রবিবার, ০৫ মে ২০২৪

শিরোনাম

মেয়র হিসেবে দুই বছর: প্রতিশ্রুতি পূরণে নগরবাসীর সহযোগিতা চাই

রবিবার, ফেব্রুয়ারী ২৬, ২০২৩

প্রিন্ট করুন
রেজাউল করিম চৌধুরী

মো. রেজাউল করিম চৌধুরী: চট্টগ্রাম সিটি করপোশনের (চসিক) মেয়র হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব গ্রহণের দুই বছর পূর্ণ হল গত ১৫ ফেব্রুয়ারী। ২০২১ সালের ২৭ জানুয়ারী অনুষ্ঠিত চসিকের ষষ্ঠ নির্বাচনে প্রিয় নগরবাসী তাদের প্রত্যক্ষ ভোটে আমাকে বিজয়ী করে। ১৫ ফেব্রুয়ারী আমি আনুষ্ঠানিকভাবে চসিকের মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছিলাম। সময়টা ছিল অত্যন্ত কঠিন। শুধু চট্টগ্রাম কিংবা বাংলাদেশ জন্য নয়, গোটা বিশ্ব তখন মৃত্যুর মিছিলে সামিল। অতিমাত্রায় দ্রুত সংক্রমনশীল করোনা ভাইরাসের থাবায় বিশ্বের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড থমকে দাঁড়িয়েছিল, বিপর্যস্ত হয় বিশ্ব অর্থনীতি। মৃত্যুর মিছিল যেন কখনোই থামার নয়। বাংলাদেশ সম্পর্কে করোনায় মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার আশংকাজনক মন্তব্যে বিরাজ করছিল অস্বাভাবিক আতংক। শেখ হাসিনার দুরদর্শী ও সাহসী পরিকল্পনা, সময়োচিৎ নানা পদক্ষেপকে কার্যকর করতে আমরা নেমে পড়ি করোনার বিরুদ্ধে বিরামহীন কঠিন এক যুদ্ধে। নগরবাসীর জন্য নিয়মিত সেবা কার্যক্রমকে অব্যাহত রেখেই আমরা লড়ে গেছি করোনার বিরুদ্ধে। ব্যাপকহারে টিকাদান কর্মসূচী বাস্তবায়ন, পর্যাপ্ত আইসোলেশন সেন্টার পরিচালনা, আইসিইউ ও ভ্যান্টিলেশনের ব্যবস্থা নিতে দক্ষতার সাথে কাজ করেছে করপোরেশন।

নগরবাসীকে স্বাস্থ্য সচেতন করতে ও করোনা থেকে বাঁচতে করণীয় সম্পর্কে অবহিত করতে ব্যাপক প্রচারণা কার্যক্রম পরিচালনা ছাড়াও করোনার কারণে কর্মহীন হয়ে অসহায় অবস্থার মুখোমুখি হওয়া পরিবারগুলোকে খাদ্য ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী সরবরাহের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয় কর্পোরেশন। তাছাড়া, বিভিন্ন সংগঠন, প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিদেরকে মানবতার ডাকে সাড়া দিতে উদ্বুদ্ধ করেছে চসিক। এভাবে প্রায় বছর খানেক সময় কঠিন লড়াই শেষে পরম করুণাময়ের অপার দয়ায় মরণঘাতী করোনা ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে আসে, আলহামদুলিল্লাহ্। এ সময়টাতে আমাদের জন্য আরো একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে ওঠে মশার সীমাহীন উৎপাত। জলাবদ্ধতা নিরসনে সিডিএ কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন মেগা প্রকল্পের কাজে নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ খাল-নালায় বাঁধ দেয়ার কারণে ময়লা পানি জমে থাকায় মশার লার্ভা সৃষ্টি ও প্রজননের হার শতগুণ বৃদ্ধি পায়। তদুপরি মরার উপর খরার ঘা হয়েছিল মশা নিধনে কর্পোরেশনে আগে থেকে মজুতে রাখা অকার্যকর ওষুধ। এসব ওষুধ মশার প্রজননস্থলে বারে বারে ছিটানোর পরও কোন সুফল আসছিল না। কর্পোরেশন জরুরী ভিত্তিতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সমম্বয়ে কমিটি গঠন করে মশা নিধনের কার্যকর ওষুধের অনুসন্ধানে গবেষনা প্রতিবেদন তৈরি করে। এতে কিছুটা সময়ক্ষেপণ হলেও শেষমেষ কার্যকর ওষুধ প্রয়োগে মশার উৎপাত অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়েছে কর্পোরেশন।

চট্টলপ্রেমী শেখ হাসিনার অবদানে চট্টগ্রামে চলছে উন্নয়নের মহাযজ্ঞ। এখানে সিডিএ, ওয়াসা, বিদ্যুৎ বিভাগ, গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন বিভাগ, টিএন্ডটি বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে চলে আসছে নানামূখী উন্নয়ন কর্মকান্ড। একসাথে এত এত উন্নয়ন কর্মকান্ডের কারণে কিছু কিছু ক্ষেত্রে নগরবাসী দৈনন্দিন কর্মকান্ডে কিছুটা বিড়ম্বনাও তৈরি হয়েছিল। নগরীর মূল সড়কসহ শাখা সড়ক ও অলিগলিগুলোর অধিকাংশই নানা ধরনের খোঁড়াখোঁড়িতে ভাঙ্গা চোড়া, এবড়ো তেবড়ো ও গর্তময় হয়ে পড়েছিল। এতে যানচলে যেমন ব্যাঘাত হচ্ছিল, তেমনি প্রচন্ড ধুলাবালিতে জনস্বাস্থ্যের জন্যও সমস্যা হচ্ছিল। স্বীকার করতেই হয় যে, সমম্বয়ের ঘাটতিই এসব সমস্যা তীব্রতর করে তুলেছিল। সড়কের যখনি যেখানে এতটুকু ভাঙ্গা ও গর্তের সূত্রপাত হয়েছে, সিটি কর্পোরেশন আধুনিক স্বয়ংক্রিয় মেশিন সম্বলিত গাড়ী দিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে তা মেরামতের ব্যবস্থা নিয়েছে এবং বিভিন্ন উন্নয়ন ও সেবা সংস্থার কাজের সাথে সমম্বয় করে পরিকল্পনা সাজিয়ে উন্নয়ন কর্মকান্ডের বিড়ম্বনাকে অনেকাংশেই কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে। শহরে এখন খুব বেশী ভাঙ্গা চোড়া সড়ক ও গলিপথ নেই।

আইনানুসারে মূলত: নগরীর স্বাস্থ্য ব্যবস্থার দায়-দায়িত্ব সিটি কর্পোরেশনের। তাই, এ সম্পর্কিত কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করার থাকলে সেটিও গ্রহণ করা সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্ব। এর মধ্যে আরো যেসব বিষয় রয়েছে, তা হল- অস্বাস্থ্যকর ইমারতের ব্যবস্থাপনায় পদক্ষেপ গ্রহণ, আবর্জনা অপসারণ; সংগ্রহ ও ব্যবস্থাপনা, পুরুষ ও নারীদের জন্য আলাদা ও পর্যাপ্ত টয়লেট স্থাপন ও ব্যবস্থাপনা। কর্পোরেশনের সীমানার মধ্যে যে সব জন্ম, মৃত্যু ও বিয়ে সংঘটিত হয় সেগুলো বিধান অনুসরণ করে রেজিস্ট্রি এবং এর পরিসংখ্যান ও উপাত্ত সংগ্রহ করা। নগরীতে সংক্রামক ব্যাধি প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা, এর জন্য প্রয়োজনে হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা ও রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা করা। স্বাস্থ্য কেন্দ্র ও মাতৃসদন প্রতিষ্ঠা, নারী-শিশু-কিশোরদের জন্য কল্যাণকেন্দ্র স্থাপন ও পরিচালনা, ধাত্রী প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা, স্বাস্থ্যমূলক শিক্ষাসহ জনস্বাস্থ্যের উন্নতির বিধান কল্পে প্রয়োজনীয় যে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা, কর্পোরেশন নগরবাসীর চিকিৎসার সুবিধার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক হাসপাতাল ও ডিসপেনসারি প্রতিষ্ঠা ও রক্ষণাবেক্ষণ করা, প্রাথমিক চিকিৎসা কেন্দ্র স্থাপন ও পরিচালনা, ভ্রাম্যমাণ চিকিৎসা সাহায্য ইউনিট স্থাপন ও পরিচালনা, চিকিৎসা বিদ্যার উন্নয়ন, স্কুল ছাত্র-ছাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা সিটি কর্পোরেশনের কাজের আওতাধীন।

পানি সরবরাহ ও পানি নিষ্কাশন প্রণালী: এর আওতায় পানি সরবরাহ ও নিষ্কাশনের ব্যবস্থা ছাড়াও স্নান ও ধৌত করার স্থান, সরকারি জলাধার ইত্যাদি কর্পোরেশনের আওতাধীন। কর্পোরেশন নগরের অধিবাসী এবং নগরীতে আগন্তুকদের আরাম ও সুবিধার জন্য প্রয়োজনীয় রাস্তা এবং অন্যান্য যোগাযোগরে ব্যবস্থা ও রক্ষণাবেক্ষণ করা সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্ব। এসব কাজ বিবেচনায় চসিক কি ব্যবস্থা নিতে পেরেছে, এ দুই বছরে বা এ ক্ষেত্রে কর্পোরেশনের অর্জনগুলো কি অর্থাৎ আমার দায়িত্ব গ্রহণের পর গৃহীত, বাস্তবায়নাধীন ও পরিকল্পিত প্রকল্পসমূহ ও কার্যক্রম এর সংক্ষিপ্ত বিবরণ এখানে তুলে ধরলাম।

চসিকের আওতায় বিভিন্ন সড়কসমূহের উন্নয়ন ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প (দুই হাজার ৪৯০ কোটি টাকা): শতভাগ জিওবি অর্থায়ন। অনুমোদনের তারিখ: ০৪.০১.২০২২। ইতোমধ্যে ৪৩০ কোটি টাকার টেন্ডার আহবান করা হয়েছে ও ১৩০ কোটি টাকা পরিমাণ ভৌত কাজ শুরু হয়েছে; বহদ্দারহাট বারইপাড়া হতে কর্ণফুলি নদী পর্যন্ত খাল খনন প্রকল্প (চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে গৃহীত তিনটি প্রকল্পের একটি): প্রকল্প মূল্য এক হাজার ৩৬২ কোটি টাকা (শতভাগ জিওবি অর্থায়ন) সংশোধিত প্রকল্পের অনুমোদন: প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি ৩৫ শতাংশ, ফাইনান্সিয়াল অগ্রগতি ৬৭ শতাংশ; চসিকের বিভিন্ন ওয়ার্ডের সড়ক নেটওয়ার্ক উন্নয়ন এবং বাস-ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প: প্রকল্প মূল্য এক হাজার ২৬৮ কোটি টাকা (২৬০ কোটি টাকায় ৮.৫০ একর ভূমি অধিগ্রহণ) ভৌত অগ্রগতি ৭১ শতাংশ, আর্থিক অগ্রগতি ৮১ শতাংশ; কর্পোরেশন এলাকার সড়ক বাতি ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়ন: প্রকল্প মূল্য ২৬০ কোটি টাকা। জিওবি ৪৬ কোটি, ভারত সরকারের লোন (এলওসি) ২১৪ কোটি টাকা, ২০১৯-২০২৩ বর্তমান অবস্থা: টেন্ডার প্রক্রিয়া প্রায় শেষ পর্যায়ে; চসিকের আওতাধীন পরিচ্ছন্ন কর্মী নিবাস নির্মাণ প্রকল্প: প্রকল্প মূল্য ২৩১ কোটি ৪৩ লাখ টাকা, জিওবি ৮০ শতাংশ, নিজস্ব অর্থায়ন ২০ শতাংশ। ভৌত অগ্রগতি ২১ শতাংশ, আর্থিক অগ্রগতি ১৪ শতাংশ, প্রকল্প মেয়াদ ২০১৮-২০২৪; লোকাল গভর্ণমেন্ট কোভিড-১৯ রেসপন্স এন্ড রিকভারি প্রজেক্ট: অর্থায়নে: ওয়ার্ল্ড ব্যাংক, বাস্তবায়ন : স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন, প্রকল্প ব্যয়: ২৬৭ কোটি টাকা, মেয়াদ কাল: জানুয়ারি, ২০২৩ হতে ডিসেম্বর, ২০২৫, বর্তমান অবস্থা: প্রাক্কলন প্রক্রিয়াধীন

পাইপলাইনে রয়েছে এমন প্রকল্প ও ডিপিপি প্রস্তুতাধীন প্রকল্পসমূহ: চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের আওতায় আধুনিক নগর ভবন নির্মাণ: প্রকল্প ব্যয় ২০৩ কোটি টাকা, মেয়াদ: জুলাই, ২৩জুন ২০২৬, বর্তমান অবস্থা: পিইসি সভা সম্পন্ন করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মতির জন্য ওই মন্ত্রণালয়ে পেন্ডিং রয়েছে; চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উন্নয়নে আধুনিক যান-যন্ত্রপাতি সংগ্রহ প্রকল্প: পিইসি সভায় অনুমোদিত। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মতির অপেক্ষমাণ, মেয়াদ কাল: জুলাই ২৩-জুন ২০২৫, প্রকল্প ব্যয়: ২৯৮ কোটি টাকা; চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের উম্মুক্ত স্থানসমূহ আধুনিকায়ন, উন্নয়ন ও সবুজায়ন: প্রকল্প মেয়াদ: জুলাই ২০২৩ হতে জুন, ২০২৫, প্রকল্প ব্যয়: এক হাজার ২০০ কোটি টাকা, বর্তমান অবস্থা: ডিপিপি প্রস্তুত সম্পন্ন, শিগগিরই মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে;
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের আওতায় সাতটি রাস্তার সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন: প্রকল্প মেয়াদ: জুলাই ২০২৩ হতে জুন, ২০২৬, আনুমানিক প্রকল্প ব্যয়: এক হাজার ১০০ কোটি টাকা; চসিকের আওতায় কিচেন মার্কেট কাম বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ: প্রকল্প মেয়াদ জুলাই ২০২৩ হতে জুন ২০২৬, প্রকল্প ব্যয় ২৫০ কোটি টাকা, বর্তমান অবস্থা ডিপিপি প্রস্তুত শেষ পর্যায়ে। শিগগিরই মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে; চসিকের আওতায় ওয়ার্ড কার্যালয়সমূহ নির্মাণ ও বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়ন: প্রকল্প মেয়াদ জুলাই ২০২৩ হতে জুন ২০২৬, আনুমানিক ব্যয় ৪৫০ কোটি টাকা, বর্তমান অবস্থা ডিপিপি প্রস্তুত সম্পন্ন শিগগিরই মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে; চসিকের আওতায় আন্ত:জেলা বাস- ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণ: প্রকল্প মেয়াদ জুলাই, ২০২৩ হতে জুন ২০২৬, আনুমানিক ব্যয় ৮০০ কোটি টাকা; চসিকের আওতাধীন ওশান এমিউজমেন্ট পার্ক নির্মাণ: বাস্তবায়নকাল জানুয়ারি ২০২৪ হতে জুন ২০২৭, আনুমানিক ব্যয় দুই হাজার কোটি টাকা, বর্তমান অবস্থা ৩৬ দশমিক ৫৫ একর খাস জমি বন্দোবস্তের জন্য ভূমি মন্ত্রণালয়ে অনুমোদন প্রক্রিয়াধীন। ফিজিবিলিটি ও ডিপিপি প্রস্তুতি চলমান; চসিকের আওতাধীন এলাকায় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রেল ক্রসিংয়ে ওভারপাস নির্মাণ: প্রকল্প ব্যয় ৭০০ কোটি টাকা, মেয়াদ জানুয়ারি ২০২৪ হতে ডিসেম্বর ২০২৬, বর্তমান অবস্থা ডিপিপি প্রস্তুতি চলমান। শিগগির সম্পন্নপূর্বক মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।

দায়িত্ব গ্রহণের পর গৃহীত গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম ও সিদ্ধান্তসমূহ: বর্জ্য ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়নের লক্ষ্যে জাপান সরকারের পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের আওতায় জেএফই ইঞ্জিনিয়ারিং ও ইয়ছিও ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানী লিমিটেডের মাধ্যমে ‘ফেসিবিল্যাটি স্টাডি অন ইনটিগ্রেটেড সলিড ওয়েস্ট ট্রিটমেন্ট ইন চট্টগ্রাম সিটি’ সম্পন্নকরণ। এফএস রিপোর্ট উপস্থাপন ও হস্তান্তর: ১৫.০২.২০২৩ তারিখে অনুষ্ঠিত হয়। এ ফিজিবিলিটি স্টাডির পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে আধুনিক স্যানিটারি ল্যান্ডফিল স্থাপন, বর্জ্য হতে বিদ্যুৎ উৎপাদন, কম্পোস্ট প্লান্ট ও রিসাইক্লিং ফ্যাসিলিটি স্থাপনের জন্য (পিপিপি’র আওতায়) ডিপিপি প্রস্তুতি চলমান; দক্ষিণ কোরিয়া সরকারের পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের আমন্ত্রণে দক্ষিণ কোরিয়ার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম সরেজমিনে পরিদর্শন (১০.০১.২০২৩-১৭.০১.২০২৩)। ওই ভ্রমণ (ওভারসীজ নলেজ শেয়ারিং প্রোগ্রাম) কার্যক্রম পরবর্তী কোরিয়া সরকারের ১৩ দশমিক ছয মিলিয়ন ডলারের গ্রান্ট অনুমোদন পাওয়া যায়; যার মাধ্যমে রিসাইক্লিং ফ্যাসিলিটি, ফুড ওয়েস্ট (কম্পোস্ট) প্ল্যান্ট সাসটেইনেবিলিটি ও ট্রেনিং কার্যক্রম সম্পন্ন করার কথা বলা হয়েছে। বর্ণিত গ্র্যান্ট অনুমোদনের জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগে পত্র প্রেরণ করা হয়েছে। কোরিয়া সরকারের ওডিএ প্রোগ্রামের আওতায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে বিভিন্ন ফ্যাসিলিটি স্থাপন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়নের জন্য প্রকল্প গ্রহণের বিষয়টি আলোচনা করা হচ্ছে; দীর্ঘ দিনের উপেক্ষিত পিসি রোডের টেন্ডার বাতিলপূর্বক পুন: টেন্ডারের মাধ্যমে কাজ সম্পন্নকরণ; গৃহকর ও ট্রেড লাইসেন্সের অটোমেশন কার্যক্রম সম্পন্নকরণ; শহরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে চট্টগ্রাম শহরকে ছয় জোনে বিভক্তকরণ এবং মশা নিধন কার্যক্রমকে জোরদারকরণের লক্ষ্যে নতুনভাবে মশা নিয়ন্ত্রণ শাখা সৃজন ও ম্যালেরিয়া ও মশক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা নিয়োগ; জনসাধারণের চলাচল নির্বিঘ্নকরণে ফুটপাত ও উম্মুক্ত স্থানের অবৈধ স্থাপনা ও ফুটপাত ও রাস্তা দখলকারী হকার উচ্ছেদ কার্যক্রম জোরদারকরণ; জলাবদ্ধতা নিরসনে খাল খনন প্রকল্পের পাশাপাশি খাল-নালার উপর নির্মিত অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে কঠোর নীতি অবলম্বন ও উচ্ছেদ কার্যক্রম জোরদারকরণ; রাস্তার মিডিয়ান, ফুটপাত ও রাস্তার পাশের খালি জায়গা (পকেটল্যান্ড) উন্নয়ন করে সবুজায়ন ও সৌন্দর্যবর্ধন। ইতোমধ্য চার ও ছয় নম্বর ওয়ার্ডে পকেটল্যান্ডের উন্ন্যন করে ছোট শিশুপার্ক নির্মাণ কার্যক্রম চলামান রয়েছে; বিভিন্ন ওয়ার্ডে স্থিত সিটি কর্পোরেশনের খালি জায়গাসমূহের উন্নয়নের মাধ্যমে আয়বর্ধনের কার্যক্রম চলমান; অস্থায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারীদেও বেতন বৃদ্ধিকরণ ও চাকুরি স্থায়ীকরণের লক্ষ্যে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ। কমিটি গঠন করে রিপোর্ট উপস্থাপন কার্যক্রম ইতোমধ্যে সম্পন্ন এবং অস্থায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের গ্রেডেশন লিস্ট প্রকাশ; মেমন হাসপাতালের আধুনিকায়ন ও স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নে ফলপ্রসু কার্যক্রম গ্রহণ; রেড ক্রিসেন্টের সাথে যৌথ উদ্যোগে ফিজিওথেরাপি সেন্টার ও কৃত্রিম অঙ্গ প্রতিস্থাপন ফ্যাসিলিটি স্থাপন; তুর্কি সরকারের সহায়তায় নাজমেঈ ডেমিরেল হাসপাতালের উন্নয়ন ও আধুনিক চিকিৎসা ও ডায়াগনসিস যন্ত্রপাতি স্থাপন; শিক্ষার মানোন্নয়নে শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধি ও শিক্ষা কার্যক্রম যথাযথভাবে বাস্তাবায়নে মনিটরিং বৃদ্ধিকরণ ও অনলাইনে উপস্থিতি নিশ্চিতকরণ এবং ১১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন; কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রশিক্ষণের উপর গুরুত্বারোপ এবং চুয়েটের সহযোগিতার ১১জন প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা ও প্রকৌশলী নিয়োগ। পাশাপাশি যোগ্য কর্মকর্তাগণের যথাসময়ে পদোন্নতি নিশ্চিতে অতীতের যে কোন সময়ের তুলনায় পদোন্নতি বোর্ডের মাধ্যমে পদোন্নতি প্রদানের কার্যক্রম গ্রহণ; যত্রতত্র পোস্টার ও ব্যানার সাটানো প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ স্থানসমূহে পোস্টারবোর্ড স্থাপনের জন্য দরপত্র আহবান; কর্মকর্তা -কর্মচারীদের মধ্যে শৃঙ্খলা আনয়ন ও হাজিরা নিশ্চিতে ডিজিটাল এক্সেস ডিভাইসের মাধ্যমে হাজিরা নিশ্চিতকরণ।

২০২১-২২ অর্থ বছরে নগরীর ৯৩ শতাংশ বর্জ্য সুষ্ঠভাবে সংগ্রহ ও অপসারন করতে পেরেছি আমরা। সড়ক নির্মাণ-উন্নয়ন করেছি ৩৩ দশমিক ৩২কিলোমিটার, সংস্কার-মেরামত করেছি ১১৬ দশমিক ৬৬কিলোমিটার সড়ক। ৩২ কিলোমিটার সড়কবাতি স্থাপন এবং ৪৪৫ কিলোমিটার সড়কবাতি সংস্কার-মেরামত করেছি। ২৭ দশমিক ২৩ কিলোমিটার ড্রেন নির্মান-উন্নয়ন ৬৭ দশমিক ৬২কিলোমিটার ড্রেন সংস্কার-মেরামত ১৭ দশমিক দশ কিলোমিটার ফুটপাথ নির্মাণ-উন্নয়ন করেছি। ৪৩ দশমিক ৬২ কিলোমিটার ফুটপাথ সংস্কার-মেরামত, ২১টি নতুন ব্রীজ ও কালভার্ট নির্মান ৩১ হাজার ৩০০টি বৃক্ষ রোপণ, ২০ দশমিক দুই কিলোমিটার সড়কের সৌন্দর্যবর্ধন ও সবুজায়ন করতে আমরা সক্ষম হয়েছি এবং ২০২২-২৩ অর্থ বছরে এসব অর্জনকে ছাড়িয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। বিগত অর্থ বছরে ৫৬ হাজার ২৮৫ জন রোগীকে চিকিৎসা সেবা প্রদান, দুই লাখ ৬৩ হাজার ১১ জন রোগীকে সাধারণ স্বাস্থ্য সেবা প্রদান, টিকাদান কর্মসূচির আওতায় পাঁচ লাখ ৮৩ হাজার ২৪৬ জন মা ও শিশুকে টিকাদান, ৬১ লাখ ৬১ হাজার ১৯২ জনকে করোনা ভাইরাসের টিকা প্রদান (তার মধ্যে ২৮ লাখ ৬৯ হাজার ৩২১ জনকে প্রথম ডোজ, ২৬ লাখ ২৭ হাজার ৩৮৮ জনকে দ্বিতীয় ডোজ, ৬৭ হাজার ৮৭৬ জনকে তৃতীয় ডোজ এবং পাঁচ লাখ ৯৭ হাজার ৩৯৬ জন শিক্ষার্থীকে ফাইজারের টিকা দেয়া হয়েছে।) ২৩ হাজার ৫৫৬ জনের করোনা টেস্ট করা সিটি কর্পোরেশনের মাধ্যমে সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। নগরের প্রায় ৬৫ হাজার শিক্ষার্থীকে সিটি কর্পোরেশনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের মাধ্যমে পাঠদান, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর শিক্ষা নিশ্চিতে প্রতিবছর দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে পাঠদান, প্রায় ১৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ‘শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব’ স্থাপন, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন ও অমর একুশে উপলক্ষ্যে ‘অমর একুশে বইমেলা ২০২২’ আয়োজন, অমর একুশে বইমেলায় বিশিষ্ট নয়জন ব্যক্তিকে একুশে স্মারক সম্মাননা পদক ও বিশিষ্ট চারজন ব্যক্তিকে সাহিত্য পুরষ্কার প্রদান, ১৭৪ জন বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সপরিবার সংবর্ধনা প্রদান, স্বাধীনতা দিবস ২০২২ উদযাপন উপলক্ষ্যে বিশিষ্ট সাতজন ব্যক্তিকে মহান স্বাধীনতা পদক প্রদান, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ আয়োজন, ৪১টি ওয়ার্ডে সব ধরনের সনদপত্র অনলাইনে বিতরণ করা হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রীর কাছে অশেষ কৃতজ্ঞতা। ২০২২ সালের ৪জানুয়ারি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় চট্টগ্রাম নগরীর সড়ক সংস্কার ও উন্নয়নে আড়াই হাজার কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছেন তিনি। প্রকল্পটির অধীনে চট্টগ্রাম নগরীর ৭৬৯ কিলোমিটার রাস্তা উন্নয়ন, বিমানবন্দর সড়কে ৬০০ মিটার ওভারপাস নির্মাণ, ৩৮টি ফুটওভার ব্রিজ, ১৪টি ব্রিজ, ২২টি কালভার্ট এবং দশটি গোল চত্বর নির্মাণ করার কথা হয়েছে। এ প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। এ অর্থ বছরে এ প্রকল্পের অন্তত ৫০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন করতে সক্ষম হব বলে আমরা আশাবাদী এবং পরবর্তী অর্থ বছরে এ প্রকল্পের সম্পূর্ণ কাজ সুসম্পন্ন হলে চট্টগ্রাম মহানগর হয়ে ওঠবে আরো স্বাচ্ছন্দ্যময়, সুন্দর। নগরবাসী অনুভব করতে শুরু করবে চট্টগ্রাম একটি স্মার্ট সিটি।

আমরা জানি, অনেকগুলো স্পর্শকাতর ক্ষেত্রে সমস্যা রয়ে গেছে। এগুলো সমাধানে যুক্তিযুক্ত উপায়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। কোন প্রকার বিভ্রান্তি নয়, সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসলে সমস্যা থেকে উত্তরণ অসম্ভব নয়। তাই, সিটি কর্পোরেশনের আগামী দিনের সব কর্মকান্ডে নগরবাসীর সর্বাত্মক সহযোগিতা ও পরামর্শ প্রত্যাশা করে। নাগরিক সেবা কার্যক্রমকে আরো মসৃণ, উন্নত মানসম্পন্ন করতে নিয়মিত কর পরিশোধ ও যুক্তিযুক্ত মতামত দিয়ে স্বপ্নের চট্টগ্রাম মহানগর গড়তে সব নাগরিকের প্রতি বিনীত আহবান জানিয়ে সুন্দর আগামীর প্রত্যাশায় সকলের জন্য রইল শুভ কামনা। সকলের কল্যাণ হোক, সকলেই সুস্থ থাকুন, সুন্দর থাকুন, নিরাপদে থাকুন। সকলকে ধন্যবাদ। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু, জয়তু শেখ হাসিনা, বাংলাদেশ চিরজীবি হোক।

লেখক: বীর মুক্তিযোদ্ধা, মেয়র- চট্টগ্রাম সিটি কারেশন, জ্যেষ্ট যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক- চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ।