্র চার নটিক্যাল মাইল দূরে জাহাজটির সবশেষ অবস্থান শনাক্ত করা হয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘ঘনঘন অবস্থান পরিবর্তন বুঝিয়ে দিচ্ছে দস্যুরা নিজেদের পূর্ণ নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে জাহাজটিকে নিতে এত বার অবস্থান বদলেছে। ফলে, এ অবস্থায় হুট করেই অভিযান চালানো ঠিক হবে না।

অন্য দিকে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে জাহাজ বিস্ফোরণের শঙ্কা। আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিক থেকে ৫৫ হাজার মেট্রিক টন কয়লা নিয়ে যাওয়ার কথা দুবাইতে। আর কয়লা বোঝাই করার পর থেকে প্রতি ২৪ ঘণ্টায় এ কয়লা পরিমাপ করার প্রয়োজন পড়ে। দাহ্য পদার্থ হওয়ায় এ কয়লা থেকে প্রচুর পরিমাণ মিথেন গ্যাস উৎপাদন হয় ও কমে যায় অক্সিজেনের পরিমাণ। তাই, সামান্য আগুন বা একটু ফুলকির ছোঁয়ায় বিস্ফোরণে উড়ে যেতে পারে এ জাহাজ।

এর পূর্বে, সোমবার (১৮ মার্চ) প্রতিবেদনে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, সোমালিয়ার পুন্টল্যান্ড এলাকাটি অসংখ্য জলদস্যু চক্রের ঘাঁটি। আধাস্বায়ত্তশাসিত এ অঞ্চলটির পুলিশ বাহিনী জানিয়েছে, তারা উচ্চ সতর্কতায় রয়েছে এবং এমভি আবদুল্লাহকে জব্দ করা জলদস্যুদের বিরুদ্ধে অভিযানে অংশ নিতে প্রস্তুতি নিয়েছে।

বিবৃতিতে পুন্টল্যান্ড পুলিশ বলেছে, ‘আন্তর্জাতিক নৌবাহিনী অভিযানের পরিকল্পনা করছে- এমন রিপোর্ট পাওয়ার পর পুন্টল্যান্ড পুলিশ বাহিনীও প্রস্তুত রয়েছে।

এসবের মধ্যেই রোববার (১৭ মার্চ) ভারত মহাসাগরে বিশেষ কমান্ডো অভিযান চালিয়ে সোমালিয়ার জলদস্যুদের ছিনতাই করা একটি বাণিজ্যিক জাহাজ দখলে নেয় ভারতের নৌবাহিনী। মাল্টার পতাকাবাহী ‘এমভি রুয়েন’ নামের ওই জাহাজটি গেল বছরের শেষ দিকে ছিনতাই করেছিল সোমালিয়ার জলদস্যুরা।