সোমবার, ০৬ মে ২০২৪

শিরোনাম

ইসলামের দৃষ্টিতে হৃদয়ের পবিত্রতা

রবিবার, ডিসেম্বর ৩, ২০২৩

প্রিন্ট করুন

আলেমা হাবিবা আক্তার: ইসলামের দৃষ্টিতে বাহ্যিক পবিত্রতার মত মানুষের আত্মিক পরিচ্ছন্নতাও অপরিহার্য। ব্যক্তির অন্তর যদি পরিচ্ছন্ন না হয়, তবে তার পরকালীন মুক্তি অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। আবদুল্লাহ বিন আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহকে (সা.) বলা হল, ‘কোন্ ব্যক্তি সর্বোত্তম?’ তিনি বলেন, ‘প্রত্যেক বিশুদ্ধ হৃদয়ের অধিকারী সত্যভাষী ব্যক্তি।’ তারা বলেন, ‘সত্যভাষীকে তো আমরা চিনি; কিন্তু বিশুদ্ধ হৃদয়ের ব্যক্তি কে?’ মহানবী বলেন, ‘সে হল পূত-পবিত্র নিষ্কলুষ চরিত্রের মানুষ; যার কোন গুনাহ নেই, নেই কোন দুশমনি, হিংসা-বিদ্বেষ, আত্ম-অহমিকা ও কপটতা।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪২১৬)

আত্মিক পরিচ্ছন্নতার গুরুত্ব: কোরআন ও হাদিসে আত্মিক পরিচ্ছন্নতার গুরুত্ব বিভিন্নভাবে তুলে ধরা হয়েছে। যেমন-

জান্নাতিদের বৈশিষ্ট্য: অন্তরের পবিত্রতা জান্নাতিদের বৈশিষ্ট্য। কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি তাদের হৃদয় থেকে বিদ্বেষ দূর করব; তারা ভ্রাতৃভাবে পরস্পর মুখোমুখি হয়ে আসনে অবস্থান করবে।’ (সুরা হিজর, আয়াত: ৪৭)

জান্নাত লাভের কারণ: আল্লাহ পরকালে পরিচ্ছন্ন অন্তরের অধিকারীদের জান্নাত দান করবেন। একটি দীর্ঘ হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) এক ব্যক্তির বিষয়ে জান্নাতি বলে সাক্ষ্য দেন। পরবর্তী কারণ অনুসন্ধান করলে, ওই ব্যক্তি বলেন, ‘আমি আমার হৃদয়ে কোন মুসলমানের বিষয়ৈ বিদ্বেষ পোষণ করি না। আল্লাহ কাউকে কোন কল্যাণ দান করলে আমি হিংসা করি না।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ১২৭২০)

মুমিনের বৈশিষ্ট্য: মুমিনের হৃদয়ের পরিচ্ছন্নতা মুমিনের বৈশিষ্ট্য। কেননা রাসুলুল্লাহের (সা.) নির্দেশ হল, ‘তোমরা পরস্পর হিংসা-বিদ্বেষ কর না এবং একে অন্যের দিকে পিঠ ফিরিয়ে থেকো না, বরং তোমরা আল্লাহর বান্দা ভাই ভাই হয়ে থাক; কোন মুসলিমের জন্য তার কোন মুসলিম ভাইকে তিন রাতের অধিক ত্যাগ করা বৈধ নয়।’ (মুয়াত্তায়ে মালিক, হাদিস : ১৪)

সাফল্যের মাপকাঠি: নবী-রাসুলদের পরে সাহাবায়ে কেরাম (রা.) ছিলেন পরিচ্ছন্ন অন্তরের সর্বোত্তম দৃষ্টান্ত। কোরআনে তাদের বিষয়ৈ ইরশাদ হয়েছে, ‘মুহাজিরদের যা দেয়া হয়েছে, তার জন্য তারা অন্তরে আকাঙ্ক্ষা পোষণ করে না, আর তারা তাদের নিজেদের ওপর অগ্রাধিকার দেয় নিজেরা অভাবগ্রস্ত হলেও। যাদের হৃদয়ের কার্পণ্য থেকে মুক্ত রাখা হয়েছে, তারাই সফলকাম।’ (সুরা হাশর, আয়াত: ৯)

আমলের দাম নির্ধারণকারী: সাহাবায়ে কেরাম (রা.) হৃদয়ের পবিত্রাকে অধিক পরিমাণ আমল করার চেয়ে গুরুত্ব দিতেন। ইয়াস বিন মুয়াবিয়া বিন কুররা (রা.) বলেন, ‘তাদের কাছে সর্বোত্তম ব্যক্তি বিবেচিত হত, যার অন্তর বেশি পরিশুদ্ধ ও পরনিন্দা কম করত।’ (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হাদিস: ৩৬১৯৪)

পরকালীন মুক্তির উপায়: পরকালীন মুক্তির সবচেয়ে বড় অবলম্বন হবে পরিচ্ছন্ন হৃদয়। আল্লাহ বলেন, ‘যেদিন ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি কোন কাজে আসবে না; সেই দিন উপকৃত হবে কেবল সে, যে আল্লাহর কাছে আসবে বিশুদ্ধ অন্তঃকরণ নিয়ে।’ (সুরা আশ-শুআরা, আয়াত: ৮৮-৮৯)

অধিক প্রতিদান লাভের উপায়: অন্তরের পরিচ্ছন্নতার মাধ্যমে ব্যক্তি অল্প আমলের মাধ্যমে অধিক পরিমাণ প্রতিদান লাভ করে থাকে। সুফিয়ান বিন দিনার (রহ.) আবু বশিরকে (রহ.) বলেন, ‘আমাকে পূর্বসূরিদের আমল সম্পর্কে বলুন, ‘তারা অল্প পরিমাণ আমল করতেন ও অধিক পরিমাণ প্রতিদান পেতেন।’ আমি বললাম, এর কারণ কী? তাদের অন্তরের পরিচ্ছন্নতার জন্য।’ (আল-জুহুদ, পৃষ্ঠা ২৩৮)