সোমবার, ০৬ মে ২০২৪

শিরোনাম

উম্মতের দরুদ যেমন করে মদিনায় পৌঁছে

শনিবার, অক্টোবর ৭, ২০২৩

প্রিন্ট করুন

মহানবী রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি দরুদ-সালাম পড়া একটি স্বতন্ত্র ইবাদত। তার নাম শুনলে দরুদ পাঠ করা তার প্রতি ভালবাসার অন্যতম নিদর্শন। উম্মতের পঠিত দরুদ-সালাম তার কাছে পৌঁছে দেয়া হয়। তিনি শোনেন ও জবাব দেন।

দরুদ-সালাম পড়ার নির্দেশনা: নামাজ, রোজা, হজ ও জাকাতসহ অন্যান্য ইবাদত-বন্দেগির মত নবীর (সা.) প্রতি দরুদ-সালাম পড়ার নির্দেশনা কোরআন-হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহ রাসুলের প্রতি দরুদ-সালাম পড়ার নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ নবীর প্রতি রহমত নাজিল করেন ও তার ফেরেশতারাও নবীর জন্য রহমতের দোয়া করে। হে ঈমানদারগণ! তোমরাও নবীর প্রতি রহমতের দোয়া করো ও তাকে যথাযথভাবে সালাম জানাও।’ (সুরা : আহযাব, আয়াত: ৫৬)

দরুদ-সালাম পাঠের ফজিলত: রাসুলুল্লাহর (সা.) প্রতি দরুদ-সালাম পাঠের ফজিলত ও মর্যাদা অনেক বেশি। দুনিয়া ও পরকালে দরুদ-সালাম পাঠকারীর জন্য সৌভাগ্যের সব দরজা খুলে যায়। দরুদ-সালাম পড়ার বিভিন্ন মর্যাদার কথা হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি আমার প্রতি এক বার দরুদ পাঠাবে, আল্লাহ তার ওপর দশ বার রহমত বর্ষণ করেন।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৪০৮)

দূরবর্তীদের দরুদ-সালাম পৌঁছানো হয়: রাসুলের (সা.) যে কোন উম্মত, পৃথিবীর যে কোন প্রান্ত থেকে তার প্রতি দরুদ-সালাম পড়লে ফেরেশতারা তা তার কাছে পৌঁছে দেন। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর নির্ধারিত এক দল ফেরেশতা রয়েছেন, যারা দুনিয়ায় ঘুরে বেড়ান ও আমার উম্মতের সালাম আমার কাছে পৌঁছে দেন।’ (সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস : ৯১৪)। আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা তোমাদের ঘরগুলোকে কবরে পরিণত করো না। আর আমার কবরে উৎসব কর না। আমার ওপর দরুদ পাঠাও। কেননা তোমরা যেখানেই থাক, তোমাদের দরুদ আমার কাছে পৌঁছবে।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ২০৪২; শুআবুল ঈমান, হাদিস : ৩৮৬৫)

নিকটবর্তীদের দরুদ-সালাম শোনেন: নবীর (সা.) কবরের পাশ থেকে দরুদ-সালাম পেশ করলে তিনি তা শোনেন। মৃত্যুর স্বাদ নেয়ার মাধ্যমে নবীদের দুনিয়ার জীবনের শেষ হয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘তুমি তো মরণশীল ও তারাও মরণশীল’ (সুরা : জুমার, আয়াত : ৩০); তবে, মৃত্যুর পর তারা আল্লাহর পক্ষ থেকে এক বিশেষ জীবন লাভ করেন। নবীদের কবরের জীবনের বৈশিষ্ট্য হল কবরে সাধারণ মুমিন ও শহীদদের জীবন থেকে নবীদের জীবন পূর্ণাঙ্গ ও উন্নত। এ ছাড়া, পৃথিবীর জীবনের সাথে কবরের জীবনের কিছু মিল রয়েছে। যেমন- কবরে তাদের দেহ সুরক্ষিত রয়েছে। (আবু দাউদ, হাদিস: ১০৪৭; মুসনাদে আহমাদ, হাদিস: ১৬১৬২)

তারা কবরে নামাজ পড়েন। (মুসনাদে আবু ইয়ালা, হাদিস: ৩৪২৫)

মুসা (আ.) তার কবরে স্বশরীরে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করার বিষয়টি নবী (সা.) উল্লেখ করেছেন। (মুসলিম, হাদিস : ২৩৪৭)

আল্লাহর পক্ষ থেকে তারা বিশেষ রিজিকপ্রাপ্ত। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৬৩৭)

তাদের কবরের নিকটে গিয়ে দরুদ-সালাম পেশ করলে তারা তা সরাসরি শোনেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে আমার কবরের পাশে আমার ওপর দরুদ পেশ করে, আমি তা শুনি। আর যে দূরে থেকে আমার ওপর দরুদ পড়ে, তা আমার কাছে পৌঁছানো হয়।’ (ফাতহুল বারি, ৬/৬০৫, আল-কাওলুল বাদি, পৃষ্ঠা ১৬০)

রাসুলুল্লাহ (সা.) সালামের জবাব দেন: কেউ নবীকে (সা.) সালাম দিলে তিনি উত্তর দেন। দিন-রাত সর্বাবস্থায়ই কবরের কাছ থেকে ও দূর থেকে নবীর (সা.) ওপর সালাত ও সালাম অব্যাহত থাকে। সারাক্ষণ কেউ না কেউ কোন না কোনভাবে দরুদ-সালাম পেশ করতে থাকে, আর নবীর (সা.) উত্তর দিতে থাকেন। আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কোন ব্যক্তি যখন আমার ওপর সালাম পেশ করে, তখন আল্লাহ আমার মধ্যে আমার আত্মা ফিরিয়ে দেন। ফলে আমি তার সালামের জবাব দিই।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ২০৪১)

পরিশেষে বলা যায়, ‘নবীকে (সা.) বিশ্ববাসীর জন্য রহমতস্বরূপ পাঠিছেন আল্লাহ। তিনি উম্মতের প্রতি অত্যন্ত দয়ার্দ্র ও স্নেহশীল ছিলেন। উম্মতের কল্যাণে তিনি সব সময় ব্যাকুল থাকতেন। এই উম্মতের ওপর তার অবারিত অনুগ্রহ রয়েছে। এর অন্যতম দাবি হল- তার প্রতি দরুদ-সালামের নাজরানা পেশ করা। তার প্রতি পঠিত দরুদ-সালাম তার কাছে পৌঁছে যায়।’