সোমবার, ০৬ মে ২০২৪

শিরোনাম

ক্রিকেট/এশিয়া কাপের ১৬তম আসর শুরু বুধবার

মঙ্গলবার, আগস্ট ২৯, ২০২৩

প্রিন্ট করুন

ঢাকা: আগামী ওয়ানডে বিশ্বকাপকে সামনে রেখে নিজেদের প্রস্তুতিতে দৃস্টি রেখে বুধবার (৩০ আগস্ট) থেকে মহাদেশীয় টুর্নামেন্ট এশিয়া কাপের ১৬তম আসর শুরু করতে যাচ্ছে অংশগ্রহণকারী দলগুলো। টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী ম্যাচে পাকিস্তানের মুলতানে নেপালের মুখোমুখি হবে পাকিস্তান। এই প্রথম বারের মত এশিয়া কাপে আয়োজক দুটি দেশ। টুর্নামেন্টের চারটি ম্যাচ পাকিস্তানে ও নয়টি অনুষ্ঠিত হবে শ্রীলংকায়।

মূলত এবারের এশিয়া কাপের আয়োজক ছিল পাকিস্তান। কিন্তু, পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বাধ্য হয়ে যৌথভাবে ইভেন্টটি আয়োজনে করছে দুই দেশ।

এশিয়া কাপে সবচেয়ে সফল দল ভারত। এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ সাত বার শিরোপা জিতেছে টিম ইন্ডিয়া। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ছয় বার শিরোপার স্বাদ নেয় শ্রীলংকা। মাত্র দুই বার ট্রফি ঘরে তুলে পাকিস্তান। বেশ কিছু দিন ধরে ওয়ানডে ফরম্যাটে সেরা দল হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাওয়া বাংলাদেশ তিন বার ফাইনালে উঠলেও শিরোপা জিততে পারেনি টাইগাররা।

১৯৮৪ সালে শুরু হওয়া টুর্নামেন্টের সব আসরেই অংশ নেয়া একমাত্র দল শ্রীলংকা। এশিয়া কাপে এক বার করে অংশ নেয়নি ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ দল।

এ বছরের শেষ দিকে ভারতের মাটিতে অনুষ্ঠেয় ওয়ানডে বিশ্বকাপ মাথায় রেখে এবারের এশিয়া কাপ ৫০ ওভারে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ২০১৬ সাল থেকে বিশ্বকাপের ফরম্যাট হিসেবে এশিয়া কাপ আয়োজনের সিদ্বান্ত নেয় আয়োজকরা। এ জন্য ২০১৬ ও ২০২২ সালে টি-২০ বিশ্বকাপের বছরে এশিয়া কাপ সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটে অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

বিশ্বকাপের জন্য দলগুলোকে সেরা প্রস্তুতির মঞ্চ তৈরি করে দিতেই এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
২০১৮ সালে সর্বশেষ ওয়ানডে ফরম্যাটে হওয়া এশিয়া কাপের ফাইনালে উঠেছিল বাংলাদেশ। ফাইনালে লিটন দাসের অসাধারণ সেঞ্চুরি সত্বেও শক্তিশালী ভারতের বিপক্ষে হার এড়াতে পারেনি টাইগাররা।

সর্বশেষ ২০২২ সালে টি-২০ ফরম্যাটে অনুষ্ঠিত আসরের চ্যাম্পিয়ন শ্রীলংকা। তাই টি-২০ ফরম্যাটের এশিয়া কাপে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন শ্রীলংকা ও ওয়ানডে ফরম্যাটে এশিয়া কাপে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ভারত।

এশিয়া কাপে প্রথম বারের মত অংশ নিচ্ছে নেপাল। একমাত্র নেপাল ছাড়া বাকি পাঁচ দলই আগামী বিশ্বকাপে খেলবে। এ জন্য নিজেদের প্রস্তুত করতে ভুলত্রুটি শুধরে নিতে এবারের টুর্নামেন্টটি সব দলের জন্যই অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

শিরোপা জয়ের প্রশ্নে ফেবারিট হিসেবে কাগজে কলমে সবচেয়ে শক্তিশালী দল ভারত। অবশ্য দেরিতে হলেও বাংলাদেশ প্রমাণ করেছে, অন্তত ওয়ানডে ফরম্যাটে যে কোন দলের বিপক্ষে যে কোন কন্ডিশনে জিততে পারে।

বিশ্বকাপ নিশ্চতে শ্রীলংকাকে বাছাইপর্ব খেলতে হয়েছে। তবে, দলটির এশিয়া কাপের রেকর্ড অসাধারণ। এছাড়া, এবারের টুর্নামেন্টে তারা নিজ মাঠে খেলবে। যে কারণে দলটির মোকাবেলা করা যে কোন দলের জন্যই কঠিন হবে। যদিও ইনজুরি ও করেনা ভাইরাসের সংক্রমণের কারণে মূল খেলোয়াড়দের অনেকেই লংকান দলের হয়ে এবার খেলতে পারছেন না।

এ দিকে, আবার ঐতিহাসিকভাবে এশিয়া কাপে পাকিস্তানকে খুব একটা সফল দল বলা যাবে না। আবার ‘আনপ্রেডিক্টেবল’ হিসেবে পরিচিতি থাকায় তাদেরকে আলোচনার বাইরেও রাখা যাবে না। তাছাড়া, বাবর আজমের অসাধারণ নেতৃত্ব গুণের কারণে বিশ্ব ক্রিকেটে বেশ উজ্জীবিত হয়ে ধারাবাহিক পারফর্মেন্স করে যাচ্ছে পাকিস্তান।

ওয়ানডে ফর্মেটের ক্রিকেটে আফগানিস্তানের ধারবাহিকতায় ঘাটতি আছে। তবে, নিজেদের দিনে বিশ্বের যে কোন দলকে হারানোর যোগ্যতা রয়েছে তাদের। আফগানদের ব্যাটিংয়ে গভীরতার ঘাটতি রয়েছে। তবে, রশিদ খানের নেতৃত্বে বিশ্বমানের স্পিনারদের নিয়ে ওই ঘাটতি পূরণ করার দক্ষতা রয়েছে দলটির।

টুর্নামেন্টে অংশ নেয়াদের মধ্যে নেপাল এমন একটি দল, যারা যে কোন দলকে হারাতে পারলেই সন্তুস্ট। তবে, এটি নিশ্চিত নেপালের বিপক্ষে ম্যাচকে নিজেদের প্রস্তুতি ম্যাচের অংশ হিসেবেই নিবে উপমহাদেশের দুই ক্রিকেট পরাশক্তি ভারত ও পাকিস্তান।

তবে, ২০১৮ সাল থেকে ওয়ানডে ম্যাচের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণকারী ছয় দলের মধ্যে সবচেয়ে সফল হচ্ছে ভারত ও বাংলাদেশ। বিগত পাঁচ বছরের পরিসংখ্যানে ভারতের জয়ের হার ৬১ দশমিক ৯০ শতাংশ। এই সময়ে মোট ৮৪টি ম্যাচে অংশ নিয়ে ভারত জয় পেয়েছে ৫২টি ম্যাচে। অপর দিকে, বাংলাদেশের জয়ের হার ৫৯ দশমিক শুন নয় শতাংশ। ৬৬টি ম্যাচ খেলে ৩৯টিতে জয় পেয়েছে টাইগাররা। ৫৭টি ম্যাচে অংশ নিয়ে ৩০ ম্যাচে জয় পাওয়া পাকিস্তানের জয়ের হার ৫২ দশমিক ৬৩ শতাংশ। ৭১ ম্যাচে অংশ নিয়ে শ্রীলংকা জয় পেয়েছে ৩১টি ম্যাচে, জয়ের হার ৪৩ দশমিক ৬৬ শতাংশ। আফগানিস্তানের জয়ের হার ৪০ দশমিক ৯০ শতাংশ। তারা ৪৪টি ম্যাচ খেলে জিতেছে ১৮টিতে।

আসন্ন টুর্নামেন্টে কোন একটি দলকে ফেভারিট বলতে রাজি নন পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক ও কিংবদন্তী ফাস্ট বোলার ওয়াসিম আকরাম। তিনি বলেছেন, ‘সবগুলো দলের জন্যই এই টুর্নামেন্টটি বেশ কঠিন হবে।’ সেইসাথে তিনি এটিও বলেছেন, ‘আসরে হালকাভাবে নেয়া যাবে না বাংলাদেশ ও শ্রীলংকাকেও। কারণ, ট্রফি জয়ের মত ক্ষমতা দুই দলেরই রয়েছে।’

এক অনুষ্ঠানে আকরাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘গেল বার আমাদের ধারণা ছিল, টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলবে ভারত ও পাকিস্তান। তবে, শেষ পর্যন্ত শিরোপা জয় করল শ্রীলংকা। তিনটি দলই বিপজ্জনক। যে কোন দলই শিরোপা জয় করতে পারে।’

পাকিস্তানী কিংবদন্তী বলেন, ‘টুর্নামেন্টের অন্য দলগুলোও বেশ প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলছে। গেল আসরে শ্রীলংকা ফাইনাল খেলেছে, আর ভারত ফাইনাল খেলতে ব্যর্থ হয়েছে। আমরা জানি ভারত বনাম পাকিস্তান ম্যাচ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, দুই দলের ম্যাচ ঘিরে ব্যাপক উত্তেজনা থাকে, থাকে বিপুল সংখ্যক মানুষের দৃস্টি ও বিরাট একটা ভক্তকুল এটিকে অনুসরণ করে। তবে, অন্য দলগুলোও এখানে আসে খেলার জন্য। সুতরাং, আপনি শ্রীলংকা বা বাংলাদেশকে অবহেলা করতে পারেন না।’

গ্রুপ- ‘এ’
পাকিস্তান দল: বাবর আজম (অধিনায়ক), শাদাব খান, মোহাম্মদ রিজওয়ান, সৌদ শাকিল, ফখর জামান, আবদুল্লাহ শফিক, ইমাম-উল-হাক, সাউদ শাকিল, সালমান আলি আঘা, ইফতিখার আহমেদ, মোহাম্মদ নওয়াজ, উসামা মীর, হারিস রউফ, নাসিম শাহ, শাহিন শাহ আফ্রিদি, মোহাম্মদ হারিস, ফাহিম আশরাফ, মোহাম্মদ ওয়াসিম।
রিজার্ভ: তায়েব তাহির।

ভারত দল: রোহিত শর্মা (অধিনায়ক), শুভমান গিল, বিরাট কোহলি, শ্রেয়াস আইয়ার, লোকেশ রাহুল, সূর্যকুমার যাদব, তিলক ভার্মা, ইশান কিশান, হার্দিক পান্ডিয়া, রবীন্দ্র জাদেজা, অক্ষর প্যাটেল, শারদুল ঠাকুর, জসপ্রীত বুমরাহ, মোহাম্মদ সামি, মোহাম্মদ সিরাজ, কুলদীপ যাদব ও প্রসিধ কৃষ্ণ।
রিজার্ভ: সঞ্জু স্যামসন।

নেপাল দল: রোহিত পাউডেল (অধিনায়ক), আসিফ শেখ, কুশল ভুর্টেল, ললিত রাজবানশি, ভিম শারকি, কুশাল মাল্লা, দিপেন্দ্র সিং আইরি, সন্দীপ লামিচান, কারান কেসি, গুলশান ঝা, সোমপাল কামি, আরিফ শেখ, প্রতিশ জিসি, কিশোর মাহাতো, সুন্দীপ জোরা, অর্জুন সৌদ ও শ্যাম ধাকাল।

গ্রুপ- ‘বি’
বাংলাদেশ দল: সাকিব আল হাসান (অধিনায়ক), লিটন দাস, নাজমুল হোসেন শান্ত, তাওহিদ হৃদয়, মুশফিকুর রহিম, আফিফ হোসেন, মেহেদি হাসান মিরাজ, তাসকিন আহমেদ, মুস্তাফিজুর রহমান, হাসান মাহমুদ, শরিফুল ইসলাম, নাসুম আহমেদ, শেখ মাহেদি, নাইম শেখ, শামিম হোসেন, তানজিম হাসান সাকিব ও তানজিদ হাসান তামিম।

আফগানিস্তান দল: হাশমতউল্লাহ শাহিদি (অধিনায়ক), মোহাম্মদ নবী, রশিদ খান, মুজিব উর রহমান, ইব্রাহিম জাদরান, রহমানউল্লাহ গুরবাজ, রিয়াজ হাসান, রহমত শাহ, ফজলহক ফারুকি, গুলবাদিন নাইব, নাজিবুল্লাহ জাদরান, করিম জানাত, নুর আহমেদ, আব্দুল রহমান, শরফউদ্দিন আশরাফ, সেলিম সাফি ও ইকরাম আলিখিল।

শ্রীলংকা দল: দাসুন শানাকা (অধিনায়ক), পাথুম নিশাঙ্কা, দিমুথ করুণারত্নে, কুসল পেরেরা, কুসল মেন্ডিস, চারিথ আসালঙ্কা, সাদিরা সামারাবিক্রমা, ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা, দুশান হেমন্ত, দুনিথ ওয়েলালাগে, মহেশ থিকশানা, প্রমোদ মাদুশান, কাসুন রাজিথা, দিলশান মধুশঙ্কা, মাথিশা পাথিরানা।