বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪

শিরোনাম

টেলিনর এশিয়া/বাংলাদেশে আরো উন্নত ডিজিটাল জীবনযাত্রার জন্য দরকার ভবিষ্যৎমুখী নীতিমালা

শুক্রবার, সেপ্টেম্বর ২২, ২০২৩

প্রিন্ট করুন

ঢাকা: এশিয়ার অন্যতম শীর্ষ টেলকো-টেক প্রতিষ্ঠান এবং গ্রামীণফোনের প্রধান বিনিয়োগকারী টেলিনর এশিয়া ‘বিল্ডিং বেটার ডিজিটাল লাইভস ফর এ স্মার্ট বাংলাদেশ’ শীর্ষক অনুষ্ঠান করেছে। মঙ্গলবার (১৯ সেপ্টেম্বর) শেরাটন ঢাকায় আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে অংশস দেশের শীর্ষ পর্যায়ের সরকারী কর্মকর্তা ও শিল্পনেতারাসহ বিভিন্ন খাতের অংশীজনেরা অংশ নেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় আইসিটি বিভাগের সচিব মো. সামসুল আরেফিন। তিনি একটি আধুনিক, শিক্ষা-ভিত্তিক সমাজ গড়ে তোলার মাধ্যমে বর্তমান সরকারের স্মার্ট বাংলাদেশ ২০৪১ রূপকল্প বাস্তবায়নের প্রসঙ্গ তুলেন। এই বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার অনন্য অংশ হিসেবে তিনি মোবাইল কানেক্টিভিটির ক্ষমতা ও সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করেন।

সামসুল আরেফিন বলেন, ‘বাংলাদেশের লক্ষ লক্ষ মানুষের সংযোগের জন্য ডিজিটাল অবকাঠামো মৌলিক। সুতরাং, আমাদের সম্মিলিত অগ্রাধিকার হওয়া উচিৎ স্মার্ট বাংলাদেশ ২০৪১ এর রূপকল্প বাস্তবায়নের জন্য ব্রডব্যান্ডের বিপুল শক্তি ও সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো। সেই সাথে, আরো বেশি সংখ্যক মানুষ যেন তথ্য প্রযুক্তি সুবিধার আওতায় আসতে পারেন এবং এর মাধ্যমে দক্ষতার বিকাশ ঘটিয়ে জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন ঘটাতে পারেন, সেই লক্ষ্যে আমাদের কাজ করতে হবে।’

টেলিনর এশিয়ার সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মনীষা ডোগরার সঞ্চলনায় প্যানেল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে টেলিনর এশিয়ার ‘ডিজিটাল লাইভস ডিকোডেড’ শীর্ষক রিপোর্টটি তুলে ধরা হয়। রিপোর্টটিতে সামাজিক রূপান্তর, কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি ও নতুন সম্ভাবনার বিকাশে মোবাইল সংযোগের কার্যকারীতা প্রসঙ্গে এশিয়ার আটটি দেশের আট হাজারেরও বেশি ব্যক্তির উপর পরিচালিত জরিপ থেকে প্রাপ্ত তথ্য-প্রমাণাদি উপস্থাপিত হয়েছে।

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ও আইসিটি বিভাগের উচ্চ পদস্থ প্রতিনিধিবৃন্দ এবং অন্যান্য শিল্পনেতাদের অংশগ্রহণে তথ্যবহুল ও প্রাণবন্ত আলোচনা পর্ব আয়োজনটিকে আরো উপভোগ্য করে তোলে। আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল স্মার্ট বাংলাদেশ ২০৪১ লক্ষ্যের সফল বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় নীতিমালা ও উপকরণগুলো। এর পাশাপাশি সরকারি ও বেসরকারি খাতের অংশীদারিত্ব উৎসাহিত করা, সাইবার-নিরাপত্তা নিশ্চিতে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলা, এই খাতে কার্যকরী নীতিমালা গঠন ও সংবেদনশীল তথ্যের গোপনীয়তা বজায় রাখা ও অবকাঠামো তৈরি নিয়েও আলোচনা করা হয়।

সমাপনী বক্তব্যে অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি বিটিআরসির ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অপারেশনস বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. এহসানুল কবির বলেন, ‘মোবাইল সংযোগ স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার অন্যতম মৌলিক উপকরণ। তাই, এক্ষেত্রে, নানাবিধ সমাধান খুঁজে বের করতে আমাদের প্রয়োজন আরো কার্যকরী যৌথ প্রচেষ্টা। সার্বজনীন ও অর্থপূর্ণ আন্তসংযোগ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাংলাদেশের ডিজিটাল রূপান্তর সহজতর করার জন্য আমাদের একযোগে একটি ভবিষ্যতমুখী ও টেকসই টেলিকম অবকাঠামো ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।’

গ্রামীণফোনের চিফ বিজনেস অফিসার আসিফ নাইমুর রশিদ বলেন, ‘দেশের জনসাধারণের প্রাত্যহিক জীবনের নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা ও আর্থ-সামাজিক অগ্রগতির যাত্রায় কানেক্টিভিটির অপার সম্ভাবনা নিয়ে সব সময় পাশে রয়েছে গ্রামীণফোন। আমরা গ্রাহকদেরকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিয়ে থাকি। তাদের পরিবর্তনশীল চাহিদা পূরণে সেরা অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করাই আমাদের লক্ষ্য। স্মার্ট বাংলাদেশ রূপকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে দৃপ্ত পদক্ষেপে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। আর এই যাত্রায় প্রযুক্তি খাতে সকলের অন্তর্ভুক্তি ও অংশগ্রহণ নিশ্চিতে কাজ করে যাচ্ছে গ্রামীণফোন। ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে সংযুক্ত একটি সমাজব্যবস্থা তৈরির লক্ষ্যে আমরা প্রযুক্তি ও সক্ষমতা বৃদ্ধিতে আমাদের বিনিয়োগ অব্যাহত রাখব। বিগত দুই দশক ধরে দেশের উন্নয়ন অভিযাত্রায় বিশ্বস্ত অংশীদার হিসেবে ভূমিকা পালন করছে গ্রামীণফোন। আর বহুল প্রতীক্ষিত স্মার্ট বাংলাদেশ রূপকল্প বাস্তবায়ন ও ডিজিটালি কানেক্টেড সমাজ প্রতিষ্ঠার সহযোগীতায় আমাদের ভূমিকা এখন দৃঢ়তর হয়ে উঠেছে।’

মনীষা ডোগরা বলেন, ‘আজকের আলোচনায় এটি স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে যে, বাংলাদেশের উন্নত ডিজিটাল জীবনযাত্রা নিশ্চিত করার জন্য মোবাইল কানেক্টিভিটির ভবিষৎযাত্রাকে সাদরে গ্রহণ করা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের ডিজিটাল লাইভস ডিকোডেড গবেষণা এটিই তুলে ধরে যে, মোবাইল সংযোগ মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত করে, আরো বেশি অর্থনৈতিক সুযোগ তৈরি করে এবং শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের মত প্রয়োজনীয় পরিষেবাগুলোর প্রাপ্তি সহজতর করে তোলে। বাংলাদেশে মোবাইলের ব্যবহার বৃদ্ধি করা এবং একটি প্রতিযোগিতামূলক ও সমৃদ্ধ ডিজিটাল অর্থনীতি প্রতিষ্ঠার জন্য ভবিষ্যতমুখী নীতিমালা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যা উদ্ভাবন ও নতুন প্রযুক্তির গ্রহণকে উৎসাহিত করবে। আমাদের একযোগে এই উদ্ভাবনী যাত্রা অব্যাহত রাখতে হবে, একে অপরের শক্তি ও দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে ভবিষ্যতের সম্ভাবনাগুলোকে কাজে লাগাতে হবে এবং এমনভাবে স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়ন করতে হবে, যা সকলের জন্য কল্যাণ বয়ে আনে।’

টেলিনর এশিয়া ডিজিটাল লাইভস ডিকোডেড রিপোর্টের তিনটি অধ্যায়ে এশিয়ার আটটি দেশ (বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, পাকিস্তান, ফিলিপাইনস, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম) থেকে আট হাজারেরও বেশি ব্যক্তির তথ্য যাচাই করা হয়েছে। এই প্রকাশনাটির লক্ষ্য মূলত মোবাইল কানেক্টিভিটির প্রসঙ্গে অংশগ্রহণকারীদের মনোভাব ও আচরণ বিশ্লেষণ করা এবং কীভাবে এটি এশিয়া অঞ্চলে জনগণের জীবনযাত্রা, পেশা ও বিনোদনকে প্রভাবিত করছে, তা অনুসন্ধান করা। অংশগ্রহণকারীদের লিঙ্গ ও বয়সের ভিত্তিতে ভিন্ন ভিন্ন শ্রেণীতে ভাগ করা হয়। এক্ষেত্রে, ১৮ বছর ও তদুর্দ্ধ ব্যক্তিদের আলাদা করার পাশাপাশি জেন জি (জন্ম সাল ১৯৯৭-২০১২), মিলেনিয়াল (জন্মসাল ১৯৮১-১৯৯৬); জেন এক্স (জন্মসাল ১৯৬৫-১৯৮০) এবং বেবি বুমারস (জন্মসাল ১৯৪৬-১৯৬৪)- এই চারটি ভিন্ন প্রজন্মের সদস্য হিসেবে অংশগ্রহণকারীদের আলাদা করা হয়।