রবিবার, ০৫ মে ২০২৪

শিরোনাম

সায়মন রাশেদের ধারাবাহিক উপন্যাস: লাল নীল হলুদ ।। পর্ব এক

মঙ্গলবার, ডিসেম্বর ১৯, ২০২৩

প্রিন্ট করুন
সায়মন রাশেদ

আজ রাতের আকাশের জ্যোৎস্নাটা অনেক ভাল লাগছে রাজুর। খুব কমই এমন সুন্দর জ্যোৎস্না রাত দেখা যায়। চাঁদটা যেন আজকে আরো রূপালী উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। আকাশে একটি দুটি তারাও দেখা যায়। তারাগুলো অনেকটা জরির মত ঝিকিমিকি করছে। তবে চাঁদের জ্যোৎস্না তারার উজ্জ্বলতাকেও ছাড়িয়ে গেছে আজ।

মেঘহীন আকাশটার দিকে তাকিয়ে থাকে রাজু। এ জ্যোৎস্না যেন শুধু তারই জন্য। খোলা মাঠে বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে এসব ভাবে রাজু। কার কাছ থেকে যেন সে শুনেছিল এক বার, জ্যোৎস্না দেখা উপভোগ করতে হয় খোলা মাঠে গিয়ে। কথাটা সত্য। আসলেই এ দৃশ্যের কোন তুলনা দেয়া চলে না। মাঠের একেবারে মাঝখানে আসন গেড়ে বসে, দুই হাত পিছনে সোজাসুজি মাটির উপর ভর দিয়ে বসে আছে রাজু। আর মাথা উঁচু করে জ্যোৎস্না দেখছে। চারদিকে সব চুপচাপ। শুধু মাঝে মাঝে দূরে কোথাও ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক শোনা যায়। বাতাস বইছে। কখনো আস্তে, কখনো জোরে। বাতাসে রাজুর চুল উড়ছে। তার মুখে এক টুকরো হাসি। তার দেহও যেন রূপার ন্যায় উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে জ্যোৎস্নার আলোতে। তার দুই চোখে চাঁদের প্রতিবিম্ব দুটি আলাদা চাঁদ হয়ে ফুটে উঠেছে।

‘চাঁদটা অনেক সুন্দর, তাই না?’
চমকে উঠল রাজু। পাশ ফিরে দেখল তার ডান পাশে বসে আছে একজন লোক। লোকটার গায়ের রং সম্ভবত কালো ও তেলতেলে চামড়া। চামড়ায় চাঁদের আলো পড়ায় তেলতেলে ভাবটা বুঝা যায়। সেও তার মতই জ্যোৎস্নার দিকে তাকিয়ে আছে। একটু পরেই লোকটা রাজুর দিকে ফিরে চোখে চোখ রাখল। রাজুর লোকটাকে চেনা পরিচিত মনে হচ্ছে। কিন্তু, কিছুতেই সে চিনতে পারছে না। কোথায় যেন সে দেখেছে তাকে।
‘ঠিক না?’
লোকটা বলে উঠল।
রাজুর হঠাৎ করেই হুশ ফিরল। সে খানিকটা ইতস্তত করে বলল, ‘হ্যাঁ, হ্যাঁ, ঠিক বলেছেন। আজকের জ্যোৎস্নার কোন তুলনাই হয় না।’
কিছুক্ষণ চুপ করে থাকার পর রাজু বলল, ‘আপনি কে?’
লোকটা কিছু না বলে হাসল। মানুষ কোন কিছু শুনে মজা পেলে যেভাবে হাসে, ঠিক সেভাবে।
‘আপনি এখানে, কখন এলেন?’
এবার সে বলল, ‘তুমি যখন এখানে এসেছিলে, তখন।’

এবারো রাজুর অদ্ভুত লাগল।
লোকটা তাকে তুমি করে বলছে। তাহলে কি সে তাকে চেনে?
রাজু বলল, ‘আমি যখন এসেছিলাম, তখন আমি একা ছিলাম। কই আপনাকে তো দেখলাম না।’
‘আমি তোমার সাথেই ছিলাম, তুমি আমাকে দেখনি।’
অবাক হয় রাজু।
‘আপনি এলেন কিভাবে এখানে?’
‘তুমি যেভাবে এসেছ, সেভাবেই। হেঁটে, হেঁটে।’ লোকটা বলল।
‘আপনি এখানে কেন এসেছেন?’

লোকটা আকাশের দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষণ চুপ করে থাকার পর বলল, ‘জ্যোৎস্না দেখতে।’
‘আপনার জ্যোৎস্না ভাল লাগে?’
‘হ্যাঁ, খুব ভাল লাগে।’
‘আমারও অনেক ভাল লাগে।’
‘আপনি কি জ্যোৎস্না দেখতে প্রায়ই আসেন?’
না, মাঝে মাঝে আসি।’
‘আমি তো বেশির ভাগ জ্যোৎস্না রাতেই এখানে আসি। তখন তো আপনাকে দেখি না।’ বললাম।
‘না, মাঝে মাঝে আসি। খুব কমই বলতে গেলে আসা হয়। আগে আমার মেয়েটাকে নিয়ে আসতাম। এখন একা আসি।’
‘আপনার মেয়েও কি জ্যোৎস্না দেখত নাকি?’
‘হ্যাঁ, আমার মেয়েটা জ্যোৎস্না দেখতে খুবই পছন্দ করত।’
‘আপনার মেয়ে কিসে পড়ে?’
‘ক্লাস থ্রিতে।’
‘ও এখন আপনার সাথে আসে না?’
‘আসবে কেমনে, ও তো চলে গেছে।’
‘সরি, আমি বুঝলাম না।’
‘ও আর বেঁচে নেই।’
কিছুক্ষণ সব চুপচাপ।
রাজু বলে উঠল, ‘আমি দুঃখিত। সরি। রিয়েলি সরি। আমি আপনার কথা বুঝতে পারি নি।’

চলবে….

সিএন/আলী